চাকরির পরীক্ষার ভোগান্তি কি শেষ হবে না?

চাকরি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ–তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। যাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে অনার্স/ মাস্টার্স শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিপ্রত্যাশী। কিছুদিন আগে করোনায় আক্রান্তের সংখা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাকরির পরীক্ষা স্থগিত ছিল। বর্তমানে আবার শুরু হয়েছে। বিসিএস বাদে প্রায় সব পরীক্ষায় রাজধানী শহর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষ করে ঢাকামুখী হন। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে দুই কোটি। এ শহরের জনসংখ্যার সমস্যা অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যেখানে সমস্যা সমাধানে নগর পরিকল্পনাবিদেরা বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলছেন, সেখানে চাকরির জন্যই প্রতিবছর বহু মানুষকে আমরা ঢাকামুখী করছি।

গ্রাম থেকে ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে আসতে একজন মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। ধরুন, একজনের বাড়ি ঝিনাইদহে। মাসে দুইটি করে পরীক্ষা থাকলে যাতায়াত, থাকা–খাওয়া বাবদ প্রতিবার ১৫০০ থেক ২০০০ টাকা খরচ হয়। সঙ্গে ঢাকায় আসা–যাওয়ার কষ্ট, সময় ব্যয় ও ভোগান্তি তো আছেই। নারী চাকরীপ্রত্যাশীদের পক্ষে এটা আরও বেশি ভোগান্তির। কারণ, পরিবার তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে। অনেক চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ টিউশনির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের খরচ মেটান। অনেকেই থাকেন বেকার। করোনায় অনেকেই টিউশনি হারিয়েছেন। এখন এমন একজন ব্যক্তির পক্ষে প্রতি মাসে এত টাকা খরচ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কি সম্ভব? এখন তো লকডাউনের ফলে গাড়িভাড়া আবার প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।

মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় কিংবা বৃহত্তর জেলা শহরে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যশোর শহরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে যশোরসহ ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলের মানুষ সহজেই বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে। ঢাকায় যাওয়ার মতো ভোগান্তি পোহাতে হবে না, সেই সঙ্গে অর্থ ও সময় ব্যয় কমে যাবে।
চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রায় সবাই বেকার। ফলে আবেদন ফি দেওয়া তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আবেদন ফি না নিয়ে বৃহত্তর জেলা শহরে চাকরির পরীক্ষা আয়োজন করে চাকরিপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়