‘করোনাকালীন গুপ্তযুদ্ধ’

করোনাকালের জীবনগাথা
ছবি: প্রতীকী

করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ। এক বছরের বেশি সময় অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই চালিয়ে যাওয়াটা কিছুটা ইতিহাস। ফোন ছিল না প্রথমে। অন্যের কাছ থেকে ফোন চেয়ে ক্লাস করতাম। এই ব্যাপারটা যে কতটা বিব্রতকর, তা বোঝার ক্ষমতা বোধ হয় আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। তাই সেটা বলে আর শব্দসংখ্যা বাড়াতে চাইছি না।

মাসখানেক এভাবে চালানোর পর ফোন কেনা হয়। কিন্তু এই ফোন কেনাটা ছিল ছোটখাটো একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধের সৈনিক ছিলেন আমার মা ও বড় ভাই। যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েছিলেন। ফলে ফোনটা কেনা হয়েছিল। আর মেগাবাইট কেনাটা প্রতিদিনের যুদ্ধ। চলতি এই যুদ্ধের মধ্যেই নতুন আর একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধটা চলছে চোখের বিরুদ্ধে মনের অথবা মনের বিরুদ্ধে চোখের। চোখ বলছে, ‘আমি আর এই সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। রেহাই দাও আমাকে।’ মন বলছে, ‘আর কটা দিন সঙ্গ দাও। তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি হেরে যাব এই শহরের যান্ত্রিকতার কাছে।’ সুখের কথা হলো, এই যুদ্ধে বেশির ভাগ সময়ই মন জিতছে। চালিয়ে যাচ্ছি পড়াশোনা।

জুমে ক্লাস করার সময় আগে ১৫-১৬ জন থাকত আর এখন ৪-৫ জন থাকে। এই যে যারা নেই, তারা এখন কোথায়?

আমাদের দফার পর দফা ছুটি বাড়ছে। এ নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। কারণ একজন মানুষের মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। আর এখন তো, শতক ছাড়িয়ে গেছে। তবে আমাদের উচ্চ মহল এটা নিয়ে ভাবতেই পারে যে কীভাবে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে ধরে রাখা যায় এবং কীভাবে অনলাইনের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের অনলাইনের আওতায় আনা যায়। কারণ আমি তো অন্তত লড়াই করার সুযোগটা পেয়েছি। অনেকে হয়তো সেটিও পায়নি।  

অবশেষে আরেকটা কথা হলো, আমার মতো কষ্ট করে অনলাইনে টিকে থাকা সৈনিকেরা ‘অটো পাস’ শব্দটা শোনার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নয়। কারণ অটো পাসে সার্টিফিকেট অর্জিত হয়, জ্ঞান নয়।

*লেখক: তিশা সাহা, শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, সরকারি আইনউদ্দীন কলেজ, মধুখালী উপজেলা, ফরিদপুর