করোনায় চাকরিতে বয়স বাড়ানোর আবেদন কেন করছি

ছবি: সংগৃহীত

চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির মতো সমগ্র মানবজাতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার পরিস্থিতি প্রতি শতাব্দীতে একবার আসে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বর্তমান বিশ্বে কোনো মানুষই হয়তো নেই, যার ওপর করোনা মহামারি আঘাত হানেনি। প্রিয়জন হারানো, জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হারিয়ে ফেলা, কোনো উপায় না পেয়ে শহরের দীর্ঘদিনের চেনা পরিবেশকে বিদায় বলে গ্রামে চলে যাওয়া, চোখের সামনেই কী না ঘটছে প্রতিদিন! এত এত ব্যক্তিগত করুণ আর্তনাদের মধ্যে অনার্স অধ্যয়নরত বা পাস করা শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে গোষ্ঠীগতভাবে বয়স হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টা হয়তো কারও নজরে পড়ছে না। হ্যাঁ, বয়স হারিয়েই তো গেল। সেই মার্চ ২০২০ থেকে অনার্সের কোনো পরীক্ষা হয়নি, কবে হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। মাধ্যমিকে-উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাসের ব্যবস্থা করা হলেও এখানে তা করা হয়নি। চাকরিতে আবেদনের নাম নেওয়ার আগেই অন্তত দুই বছর জীবন থেকে নাই হয়ে গেল। অনার্স পড়ুয়া বা পাস করা সবার জীবনেই এ অপূরণীয় ক্ষতি চোখের সামনেই হতে চলছে, যা কখনোই হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ থেকে ৩৫ না করলে এ ক্ষতি কোনোভাবেই পোষানো যাবে না, তাতে যত সমন্বয়ই করা হোক না কেন।

আমি বেসরকারি চাকরি করতাম, প্রায় পাঁচ বছর চাকরি করলাম। মালিকপক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা একটা অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যাই। রিস্ক নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিলাম। এক বছরের একটু বেশি ছিল বয়স ৩০ হতে। অন্য বেসরকারি চাকরির চেষ্টা না করে সরকারি চাকরির জন্য পড়া শুরু করলাম, আর্থিক কিছুটা সচ্ছলতা ছিল বলে। ইতিমধ্যে করোনার হানা, করোনার মধ্যেই চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ। যে কয়টা আবেদন করতে পেরেছি, তার বেশির ভাগ পরীক্ষাই এখনো দিতে পারলাম না। এখন আর ব্যাংকে চাকরির সার্কুলারে আবেদন করতে পারছি না, বয়স বিবেচনার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না বলে। অল্পসংখ্যক যে আবেদন করতে পেরেছি, তাতে চাকরি না হলেই স্বপ্ন শেষ। আমার মতো লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্নই দোদুল্যমান। খেলা শুরু না করতেই কিছু গোল হজম করে বসে আছি, শুধু মহামারির কারণে।

ফাইল ছবি

বয়স বাড়ানোর পক্ষে কত যুক্তিই তো দেওয়া যায়, অন্যান্য দেশে আরও বেশি বয়সে নেওয়া হয়, অবসরের বয়স বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, অনেক কিছু আছে। আমি সেদিকে না-ইবা গেলাম। করোনা আমদের জীবন থেকে যে বয়সটা কেড়ে নিল, সেটার জন্য বয়স বাড়ানোর আবেদন কি যুক্তিযুক্ত নয়? জাতির জনকের কন্যা যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে, এমন দূরদর্শী নেতৃত্বের কাছে এ আবেদন কি অযৌক্তিক হতে পারে?

প্রধানমন্ত্রী, আপনিই তো দেশের মানুষকে বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। মধ্যম আয়ের দেশ বানালেন, উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন তো আপনিই দেখালেন। আপনার কাছেই আবেদন, দিনের পর দিন পরিশ্রম করতে থাকা লাখো শিক্ষার্থীর জীবনের স্বপ্নটাকে আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সটা ৩৫ করে দিন। এ দেশের মানুষের জন্য আপনার অবদানের মুকুটে আরও একটি সোনালি পালক যুক্ত হোক।

*মাহাসুক, (ছদ্মনাম) সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।