অনিশ্চয়তার মধ্যেই সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের!
এক দিন, দুই দিন, তিন দিন!
গুটি গুটি পায়ে মাস পেরিয়ে বছর। বছর পেরিয়ে এখন কেটে যাচ্ছে প্রায় আরও একটি বছর। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া কিশোর–কিশোরীদের উত্তাল মনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঁপার কথা ছিল কলেজ আঙিনা। কচি প্রাণগুলোর সে সুযোগ আর হয়নি। চার দেয়ালের মধ্যে মুঠোফোন কিংবা ট্যাবের স্ক্রিনে তাকিয়েই শেষ করতে হচ্ছে সাধের কলেজজীবন।
কোমল গোঁফ গজানো সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ছেলেটা কিংবা পুষ্ট ভ্রু নিয়ে হরিণী চোখের মেয়েটার মন ছটফট করছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে পা ফেলার আকাঙ্ক্ষায়। তবে ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোয় এখন তাদের দিন কাটছে চরম হতাশায়।
অনেক আশা নিয়ে গ্রামের সবার প্রিয় ছেলেটা ভর্তি হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মা–বাবা অনেক দিন পর হয়তো একটু হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। এবার ছেলে আস্তে আস্তে বড় হবে, দিন যাবে দুঃখের ভার কমতে থাকবে। তবে সুখ বেশি দিন সহ্য হয় না বলে একটা কথা আছে। কয়েক সপ্তাহ ক্লাস করার পর প্যানডেমিকের জন্য যখন বন্ধ ঘোষণা করা হলো, তখন কে আর জানত, এই বন্ধই এক নাগাড়ে বছর পেরিয়ে আরেক বছর আনবে?
এ তো গেল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কথা। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি বর্ষের শিক্ষার্থীদের খোঁজ কেউ নিয়েছে? মা–বাবা হয়তো ভেবেছিলেন, আর মাত্র কয়েক বছর। এই তো আমার সেদিনের বাচ্চাশিশু আজ কত বড় হয়ে গেছে। কয়েকটা দিন বাদেই চাকরি করবে! কত রকম চাকরি আছে। আমার খোকা তো একটা পাবেই!
কিন্তু খোকার পড়াশোনাই যে শেষ হয়নি! কে তাকে চাকরি দেবে?
খোকা মাকে সান্ত্বনা দেয়। মা আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু খোকা আর আশা করতে পারে না। তার আশা করার সব শক্তি, সাহস কিংবা ইচ্ছা যেন দেশের বিধিনিষেধ আর টিকার ফাঁদে আটকে পড়েছে।
কবে শেষ হবে টিকাদান কার্যক্রম আর কবেই–বা উঠবে বিধিনিষেধ?
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা জটিলতায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলোয় ব্লেন্ডিং পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও দেশের নীতিনির্ধারকেরা কী ভাবছেন, কে জানে!
শ্রাবণের আকাশজুড়ে তাই আজ শুধু অনিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তার শেষ কোথায়?
*লেখক: মো. নাঈম উদ্দিন, শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়