জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, অপরাধ কি এটাই
প্রথম যেদিন অনার্স প্রথম বর্ষে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম, শিক্ষকেরা আনন্দের সঙ্গেই বলেছিলেন, আমরাই প্রথম (২০১৫-১৬ ব্যাচ), যারা চার বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করতে পারব। কিন্তু সেই ২০১৯, ২০২০ সাল গেল, এখন ২০২১ সাল, আমরা এখনো অনার্সই শেষ করতে পারলাম না। নাহ, আমি এখানে কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কারণ, আমরা পরিস্থিতির শিকার। শিক্ষাব্যবস্থাই আজ থমকে গেছে।
কিন্তু কষ্ট তো হয় তখনই, যখন দেখি মাত্র দুটি প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার জন্য আমরা এখনো আটকে গেছি! অথচ লাখো ছাত্রছাত্রী নিয়ে এদিকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল, হয়ে গেল বিসিএসসহ আরও অন্যান্য পরীক্ষা! তাহলে কেন আমাদের সঙ্গে এমন অবিচার?
অবশ্যই নিজের জীবন রক্ষা করা থেকে পরীক্ষা দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি জুনিয়ররা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে, তবে আমরা কেন নই? এটা তো সত্যি, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে।
কেউ নেই আমাদের নিয়ে ভাবার! কত গরীব পরিবারের সন্তানেরা যে একটা চাকরির জন্য চাতক পাখির মতো হাহাকার করছে, তা–ও কেউ দেখার নেই। চাকরি সে কী করে পাবে? তার যে এখনো অনার্সটাই শেষ হলো না। আমাদের ঝুলিয়ে রেখে কত কত চাকরির সার্কুলার দিয়ে দিল। এ চাকরিগুলোতে তো আমাদেরও আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু কী হয়ে গেল? কতশত সুযোগ যে আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল, আমরা শুধু তাকিয়েই রইলাম, হাত বাড়িয়ে আর ধরতে পারলাম না।
কেউ জিজ্ঞাসা করলেও ঠিকঠাক এখন আর বলতে পারি না কিসে পড়ছি! আমার আব্বু, যিনি সব সময় আমাকে নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর আমিও মনেপ্রাণে চেষ্টা করি নিজেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। শুধু আমরাই নই,আমাদের সঙ্গে আমাদের অভিভাবকেরাও নির্ঘুম রাত্রি যাপন করছেন, কবে আমরা কোভিড-১৯ থেকে রেহাই পাব, আর কবেই–বা তাদের আদরের সন্তানেরা নিজেদের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবে।
কতজনের স্বপ্ন ছিল, অনার্স শেষ করে একটি চাকরি নিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন! আহা! কী অমানুষিক যন্ত্রণা নিয়ে আজ তারা ভেতরে ভেতরে পুড়ছে!
জানি না, কবে আমরা মুক্তি পাব এই যন্ত্রণা থেকে।
সর্বোপরি বরাবরের মতোই মহান আল্লাহর কাছে চাই, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে করোনা পরিস্থিতি ও সব ধরনের পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন।
*লেখক: রোমানা সুলতানা লিমা, শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম