জন্ম যাদের মৃত্যু দিয়ে
কমবেশি আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার নারী গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৫৮ হাজার শিশু মারা যায়, তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার শিশু মারা যায় বয়স এক মাস পেরোনোর আগেই। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হারকে একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অগ্রসরমাণতার সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আমরা কজন জানি যে আমাদের দেশে প্রতিবছর মায়ের গর্ভে ৭ মাস (২৮ সপ্তাহ) জীবিত থাকার পরও ৮৩ হাজারের বেশি শিশু জন্মায় মৃত অবস্থায়? মৃত শিশুর জন্মের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২৬ লাখ মৃত শিশুর জন্ম হয়, যার ৯৮ শতাংশই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এবং ৭৫ শতাংশই সাবসাহারা আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে।
সাত মাস ধরে মায়ের গর্ভে এ শিশুদের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়েছিল, হৃৎস্পন্দন শুরু হয়েছিল, গর্ভধারিণী মা এদের নড়াচড়া নিয়মিত টের পেয়েছিলেন, তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন, নিভৃত আদরে হয়তো গুনগুনিয়ে গানও শুনিয়েছিলেন; কিন্তু এই যাত্রার শেষ রক্ষা হয়নি, জন্মেছে মৃত অবস্থায়। মৃত সন্তান প্রসবের অসহনীয় কষ্ট ছাপিয়ে অসহায় মা পড়ে যান পারিবারিক-সামাজিক নিষ্ঠুর বিড়ম্বনায়, যেন এক নিষিদ্ধ অপরাধ করেছেন তিনি। একটি পরিবারে যখন কোনো মৃত শিশুর জন্ম হয়, তখন মা এবং সারা পরিবারটিতেই দুঃসহ মানসিক চাপ তৈরি হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪২ লাখ মা মৃত শিশুর জন্মপরবর্তী বিষাদ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
মৃত জন্ম নেওয়া এ শিশুদের অর্ধেকের বেশি (বাংলাদেশে মোট মৃত শিশু জন্মের প্রায় ৬৪ শতাংশ) মৃত্যু হয়ে থাকে একেবারে শেষ সময়ে এসে, অর্থাৎ প্রসবপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর (প্রসবব্যথা ওঠা, পানি ভাঙা)। বাকি অর্ধেক মারা যায় ২৮ সপ্তাহ থেকে প্রসবপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত সময়টুকুতে।
এ মৃত্যুগুলো কি আমরা এড়াতে পারতাম? দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি হচ্ছে যে অনেকাংশেই পারতাম। গর্ভাবস্থায় মা যদি সংক্রমণে আক্রান্ত হন, কিংবা তাঁর যদি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ-জাতীয় অসুস্থতা থাকে, মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, তাঁর যদি ঝুঁকিপূর্ণ জীবনাচরণ থাকে, কিংবা প্রসবপ্রক্রিয়ার সময় যদি কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে। অনেকের মধ্যেই এ ভুল ধারণা আছে যে মৃত শিশুর জন্ম মূলত অপ্রতিরোধযোগ্য জন্মগত ত্রুটির কারণে ঘটে। গবেষণা বলছে, ২৮ সপ্তাহ-পরবর্তী কেবল ৭ শতাংশ মৃত শিশুর জন্ম জন্মগত ত্রুটির কারণে ঘটতে পারে। অর্থাৎ, মৃত শিশুর জন্মের কারণগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য ও এড়ানো সম্ভব।
একই সঙ্গে সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যের কথা হচ্ছে, এ মৃত্যুগুলো প্রতিরোধ করতে আমাদের নতুন কোনো কর্মসূচি চালু করতে হবে না, নতুন একটি হাসপাতালও করতে হবে না, নতুন কোনো চিকিৎসক-নার্স-প্যারামেডিক নিয়োগ দিতে হবে না, নতুন কোনো যন্ত্রপাতি কিনতে হবে না, দামি কোনো বিদেশি ওষুধেরও দরকার নেই। আমাদের বিদ্যমান মাতৃসেবা কর্মসূচির গর্ভ ও প্রসবকালীন সেবা যদি সঠিকভাবে কাজ করত, তাহলেই এই ৮৩ হাজার শিশুর অধিকাংশই পৃথিবীর বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারত অনায়াসে।
