ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির বন্ধনে ইফতার

একটি ক্যাম্পাস বা শিক্ষাঙ্গন একজন শিক্ষার্থীর জন্য জীবন গঠনের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। শুধু জীবন গঠনের জন্য নয় বরং একটি ক‍্যাম্পাস প্রত‍্যেক শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা। ক‍্যাম্পাসজুড়ে থাকে কতশত স্মৃতি আর ভালোবাসা। পড়াশোনা, আড্ডা, গানবাজনা, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা–হাসি–দুষ্টুমি আর খুনসুটি। আহা! কতশত স্মৃতিবিজড়িত মুহূর্ত কাটে ক‍্যাম্পাসজুড়ে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কারণ, প্রত‍্যেক শিক্ষার্থীর জীবনজুড়ে আনন্দের সিংহভাগ থাকে ক‍্যাম্পাস–জীবনে। এই ক্যাম্পাস জীবনের আনন্দ আরও বেশি হয়, যখন ১৮ একরের (ঢাকা কলেজ) ক্যাম্পাসের সবুজ বিস্তৃত কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কোনায় কোনায় জড়ো হয়ে বন্ধুরা মিলে ইফতারের আয়োজন করে থাকে।

বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র রমজান। প্রতিবছর রমজানের এ সময় কাটে পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু এবারের রমজানের সময় ভিন্নভাবে কাটাতে হচ্ছে। একদিকে রমজানের সময়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরীক্ষা চলছে, অন্যদিকে ১৮ একরের (ঢাকা কলেজ) ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার মুহূর্ত ভাগাভাগি করে নিতে আনন্দে মেতে ওঠেছে। বলা যায় কষ্টের মধ্যেও একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পাওয়ার প্রচেষ্টা। কারণ, আমাদের সব সুখে-দুখে পরিবারকে যেমন পাশে পাই, তেমনই বন্ধু-বান্ধবদের ছোঁয়া পাই।

তেমনি মাহে রমজানের নবম দিনে ঢাকা কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের (একাডেমি-৪৬ ব্যাচ) হুটহাট ইফতার আয়োজন করা ছিল একটি প্রাণবন্ত মুহূর্ত। শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ নয়; ঢাকা কলেজের অন্যান্য বিভাগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এমন আয়োজন করে থাকে। বলতে গেলে, এমন আয়োজনে আমাদের শত বিষণ্নতা বিলীন হয়ে যায়, ফিরে আসে আনন্দের কোলাহল। গড়ে উঠে একতার মেলবন্ধন। যেই বন্ধনে নেই কোনো ভেদাভেদ, আছে শুধু সম্প্রীতির বন্ধন। এই কথাটি বলার অর্থ হলো, আমাদের এই আয়োজনে অন্য ধর্মের বন্ধুরাও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। একসঙ্গে বসে ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

সবুজ বিস্তৃত মাঠে ইফতারের আগমুহূর্তে বন্ধুদের মধ্যে কেউ ব্যস্ত গল্পে বা আড্ডায়। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত ইফতারের নানা আয়োজনে। তখন নিজের কাছে সত্যি মনে হচ্ছে সারা দিনের ক্লান্তি আর নেই। মনে হয় যেন আমাদের মনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শুনে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার ধুম পড়ে যায়। ইফতার শুরুর পর ক্ষণিকের মধ্যে অন্তর শীতল হয়ে যায়, আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। সময় তার আপন গতিতে চলে যায়, রেখে যায় আমাদের কাটানো স্মৃতিবিজড়িত সময়গুলো। যে স্মৃতি আমাদেরকে অতীত স্মরণ করিয়ে দেয়।

এমন সময় বারবার ফিরে আসুক আর গড়ে উঠুক আমাদের একতার মেলবন্ধন।
ইফতারে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত বলেন, ‘মাহে রমজান ঘিরে প্রতিবছর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একরকমের উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে থাকে। সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা থেকেই আমার বন্ধুরা মিলে কলেজ মাঠে ইফতারের আয়োজন করে। এই আয়োজনে মুসলিম শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত হওয়ায় পরিবেশটা আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে। যা আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে এবং সত্যি আমার জীবনের প্রথম এমন আনন্দ মুহূর্ত উপভোগ করলাম। আর এভাবেই আমাদের দেশে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।’

লেখক: মু. সায়েম আহমাদ, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা