কুবির শুভ্র কাশফুলের ক্যাম্পাসে কবে যাব
ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই ষড়্ঋতুই বাংলাদেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়। বর্তমানে প্রকৃতিতে চলছে শরতের দাপট। ঋতুর রানি শরৎ যেন প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে নব যৌবন। এ সময়ে আকাশ তার নিজ অস্তিত্বের বর্ণে ফিরে আাসে। বিস্তীর্ণ সুনীল আকাশ, আকাশের নীলের ফাঁকে ফাঁকে বন্যার পানিতে ভাসমান কলাগাছের ভেলার মতোই ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। এ সময়ে মাঠঘাট, পথে-প্রান্তরে, নদীর চরে হঠাৎ শুভ্র কাশফুলের রাজ্যের দেখা মেলে। গভীর রাতে ফোটা শিউলিফুলের ছড়িয়ে দেওয়া পাগল করা সুবাস ও বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড়ে শাপলা ফুলের জোয়ার সবকিছু মিলিয়ে শরৎ যেন প্রকৃতিকে ভূস্বর্গে রূপ দিয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারও লাল পাহাড়ের ক্যাম্পাসখ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন শরৎকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেদিতে দাঁড়িয়ে দুই চোখ যেদিকে যায়, সেদিকেই বিস্তীর্ণ কাশবন। মনে হয়, বাতাসে শিল্পীর দেশাত্মবোধক গানে গা নাড়িয়ে তাল দিচ্ছে ওগুলো, কী অপরূপ সেই মুহূর্ত! এই রূপের মোহে মুগ্ধ হয়ে কঠিন হৃদয়ের লোকের মনেও প্রেমের হাওয়া বইতে শুরু করবে। শরতের আগমনে পুলকিত হয়ে কবি গুরু লিখেছিলেন, ‘আজিকে তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শরৎ প্রভাতে/হে মাত বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ/ঝরিছে অনল শোভাতে।’
প্রতিবছর এই সময় আসলেই কুবি ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ক্লাসের ফাঁকে সুযোগ পেলেই শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন কাশবনে। নানান ঢঙে, নানান পোজে ছবি তুলতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাশবনের পাশে বসে দলীয় গানে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত করে তোলা হয়ে ওঠে সে সময়ের নিত্যকার অভ্যাস। বিকেলের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও যুগলেরা কাশফুল বিলাস করতে এসে হারিয়ে যায় রূপকথার রাজ্যে। চাঁদনি রাতে মনে হয়; আকাশ থেকে সাদা পরিরা বুঝি কাশবনে নেমে এল। ক্যাম্পাসের কাশফুলের শোভা ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় আশপাশের স্কুল-কলেজগুলোতেও।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিক্ষার্থীরা চলে আসেন কাশবনের রূপ–লাবণ্যে মুগ্ধ হতে।
তবে বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সবকিছু ভেস্তে গেছে। এই নাজেহাল পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে। নেই কোলাহল, নেই উদ্যাপনের সুর। রূপের ঝলকে পূর্ণ হয়েও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন নিষ্প্রাণ। কী এক অপূর্ণতায় শোকের আবহে স্তিমিত। বাবুই চত্বর থেকে লালন চত্বর, কাঁঠালতলা থেকে সানসেট ভ্যালি, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠজুড়ে শুধু হাহাকার আর হাহাকার। এ সবকিছু বলে দেয়, যাঁদের জন্য এই আয়োজন, তাঁরাই অনুপস্থিত। তবে এই বিপদের সময়েও সবকিছু উপেক্ষা করে প্রকৃতিপ্রেমী কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে ঘুরতে আসছে। তাঁদের ক্যামেরায়, মুঠোফোনে তোলা ছবি দেখে দেখেই বাকিদের এবারের ভার্চ্যুয়াল শরৎ–বিলাস উদ্যাপন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই ক্যাম্পাসে ফেরার আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন প্রত্যেক শিক্ষার্থী।
করোনার মহামারি কেটে যাক, পৃথিবী আবারও সুস্থ হোক, শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে ফিরুক; সেদিনের অপেক্ষায় সবাই।
*লেখক: নুরুদ্দিন আহমেদ, শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]