টাকার জাদুঘর: মুদ্রার ইতিহাস যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে

প্রতিটি স্বাধীন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয় একটি মুদ্রা জাদুঘর। সে দেশের মুদ্রা জাদুঘরে প্রদর্শিত মুদ্রা দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। এ কারণেই সারা পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে মুদ্রা জাদুঘর। বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের উদ্যোগে ঢাকার মিরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর। উদ্বোধন করেছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশের একাধিক সিনিয়র মুদ্রা সংগ্রাহক টাকা জাদুঘরে মুদ্রা উপহার দিয়ে টাকা জাদুঘর তৈরি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই জাদুঘরে টাকা ও ধাতব মুদ্রা তৈরির সব উপকরণসহ বিশ্বের প্রায় সব স্বাধীন দেশ, বিলুপ্ত দেশ, বিলুপ্ত কলোনি এবং সারা পৃথিবীর শাসকেরা যেসব ক্ষুদ্র অঞ্চল শাসন করেছিলেন, সেসব অঞ্চলের মুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘরের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস হওয়ার আগপর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করতে আসতেন। তাঁদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট উপহার দেওয়া হতো, যেন তাঁদের মধ্যে মুদ্রা সংগ্রহের আগ্রহটা তৈরি হয়। ফলে একাধিক নতুন মুদ্রা সংগ্রাহক তৈরি হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ম্যাপ সিরিজের ব্যাংক নোটগুলো যেমন টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের সব গভর্নর ও অর্থসচিব স্বাক্ষরিত এক টাকা থেকে এক হাজার টাকার নোট প্রদর্শিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নমুনা নোট, স্মারক নোট, স্মারক ধাতব মুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। আতিউর রহমান প্রথম গভর্নর, যাঁর সময়ে বাংলাদেশের এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি মুদ্রিত হয়েছে। আতিউর রহমান ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেছেন। ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাসের অধ্যায়কে বাংলাদেশের ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রায় তুলে ধরা হয়েছে। স্বস্তির বিষয় এটা যে বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রা জাদুঘরে বাংলাদেশের ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী জানতে পারছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট টাকা জাদুঘরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

গবেষক, শিক্ষার্থী সবার কাছে আজ টাকা জাদুঘর একটি পছন্দের জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। এই টাকা জাদুঘর নির্মাণের সময় দেশসেরা স্থপতি প্রয়াত রবিউল হুসাইন, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন ও শিল্পী হাশেম খানের অসামান্য অবদান রয়েছে। যাঁদের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর আলোর মুখ দেখেছে, তাঁরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক দাস গুপ্ত অসীম কুমার, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির ও বর্তমান মহাব্যবস্থাপক পরিমল চক্রবর্তী।

আমরা যাঁরা মুদ্রা সংগ্রহ করি, তাঁরা টাকা জাদুঘরের জন্মলগ্ন থেকে এখনো পাশে আছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দর্শনার্থীদের জন্য টাকা জাদুঘরের প৶দর্শনী বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক ব্যাংক নোট, নমুনা নোট ও স্মারক ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করতে চান, তাঁরা টাকা জাদুঘরে গিয়ে কিনতে পারবেন। শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা রাখা হয়। টাকা জাদুঘরের ঠিকানা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি, ২য় তলা, মিরপুর-২, ঢাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিগগিরই টাকা জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় মুদ্রা প্রদর্শনী শুরু হবে। সেখানে থাকবে চিলড্রেন কর্নার, সেমিনার কক্ষসহ এমন সব আয়োজন যা একটি আন্তর্জাতিক মানের মুদ্রা জাদুঘরে থাকে। টাকা জাদুঘরে প্রবেশ করতে কোনো প্রবেশ ফি দিতে হয় না।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব, ঢাকা