গত কয়েক দশকে দেশে ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু আমরা সচরাচর যে পরিসংখ্যান ব্যবহার করি, তার মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক, যা না বুঝলে এবং সঠিক ব্যবস্থা না নিলে বড় সংখ্যার ধন্দে পড়ে থাকব আমরা। যেমন যেকোনো সেবাদানকারীর কাছ থেকে গর্ভকালীন সেবা নিয়েছেন প্রায় ৯১ শতাংশ মা, অথচ মানসম্পন্ন সেবাদানকারীর কাছ থেকে সেবা নিয়েছেন মাত্র ৭৪ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে পূর্ণ, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় চারবার সেবা নিয়েছেন মাত্র ৩৭ শতাংশ। এক-পঞ্চমাংশ মা বাড়িতে চেকআপ করান, বোঝাই যাচ্ছে তার মান কী হতে পারে। সবচেয়ে শঙ্কার কথা হচ্ছে, পূর্ণ মানে ও মাত্রায় সেবা নিয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশ গর্ভবতী।
যে গর্ভবতীর জটিলতা দেখা দেবে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে, তিনি যদি প্রথম দিকে একবার সেবা নেন, কিংবা একাধিকবার চেকআপ করালেও যদি নিম্নমানের চেকআপ হয় বা সেই চেকআপের সময় তাঁকে যদি প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করানো না হয় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে তিনি পরিসংখ্যানে হয়তো থাকবেন, কিন্তু তাঁর সমস্যার সত্যিকারের সমাধান হবে না। আমাদের মৃত শিশু জন্মের উচ্চ হার এই নির্মম শুভংকরের ফাঁকগুলোর কারণেই ঘটছে। অর্থাৎ, ৯১ আর ১৫ শতাংশের মাঝখানে যে ৮৬ শতাংশ মা আছেন, তাঁরা বাস্তবায়ন অদক্ষতার বলি, তাঁরা নিজের পকেট থেকে পয়সা খরচ করে সেবা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ন্ত্রণ’ নামের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার অসহায় শিকার। মৃত শিশুর জন্ম হয়েছে, এমন মায়েদের মধ্যে করা এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক মা উচ্চ প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছ থেকে গর্ভকালীন সেবা নিয়েছিলেন। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মা মনে করতে পেরেছেন যে গর্ভ বা প্রসব সময়ে তাঁদের কোনো না কোনো জটিলতা দেখা দিয়েছিল। জানার পরও, চিকিৎসাব্যবস্থার সংস্পর্শে আসার পরও তাহলে মৃত শিশুর জন্ম হলো কীভাবে? এই জবাব দেওয়ার দায়িত্বটা কার? ফাঁকটা কোথায়? বাংলাদেশে মৃত শিশুর জন্মের প্রায় ৪০ শতাংশের কারণ হচ্ছে মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভকালীন রক্তপাত ও সংক্রমণ। প্রতিটি জটিলতা নিরসন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কর্মসূচি থাকার কথা এবং তা আছে। কিন্তু তার অস্তিত্ব, কাগজে এবং বড়জোর প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল বা ক্লাসরুম পর্যন্ত। আমাদের মাতৃসেবা কর্মসূচির কর্মযজ্ঞ মাতৃগর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছায় না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানের প্রশ্নে, মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতকরণের প্রশ্নে বিরাট ঘাটতি আছে। ব্যবস্থা নেওয়া তো পরের কথা, আমরা যে সুনির্দিষ্ট করে বলতেই পারছি না, মানের সমস্যাটি ঠিক কোন জায়গায়, এটিই হচ্ছে ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক গলদ।
