অশিক্ষা-অসচেতনতায় দুই শ পার

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী মানুষকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছতে বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবার ধারণা এই বিধি নিষেধ আগামী ঈদ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে। এ আশঙ্কায় অনেকে কষ্ট হলেও ছুটছেন। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা যাত্রী সাধারণ নদী পাড়ি দিতে ফেরিতে উঠছেন। সকালে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরি ঘাটে।
ছবিঃ এম রাশেদুল হক।

১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে এক দিনে দুই শতাধিক মানুষ বোধ হয় মৃত্যুবরণ করেনি। আজ বাংলার মানুষকে এ মর্মান্তিক ঘটনাও দেখতে হচ্ছে। ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। আজ সেই আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক দিনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজারের বেশি। মৃত্যুসংখ্যা কখনো ২৩০, কখনোবা ২২০। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার, ১২ হাজার অথবা ১৩ হাজার।

এ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির দায় কার? সাধারণ জনগণ নাকি সরকারের? এ বিষয়ে নির্বাচন করলে হয়তো সাধারণ জনগণের দোষের পাল্লাই ভারী হবে। কেননা বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস ঠেকাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছিল, যার সব কটি মাঠে মারা গেছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম ছিল। এ সংখ্যা যেন আর বৃদ্ধি না পায়, তাই বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট-শপিং মল, গণপরিবহন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আহ্বান আসে গ্রামের বাড়ি না যাওয়ার। তাই বন্ধ করা হয় দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, অভ্যন্তরীণ বিমান ও লঞ্চ। এ সিদ্ধান্ত কোনো সন্দেহ ছাড়াই ছিল একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু দেখা যায় সম্পূর্ণ তার বিপরীত দিক। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই ফেরিতে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়।

এক মাস পার হতেই দেখা যায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বৃদ্ধির সংখ্যা। আবার সবকিছু বন্ধের নির্দেশনা আসে। রাস্তাঘাটে নামানো হয় সেনাবাহিনীসহ সব স্তরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘোষণা আসে, অকারণে বাড়ির বাইরে বের হলে হতে পারে জেল-জরিমানা। কিন্তু কে শোনে কার কথা, রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দেখা যায় অকারণে লকডাউন দেখতে বের হওয়া মানুষ। নির্দেশনা অনুযায়ী আটক করা হয় এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও।

প্রতিদিন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু এরপরও চলমান লকডাউন উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাজারে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। ফিশারিঘাট নতুন মাছ বাজার, চট্টগ্রাম, ৩ জুলাই
ছবি: সৌরভ দাশ

অকারণে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আটক হয়েছেন, এমন একজনের কাছে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ইউটিউব চ্যানেল আছে, এক লাখ ফলোয়ার আছে, আমাকে আটক করেছে।’ আরও একজনকে মাস্ক না পরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরে আর কী হবে?’

এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা শুধু সরকারের দোষ ধরতেই ব্যস্ত। যখন দেশের জনগণই এমন, তখন সরকার আর কী করবে? যেসব নির্দেশনা দেওয়ার দরকার ছিল, তার সবকিছুই করা হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, একাধিকবার লকডাউন ও বিধিনিষেধের ঘোষণা এসেছে। মানুষের মুখে মুখে ছিল—রাস্তায় সেনাবাহিনীর দরকার ছিল, তা–ও পূরণ করা হলো।

আবারও বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল আজহা আসছে। বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণাও এল। বিধিনিষেধ যদি শিথিল করা না হতো, তাহলে দেখা যেত শপিং মল খোলার জন্য আন্দোলন করছে, আবারও ফেরিতে ভিড় করে গ্রামের যাত্রা শুরু হবে। আর কত কী করলে মানুষ সচেতন হবে? শিক্ষিত হবে? এটি তো এমন একটি রোগ, যা শুধু একজনকে নয়, আক্রান্ত করে আশপাশের সবাইকে। তাই সবার উচিত শিক্ষিত হয়ে সব বিধিনিষেধ মেনে চলা। ব্যাপারটা এখন এমন হয়েছে, বেঁচে থাকা নয়, ঈদ পালনই মুখ্য।

*লেখক: নুসরাত রহমান; শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি