কথিত নথি নয়, আক্রোশের শিকার রোজিনা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকে কাজ করেন রোজিনা ইসলাম। অনুসন্ধানী এ সাংবাদিক আছেন প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদকের দায়িত্বে। সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রথম আলোয় বেশ কিছু অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে সারা দেশে হুলুস্থুল শুরু হয়ে গেছে। এমনকি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও তাঁর কার্যালয়ে আসেন না, এমন তথ্যবহুল সংবাদ রোজিনা ইসলামের নামে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর এমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থাও নিয়েছে। যদি রোজিনা ইসলামের কলম থামিয়ে রাখা না যায়, তাহলে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এমন চিন্তাভাবনায় সুকৌশলে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার পর কথিত নথি চুরির অপরাধের ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যক্তি। তাঁকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে মনে করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া রোজিনার পরিবার। ইতিমধ্যে রোজিনাকে গলা টিপে ধরতে একজনকে দেখাও গেছে। কে গলা টিপে ধরেছিলেন, সেটা এখনো স্পট হয়নি। তবে কেউ কেউ ওই নারীকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।

ইতিমধ্যে দেশবরেণ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ইস্যুতে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রোজিনা ইসলামের ওপর অমানবিক নির্যাতন, মামলা ও কারাগারে পাঠানোর খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে জাতিসংঘ নজর রাখছে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে জাতি জেনে গেছে, রোজিনা ইসলামকে আক্রোশের বলি বানানো হয়েছে। কথিত নথি চুরির অপবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নথি চুরির বিষয়টি যখন জাতির সামনে চলে আসে, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সচিবের পিএসের কক্ষে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়া যেসব ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেসব ঔপনিবেশিক যুগের ধারায় করা মামলা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনায় সারা দেশের সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন সাংবাদিকেরা। তা ছাড়া রোজিনা ইসলামকে হেনস্তাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যাঁরা করেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ারও দাবি জানান তাঁরা।

আমরা বিশ্বাস করি, আইনি মোকাবিলার মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম আমাদের মধ্যে ফিরে এসে আরও বেশি করে দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের মুখোশ উন্মোচিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন। রোজিনারা বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সরকারের সহায়ক শক্তি হবেন।

*লেখক: মো. মুন্না মিয়া