আমি বাংলাদেশের সাধারণ মেয়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘সাধারণ মেয়ে’-র মতো সাধারণ। প্রতিদিন আমরা চলার পথে নানা দৃশ্য দেখি, কখনো কখনো কোনো দৃশ্য মনের গভীরে দাগ কেটে যায়। আবার কোনো সংবাদ মনের মধ্যে দৃশ্যের অবতারণা করে। মনের কথা বলার ও লেখার অধিকার সবার। সেই থেকেই দৃশ্যপট।
নিস্তব্ধ এক ঘর, কেউ নাই
ঘণ্টা ধরে নীল পোশাকের
একটি মেয়ে আসে, এটা-ওটা নিয়ে
একটি মাত্র খাট, সেখানে সে থাকে একা
প্রথমে ভেবেছিল মাত্র সাত দিনের নির্বাসন
এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত আরও কত দিন
বাড়ির কেউ আসতে পারে না, কত দিন
কত দিন বন্ধুদের আড্ডার আমেজ নাই
বন্ধু বলতে একটি টিকটিকি আসে আর যায়
মার কথা মনে হয়, সে শবযাত্রার খাট ধরেনি
বন্ধুরা মাকে নিয়ে যাচ্ছিল গোরস্থানের দিকে
খুব একা মনে হচ্ছিল সব হারিয়ে নিপাট নিঃস্ব
বোনের যেদিন বিয়ে হয়ে চলে যায়,
বাড়ির ঘর উঠান, কলপাড়, তুলসীতলা সব শূন্য
ঘাটপাড় থেকে উঠানে পা রেখে, মায়ের শাড়ি
সাত মাস পর, মাঘের শেষ দিন মাঘী পূর্ণিমার রাত্রিতে
বাড়ির উঠান ঘরে ভরে উঠল, গায়ের মানুষের ঢলে
দাওয়ায় ভরা মানুষ মাঝখানে গোল হয়ে, কী যেন দেখে তারা
নিথর শরীরে এলোমেলো চুলে দাওয়ার ওপর নিস্তব্ধ বোন
কোনো কথা সে কইতে পারে না, মার মুখেও কথা নাই
সেই থেকে, বাড়ির উঠান শূন্য কেউ নাই? কথা নাই
বোনের জ্বলন্ত শরীর, তার মাথায় তুলে আগুন
নিথর নিশ্চল শরীর অসুরের শক্তিতে তুলে কাঁধে
নিথর শরীর রাখে বরফের খোপে লাশকাটা ঘরে
তারপর কিছু মনে পড়ে না কথা নাই কেউ নাই
কেন এই ঘরে সে একা আর টিকটিক শব্দ
হাজত না হাসপাতাল—দুই আজ অর্থহীন
নিস্তব্ধ এক ঘর, কেউ নাই কথা নাই।