চাকরির আবেদন ফি কেন আকাশচুম্বী

ফাইল ছবি

একাডেমিক পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবছর কয়েক লাখ তরুণ–তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেন। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়ার আগপর্যন্ত তাঁদের পারিবারিক ও আর্থিক চাপে থাকতে হয়। চাকরিপ্রত্যাশীরা সাধারণত বেকার থাকেন। ফলে চাকরির আবেদন ফি তাঁদের অতিরিক্ত আর্থিক সমস্যায় ফেলে।

স্নাতকোত্তর শেষ করে হল ছাড়ার পর তাঁদের ব্যয় আগের থেকে বেড়ে যায়। এর ওপর প্রতি মাসে বিভিন্ন চাকরির আকাশচুম্বী আবেদন ফি জমা দিতে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রথম শ্রেণির একটি চাকরির আবেদন ফি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা হয়ে থাকে। আবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। প্রতি মাসে যদি পাঁচটি আবেদন করতে হয়, তবে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে। আবার প্রতিটি চাকরির পরীক্ষা ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়, ফলে যাঁরা রাজধানীর বাইরে থেকে পরীক্ষা দিতে আসেন, তাঁদের অতিরিক্ত খরচের সঙ্গে নিরাপত্ত ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যায়।

ফাইল ছবি

উন্নত দেশে বেকার ভাতা দেওয়া হয়। সরকার আমাদের দেশে বেকার ভাতা দিতে না পারলেও অন্তত চাকরির আবেদন ফি মওকুফ করা উচিত।
এটা সত্য, একটি চাকরি পরীক্ষা পরিচালনা করতে বিভিন্ন খাতে খরচ করতে হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এ খরচ কেন চাকরিপ্রত্যাশী বেকার তরুণ–তরুণীর কাছ থেকে নেওয়া হবে? সরকার বলছে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে, তবে কেন বেকারদের ওপর এত চাপ থাকবে? উন্নয়ন মানেই কি শুধু অবকাঠামোর উন্নয়ন? বেকারত্বের সমস্যা একটি পরিবারকে কী ধরনের সমস্যায় ফেলছে, তা–ও অনুধাবন করতে হবে। সরকারপ্রধান তরুণদের স্বকর্মসংস্থানের কথা বলছেন। চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলছেন, যার মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান হবে এবং অন্যদের চাকরি দেওয়া যাবে। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের নতুন নতুন পদক্ষেপের সঙ্গে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের সুবিধা–অসুবিধার বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। প্রথমত, কোনো ধরনের আবেদন ফি নেওয়া যাবে না। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেন ফাঁস না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর জেলা শহরে চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা এবং সম্ভব হলে বেকার ভাতা চালু করে সরকার চাকরিপ্রত্যাশীদের পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করতে পারে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন তেমন চাকরির পরীক্ষা হচ্ছে না। করোনার বয়স ইতিমধ্যে দুই বছর হতে চলল, তাই বয়স বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখে বেকারদের সব ভালো কিছুর সঙ্গে সরকার থাকবে, এমনটা প্রত্যাশা করি আমরা।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

**নাগরিক সংবাদে লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]