করোনায় বন্দী জীবনের আর্তনাদ
ব্যস্ততায় ভরা জীবনে একটুখানি বিশ্রামের সুযোগ চাওয়া এবং পাওয়ায় আজ কোথায় যেন বড্ড গরমিল! ক্লান্তিহীন ঘুমগুলোয় নেই কোনো পরিতৃপ্তি! মুঠোফোনের অ্যালার্মে আজ আর ভাঙছে না ঘুম, বরং ভাঙছে স্বভাবসিদ্ধ নিয়মেই। ম্যানথলের উষ্ণ নিশ্বাসে নতুন আরেকটি দিনের সূচনা।
৭টা ২০ এর অফিস গাড়ি চলে যাক নাহয় আজ! বহুদিন পর আমি বাসায়, বাহারি নাশতা নিয়ে নীরবে বাধ্য ছেলের মতো খেতে বসেছি! স্বাদ-গন্ধহীন জীবনে ফ্লাস্কের কুসুম গরম পানিতে তৃষ্ণা মেটানো সত্যি আজ অনেক বড় দায়! সকালটা যেন ২০ মিলিগ্রাম জিংক সালফেট মনোহাইড্রেটের ছোট্ট হলুদ ট্যাবলেটের পরিসীমায় বন্দী!
অফিসে থেকে থেকে যেখানে দুপুরের গোসলটা বেমালুম ভুলেই বসেছিলাম, সেখানে আজ স্যাভলনের উষ্ণ পানির গোসল নিত্যদিনের সঙ্গী! কাজের বড্ড চাপে শেষ মুহূর্তের লাঞ্চ টাইমে ঠান্ডা খাবার এখন আর খেতে হচ্ছে না! ভাপ তোলা গরম ভাতের সাথে শিং, কই কিংবা রুই মাছের ঝোল মিলছে একের পর এক!
অলস দুপুরে খাবারের পর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যখনই কেবল দারুচিনি দ্বীপে পা ফেলছি, ঠিক তখনই এলাচ-দারুচিনির চায়ে স্বপ্নের পরিসমাপ্তি ঘটছে! আর তার একটু পরই গরম গরম স্যুপের সাথে দিন পেরিয়ে দ্রুত সন্ধ্যা নামছে চারপাশে।
ব্যস্ত থাকার উপকরণগুলো খুবই সীমিত মনে হয় এখন! ফেসবুক, টিভি, ক্রিক–ইনফো, ইউটিউব আর সংবাদপত্রের ভরপুর আয়োজনগুলো আমার সময় কাটাতে আজ পুরোপুরি ব্যর্থ। রাত বাড়ে। কিন্তু হাজার বছরের পুরোনো সেসব রাত আজ বড্ড অলসতায় বাড়তে থাকে! পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অনিশ্চয়তা! তারই সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ওষুধের চোখ রাঙানি তো আছেই!
ব্যস্ত দিনগুলো হয়তো আবার ফিরে আসবে, এই প্রত্যাশায় চোখের পলক কিছুটা নামানোর চেষ্টা! সত্যিকার অর্থে জীবনটা আজ তিনবেলা এসকরবিক অ্যাসিডের লেমন ফ্লেভারে বন্দী হয়ে আছে! তবে মহান আল্লাহ তায়ালা চাইলে আবারও একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হবে ইনশাল্লাহ।
*লেখক: বায়তুল আলিফ জয়, একটি বেসরকারি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত