আমি বাংলাদেশের সাধারণ মেয়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘সাধারণ মেয়ে’–র মতো সাধারণ। প্রতিদিন আমরা পথচলার পথে নানা দৃশ্য দেখি, কখনো কখনো কোনো দৃশ্য মনের গভীরে দাগ কেটে যায়। আবার কোনো সংবাদ মনের মধ্যে দৃশ্যের অবতারণা করে। মনের কথা বলার ও লেখার অধিকার সবার। সেই থেকেই দৃশ্যপট।
আমি নিশ্চুপে বসেছি এক কোনায়
অনেক বছর আগের কথা, প্রায় চল্লিশ
মায়ের সাথে প্রতিবেশীর বাড়ি যাই
প্রিয়জন হারিয়ে প্রতিবেশী বিহ্বল
মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন
তারপর, কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বোনের কথা
মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল বাতাসের কষ্টে
বুকের ব্যথা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে
যন্ত্রণায় আর্তনাদে বলে, খুলে দাও সব
জানালা দরজা
বিহ্বল প্রিয়জন করে উন্মুক্ত সকল খিলান
তবু হয় না তার নিরাময়, বুকের বাঁধন খুলে
পরান চায় শান্তি
আমি নিশ্চুপে শুনেছি এক কোনায়
বহু বছর মানুষ হৃৎপিণ্ডের যন্ত্রণায় দগ্ধ
রক্ত সঞ্চালনে জমাটবদ্ধতায় হৃদ্রোগ
বিজ্ঞানীরা এক হাতে বই আরেক হাতে
কাঁচি-ছুরি নিয়ে ব্যস্ত পদযাত্রায়
মানুষ আশায় বুক বাঁধে, হারায় প্রিয়জন
রক্তঝরা জীবন স্মৃতি আর বিজ্ঞান
চিকিৎসক ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ড তুলোও
হাতে, সদ্যনিহিত মানুষের হৃৎপিণ্ড
সংযোগে একটু হয়নি দেরি রোগগ্রস্ত শরীরে
শতবর্ষের বিজ্ঞান ব্যাপৃত দেশে দেশে
তবু কি পেরেছি, নিজের ঘর বাঁচাতে!
আমার হাতের ওপর জন্মদাতা পিতাকে
দেখেছি তার নিশ্চুপ বুকের ব্যথার দহন
তিনি দীর্ঘদেহী শক্তিময় প্রাণের মানুষ—
তোমার বিজ্ঞান, আমায় পারবে না রাখতে
আমার সময় শেষ আমায় তুমি ঘরে নিয়ে চলো
মৃত্যু পথযাত্রীর এমন দৃঢ়তা দেখা যায় না
তবু বিজ্ঞান তাঁকে ধরে রেখেছিল আরও ছয়টি দিন
আমি নিশ্চুপে নির্বাক বসেছি এক কোনায়
মায়ের সময় ভুল করব না, ঠিক করেছিলাম দুই বোন
বাড়িতে এনেছি তড়িঘড়ি অক্সিজেন, অক্সিমিটার
অ্যাম্বুলেন্স ক্রমাগত হর্ন, হাসপাতাল
নিশ্চুপ রাতের করিডর, মধ্যরাত জ্বলজ্বলে আলো,
নিথর নিঃসঙ্গতা
দিন ও রাতের সব প্রহর একই বেদনায় ভাসমান
আমি নিশ্চুপে নির্বাক বসেছি এক কোনায়।