চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে কবে
উন্নত সমাজ গঠনের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। তবে শিক্ষালাভের পর বেকারত্বের বোঝা বহন করা খুবই কঠিন। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন সবাই দেখেন, কিন্তু কতজন স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন? অনেক সময় স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা নানা বাধার কারণে থেমে যায়।
সংজ্ঞা অনুসারে, একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুঁজে পায় না, তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে বেকারত্ব বলে। ইআইইউ, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, বেকারত্বের দিক দিয়ে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। প্রতি ১০০ গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে ৪৭ জন বেকার। বেকার ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, কলেজ স্নাতক ৬৬ শতাংশ পুরুষ ও ৭৭ শতাংশ নারী বেকার। বেকারত্ব একটি অভিশাপের মতো। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেকারত্বের বোঝা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আত্মহত্যা করছেন। একজন চাকরিপ্রার্থী বুঝতে পারেন বাস্তবতা কতটা কঠিন!
একজন বেকার ব্যক্তিকে চাকরির সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। চাকরিপ্রার্থী তাঁর জেলা শহর ছেড়ে, বিভাগীয় শহর ছেড়ে চলে যান কেবল একটি চাকরির পরীক্ষার জন্য। কখনো প্রতি সপ্তাহে চাকরির পরীক্ষা থাকে, কখনো এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ অথবা কখনো দু–এক মাস পর। যখন একজন বেকার ব্যক্তি নিজের হাতখরচের টাকাই জোগাড় করতে পারেন না, সেখানে প্রতি সপ্তাহ বা মাসে ঢাকায় যাতায়াতের খরচ বহন করা তাঁর কাছে যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
যখন একজন চাকরিপ্রার্থীকে জেলা শহর এবং তাঁর বিভাগীয় শহর অতিক্রম করতে হয়, তখন তাঁকে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। তখন তিনি মানসিকভাবেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ভ্রমণের সমস্যা ও নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই লক্ষণীয়।
এ ছাড়া নারী প্রার্থীর পক্ষে অনেক দূরে গিয়ে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনেক বেশি কঠিন। প্রায়ই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও আশপাশের পরিস্থিতি নারী প্রার্থীর জন্য বাধা সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা দূরবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে বেকারদের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে।
চাকরিপ্রার্থীদের কষ্ট দূর করতে হলে বিভাগীয় পর্যায়ে চাকরির পরীক্ষা নেওয়া উচিত। এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয় যে দূরবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো অনেকের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা হলে চাকরিপ্রার্থীদের কষ্ট অনেকটাই দূর হবে, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।
*লেখক: মোছা. জেলি খাতুন, শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