যাঁরা সমাজের উঁচু তলার মানুষ, কিংবা যাঁরা সচেতন, অধিকার আদায় করে নিতে পারেন, সেই গুটিকয় মানুষ হয়তো পারছেন পয়সা খরচ করে ভালো চিকিৎসকের কাছে গর্ভকালীন সেবা নিতে, কিন্তু বাদবাকি সাধারণ মানুষ হয় সেবার আওতায় আসছেন না, অথবা সরকারি ও বেসরকারি সেবাকেন্দ্র বা ক্লিনিক থেকে নিম্ন বা অসম্পূর্ণ মানের সেবা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বা ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্রে যে গর্ভকালীন সেবা দেওয়া হয়, তার মান নিয়ন্ত্রণ বা সত্যিকার অর্থে কার্যকর জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ আমাদের গ্রামীণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এ কেন্দ্রগুলোর হওয়ার কথা ছিল ভরসার জায়গা।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখের প্রসব হয়। এখানেও মানের প্রশ্নে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। প্রায় ৫৩ শতাংশ প্রসব হচ্ছে বাড়িতে, যার প্রায় সবই অদক্ষ দাইয়ের হাতে। দক্ষ, মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতে প্রসব না হলে প্রসবকালীন মৃত শিশুর জন্ম ঠেকানো সম্ভব নয়। সিআইপিআরবির এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫৪ শতাংশ মৃত শিশুর জন্ম বাড়িতে প্রসবের ক্ষেত্রে হয়। আর যে ৪৭ শতাংশ প্রসব হচ্ছে সেবাকেন্দ্রে, তার সিংহভাগই হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে। যেখানে নেই কোনো জবাবদিহি, নেই কোনো মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ব্যবসা সেখানে মুখ্য, সেবা নয়। সাধারণ গর্ভবতী স্বাভাবিক প্রসব করতে বেসরকারি ক্লিনিকে গেলে হয়ে যান ‘সিজারের রোগী’।
প্রায় এক দশক আগে, জাতিসংঘে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল মিডওয়াইফ তৈরি ও প্রশিক্ষণের, যা এখনো চলছে। অনেক বছর তো পেরিয়ে গেল, কিন্তু আমরা কি বলতে পারব, ঠিক কত শতাংশ প্রসব মিডওয়াইফরা করছেন? কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কি দেশের সব প্রসব মিডওয়াইফ দিয়ে করানোর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর রোডম্যাপ বা একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা দেখাতে পারবে?
আমাদের মতো দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য, সেখানে মৃত শিশুর জন্মের হিসাব পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ হিসাব না রাখলে, মৃত শিশুর জন্ম প্রতিরোধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ২০১১ সালে চারটি জেলায় মাতৃমৃত্যু, মৃত শিশুর জন্ম ও নবজাতকের মৃত্যু বিশ্লেষণ করার নিমিত্তে একটি সফল পাইলট প্রকল্প (এমপিডিআর) নেওয়া হয়েছিল। সেই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা আর জাতীয় বাস্তবায়নের দিকে যায়নি। তার ওপর মৃত শিশুর জন্ম আমাদের মতো সমাজে দুর্ভাগ্য কিংবা অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। এ শিশুদের নাম রাখা হয় না, অনেক পরিবার মৃত শিশুর জন্মের কথা গোপন রাখে, সঠিক তথ্য দিতে চায় না। সামাজিক চাপ এবং কুসংস্কারের লুকোছাপায় হারিয়ে যায় সত্যিকারের মৃত শিশুর জন্মের সংখ্যা। ধারণা করা হয়, পরিসংখ্যান বা জরিপের মাধ্যমে আমরা যে সংখ্যাগুলো দেখি বা জানি, তা বাস্তবের চাইতে অনেকখানিই কম।
