এভাবে ‘তাকাবা না’

ফাইল ছবি

অটিজমের একটা প্রধান লক্ষণই হলো সামাজিকতা করতে বা বুঝতে না পারা, যা মনে আসে, তা সরাসরি বলে দেওয়া। অন্যান্য আরও কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায় এ রকম বৈশিষ্ট্য।

আমাদের সমাজের যেসব নিয়ম আমরা গড়পড়তা মানুষেরা মেনে চলি, তার মধ্যে একটা হলো অন্যের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে না থাকা। কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমরা বিরক্ত হই, ভ্রু কুঁচকে বা অন্যভাবে বুঝিয়ে দিই। বাংলাদেশে দেখি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, মানসিক রোগী বা একটু আলাদা কাউকে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে মানুষ। তখন সমাজের সব নিয়ম যেন ভুলে যাই আমরা। আসলে মানি না, কারণ তাঁকে ছোট করে দেখি, ভাবি—এর ক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ম মানার দরকার নেই। এ কারণে বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা সাধারণত আগ্রাসী ভাব নিয়ে চলেন যাতে তাঁদের কেউ ঘাটাতে না আসে। এ কারণে অনেকে তাঁদের ভয়ও পায়। এটা আসলে তাঁদের আত্মরক্ষার একটা উপায়। ‘পাগল’ দেখলে ঢিল ছুড়ে মারা, হাসাহাসি করাও আমাদের বাঙালি সমাজের এক নিষ্ঠুরতা ও অসভ্যতার লক্ষণ।

আমার মেয়ের ডাউন সিনড্রাম আছে, ও সাধারণ বাচ্চাদের চেয়ে আলাদা। কেউ এমন করে ওর দিকে অভদ্রের মতো তাকিয়ে থাকলে ও বলে দেয়, ‘ডোন্ট লুক অ্যাট মাই ফেস।’

সে রকমই একটা ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি ঢাকায়। অটিজম আছে এমন এক কিশোরের দিকে ওর স্কুলের পাশের মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রী এভাবে তাকিয়ে ছিলেন। ছেলেটি স্কুলের পোশাক পরা ও ব্যাগ কাঁধে ছিল। মেয়েটি হয়তো বুঝতেও পেরেছিলেন যে ছেলেটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। ছেলেটি প্রথমে বলেছে, ‘তাকাবা না।’ এরপরও যখন মেয়েটি তাকিয়েই ছিলেন, ছেলেটা কাছে গিয়ে আবার জোরে বলেছে, ‘তাকাবা না।’ তখনই ভয় পেয়ে মেয়েটা দৌড় দিয়ের কলেজে ঢুকে পড়েছেন, স্কুল যেহেতু কলেজের পাশেই। মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তাকর্মীরা কিছু না শুনেই মারধর শুরু করেন ছেলেটাকে। শরীরের দিক দিয়ে বড়সড়ো ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারেনি।

সে রকমই একটা ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি ঢাকায়। অটিজম আছে এমন এক কিশোরের দিকে ওর স্কুলের পাশের মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রী এভাবে তাকিয়ে ছিলেন। ছেলেটি স্কুলের পোশাক পরা ও ব্যাগ কাঁধে ছিল। সে ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হচ্ছে, রেডিওতেও ওর মা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

আমি ভাবছি, ছেলেটা ও তার বাবা যদি দরিদ্র হতেন, মলিন পোশাকের হতেন, তাহলে নিরাপত্তাকর্মীদের দল কিছুই শুনত না, বাবাসহই ওকে হয়তো মারাত্মক মারধর করত। এ ঘটনা কেউ জানতেও পারত না। আসলে অহরহ ঘটছেও এ রকম। দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী যারা, সমাজের দ্বিগুণ অভিশাপ তাদের ওপর।

ফাইল ছবি

অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়েছে গতকাল শনিবার। আসুন আমরা সচেতন হই আর ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানদের শেখাই ভিন্নতা দেখলে ভয় না পেতে, তাকিয়ে না থাকতে, সমাজের সব ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশতে, তাদের যত্ন নিতে। একা সামনে গেলেই অগ্রসর হওয়া যায় না, আসুন সবাইকে নিয়ে অগ্রসর হই। তাতে নাহয় আপনার নিজের এগোনোর গতি একটু মন্থরই হলো।