উৎসব ও সম্প্রীতির বুদ্ধপূর্ণিমা, করোনাময় উদযাপন
আজ পবিত্র বুদ্ধপূর্ণিমা-২৫৬৫ বুদ্ধবর্ষ। সারা বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ও বড় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা। এই পূর্ণিমা তিথিতেই আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে নেপালের লুম্বিনি কাননে মহামানব বুদ্ধ জন্মলাভ, বুদ্ধগয়ায় বুদ্ধত্বলাভ এবং কুশিনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তাই স্মরণীয় এই দিনটি বৌদ্ধরা নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা বা ভেসাক ডের উৎসবে বাংলাদেশের জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেন। বৌদ্ধদের বিশেষ দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি এবং তাদের ধর্মীয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গসংগঠন করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে।
সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক শুভেচ্ছাবাণী দেন। দিনটি শুরু হয় স্নান ও নতুন পোশাক পরিধান করে মন্দিরে পূজা ও বুদ্ধের বন্দনার মধ্য দিয়ে। বৌদ্ধবিহারে প্রদীপ জ্বালিয়ে ও সুসজ্জিত করেন। পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনা করে থাকেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি উৎসবের আয়োজন করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন ঢাকার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ সমবেত প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভা, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ, বনভান্তের শিষ্য সংগঠন এবার আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বরাবরের মতো বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও, সংবাদপত্র, অনলাইন সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান বিশেষ দিবস উপলক্ষে আয়োজন করছে।
যুগে যুগে মহামারি ছিল, তেমনি বুদ্ধযুগে মহামারি দেখা দিয়েছিল এবং কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিল, তা ত্রিপিটকের অন্তর্ভুক্ত রতন সূত্র, পরিত্রাণ সূত্র, জয়মঙ্গল সূত্র, করণীয় মেত্তা সূত্র, মহাসময় সূত্র, দীর্ঘনিকায়ের শ্রামণ্যফল সূত্র, খন্ধ পরিত্রাণ সূত্রে বর্ণিত আছে। মহামানব বুদ্ধ ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই সমাধান দিতেন। বুদ্ধের বাণী ‘সব্বে সত্ত্বা সুখিতা ভবন্তু’ অর্থ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। তিনি কোনো বিশেষ জাত, শ্রেণি, গোত্র বা সমাজের কারও জন্য এ প্রার্থনা করেননি। তিনি সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন। তাই বুদ্ধের অহিংস বাণী সবাইকে ধারণ করে কারও প্রতি ক্ষোভ, হিংসা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ব্যভিচার, অবহেলা, অন্যায়-জুলুম ও গর্হিত কাজ হতে দূরে থাকতে হবে। সবাইকে মানবিক, নীতি-নৈতিকতা, পরমতসহিষ্ণু এবং একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে থাকতে হবে—এসব কথাই বুদ্ধের জীবনাদর্শে গাথা। সবাইকে বুদ্ধপূর্ণিমা মৈত্রীময় শুভেচ্ছা। বাংলাদেশ সরকারের সব নির্দেশনা মেনে নিজে সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন এবং অপরকেও ভালো রাখুন।
*লেখক: রোমানা পাপড়ি, এমফিল গবেষক, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়