মৃত শিশুর জন্মের হারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০০ কোর স্বাস্থ্য সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, আমাদের দেশে এ নিয়ে নেই কোনো উচ্চবাচ্য, নেই কারও জবাবদিহির বালাই। যে জাতীয় জনমিতিক ও স্বাস্থ্য জরিপের ওপর আমাদের প্রবল আস্থা, সেখানেও মৃত শিশুর জন্মের হার না দেখিয়ে দেখানো হয়, পেরিনেটাল মৃত্যুহার, যা মৃত শিশুর জন্ম এবং প্রথম সপ্তাহের নবজাতক মৃত্যুহারের সমন্বয়। অথচ ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত শিশুর জন্ম ও নবজাতকের মৃত্যু দুটিকে আলাদা করেই দেখতে, বুঝতে ও মোকাবিলা করতে হবে। এ দুই ধরনের মৃত্যুর কারণ ভিন্ন, তাদের প্রতিরোধের কর্মসূচি ও কৌশলও ভিন্ন। এ যেন নিজেরাই নিজেদের ফাঁকি দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি আমরা। যারা জীবিতই ছিল না, তারা আবার মরবে কী করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তো কেবল জীবিতদের সুস্থ রাখা, তা-ই না?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০-এর মধ্যে প্রতিটি দেশে এ হার ১২ অথবা তার নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যে নির্ধারিত হয়েছে ২০১৪ সালে। আমাদের মৃত শিশুর জন্মের হার এখন প্রতি হাজারে ২৫ দশমিক ৪। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় অসম্ভব কাজটি সময়ে সম্পন্ন করার জন্য কার্যকর কোনো কর্মকৌশল এবং রোডম্যাপ আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আছে কি? বছর সাত-আট আগে জাতীয় পর্যায়ে, এভরি নিউবর্ন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়েছিল, যাতে মৃত শিশুর জন্মকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কত দূর? ছাড়া ছাড়া কিছু নবজাতকের সেবা প্রশিক্ষণ এবং নবজাতকের মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু স্ক্যান তৈরি হয়েছে জানি, কিন্তু মৃত শিশুর জন্ম? এখানেও তারা হারিয়ে গেছে আমাদের অবহেলায়, মনোযোগের অভাবে। জীবন কি সস্তা এ দেশে!
প্রায় ধর্মেই গর্ভপাতকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের দেশেও ৮ সপ্তাহ বয়সের পর মেডিকেল কারণ বা জীবনসংশয়ের পরিস্থিতি ছাড়া গর্ভপাত নিষিদ্ধ। অনেক সমাজে, এমনকি অনেক দেশের রাজনীতিতেও গর্ভপাত নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা ও মতামত আছে। নৈতিক দ্বৈরথের মূল বিষয়টি হচ্ছে, ভ্রূণের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর তা নষ্ট করা উচিত, নাকি উচিত নয়। গর্ভপাত নিয়ে এ আলোচনার একটা প্রায়োগিক দিক হচ্ছে, ভ্রূণের কত বয়সে ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভপাত করলে তা প্রাণ নিয়ে নেওয়ার সমতুল্য হবে, অর্থাৎ নৈতিক মাপকাঠিটা ভ্রূণের কোন বয়সে ঠিক করা উচিত, নাকি উচিত নয়। গর্ভপাতের উদাহরণটি টানলাম এ জন্য যে প্রাণরক্ষার একই নৈতিক ভিত্তিতে মৃত শিশুর জন্ম প্রতিরোধের সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া একটি অবশ্যকরণীয়। কারণ, সাত মাস বা তার বেশি বয়সের গর্ভস্থ শিশু, প্রায় পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ। সেই শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার উপায় যদি আমাদের জানা থাকে (বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জানা আছে ও আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সাধ্যের মধ্যে আছে), তাহলে তা না করতে পারাটা সামাজিক-রাজনৈতিক যেকোনো নৈতিক মানদণ্ডেই বড় মাত্রার ব্যত্যয় ও স্খলন।
(প্রতিবছর অক্টোবরের ১৫ তারিখকে বিভিন্ন দেশে অকালে হারিয়ে যাওয়া গর্ভজাত শিশুদের স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।)
লেখক: জনস্বাস্থ্যকর্মী।