চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ হোক

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের। এই দাবিতে নানা আন্দোলন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। করোনার সময় এ দাবি আরও জোরালো হয়। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সমাধানের কথা বলা হলেও তা এখনো ঝুলে আছে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ সাধারণ বয়সসীমা ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক আর বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা ৩২ বছর। সরকারি ছাড়া বহু আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও একই বয়সসীমা অনুসরণ করা হয়। আর চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে তা ৬০ বছর। বিচারকদের ক্ষেত্রে ৬২ বছরের নির্দেশ আছে আদালতের।

সাধারণভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর যে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। চার লাখ বেকার থাকেন। আর এসব বেকারের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর করা হয় ২৭ বছর। তার আগে ছিল ২৫ বছর। ১৯৯১ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। দুই বছর আগে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ থেকে ৩৫ এবং অবসরের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করার। কিন্তু সেটা নিয়ে এখন আর কোনো কথা হচ্ছে না। করোনার সময় দুই দফায় কিছুটা বয়সের ছাড় দেয়া হলেও তা সাময়িক। এর আগে ২০১২ সালে জাতীয় সংসদের তখনকার স্পিকার (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি) আব্দুল হামিদ নিজেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার কথা বলেছিলেন। (সূত্র: ডয়চে ভেলে)
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর যুক্তিসংগত অনেক কারণ রয়েছে। অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও বাড়ানো উচিত। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ালে বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। ফলে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে হতাশ হয়ে পড়বেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকলে নানা ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। বিপথগামী হতে পারেন অনেকে।

চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ ও অবসর ৬০ বছর করা হলে একটা ভারসাম্য আসতে পারে। এমনিতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কারণে সেশনজটে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার ইতি টানতে বয়স চলে যায়। পরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ থাকে না অনেকের। করোনার কারণে এটি আরও তীব্র হয়েছে। অনেকের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সময় চলে গেছে। এসব কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা এই মুহূর্তে অতীব জরুরি। পাশাপাশি সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন সঠিক সময়ে প্রদান এবং যখনই নিয়োগ পরীক্ষা হোক, আবেদনের সময় দেওয়া বয়স গণনা করা ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে বেকার সমস্যা কমানো যায়।

সবকিছু বিবেচনায় রেখে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জোর দাবি জানাই।

লেখক: শিক্ষক