অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম ফলপ্রসূ করার উপায়
ঢাকা কমার্স কলেজে গত বছরের ১০ মে থেকে সম্মান শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত নিচ্ছি। তা ছাড়া এর আগে ও পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনলাইনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমি একটি গবেষণা করছি। এর বিষয়বস্তু হলো ‘অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করার উপায়সমূহ’। এর জন্য আমি একটি ত্রিমাত্রিক মডেল বিবেচনা করেছি, যা নিচে আলোচনা করা হলো—
মাত্রা-১: অনলাইন ক্লাস পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের করণীয়সমূহ
*আপনার চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হোন এবং ক্লাসের ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন কিছু তৈরি করবেন না, যাতে ক্লাসের শুরুতেই ওটা দেখে হাস্যরসের উদ্রেক হয়।
*অনলাইন ক্লাসে একমাত্র যাদের প্রয়োজন, তাদের ইনভাইট করুন। কারণ, অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি আপনার ক্লাসকে নষ্ট করে দিতে পারে।
*আপনি যে টপিক নিয়ে আলোচনা করবেন, সেটা আগে থেকে সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিন, যাতে সবাই প্রস্তুত থাকতে পারে।
*আপনার ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন সঠিক স্থানে সেট করুন, যাতে আপনাকে অথবা আপনার ক্লাসকে সঠিকভাবে ফোকাস করে।
*অনলাইন ক্লাসে এসে একটু অপেক্ষা করুন—সবাই উপস্থিত হয়েছে কি না—তারপর ক্লাস শুরু করুন।
*কোনো কারণ ছাড়া মনিটর, মাউস, ল্যাপটপ ও কি-বোর্ড এগুলো নাড়াচাড়া করবেন না।
*আপনার পোশাকপরিচ্ছদের বিষয়ে সচেতন হোন।
*আপনি যে বিষয়টি পড়াচ্ছেন, ওই বিষয়ে গুরুত্ব দিন। এর বাইরে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।
*অন্যকে বলার সুযোগ দিন, বাধা দেবেন না।
*লম্বা টপিক নিয়ে আলোচনা করার আগে সবাইকে জিজ্ঞাসা করুন।
*যখন আপনি কথা বলছেন না, তখন মিউট করুন এবং মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শুনুন।
*ভালো উপস্থাপনা করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ (কলম, নোটবুক, নথি, প্রতিবেদন ইত্যাদি) নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।
*শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন নোট করুন।
*আপনার মোবাইল সাইলেন্ট (Silent) রাখুন।
*ক্লাস নেওয়ার সময় কিছু খাবেন না বা কিছু চিবোবেন না।
*লম্বা ক্লাসে প্রয়োজনে একটু বিরতি নিন।
*ক্লাসে সময় শেষ হয়েছে বলুন।
*ক্লাসে সবাই উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ দিন।
*ক্লাসে পড়ানোয় কোনো সমস্যা থাকলে একের পর এক সবার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
*ডেস্কটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেকোনো সময় ইলেকট্রিসিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে, তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য মোবাইল এবং ল্যাপটপে পর্যাপ্ত চার্জ দিয়ে রাখুন।
*কোনো কারণে ওয়াই-ফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য মোবাইল ডেটা কিনে রাখুন।
*সাইবার অপরাধ ও সাইবার বুলিংয়ের কুপ্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করুন।
*পেশাদারত্ব বজায় রাখুন।
মাত্রা-২: অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের করণীয়সমূহ
*উপস্থিতি: ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে।
*ক্যামেরা: ক্লাস চলাকালে অবশ্যই সবাইকে ক্যামেরা অন রাখতে হবে।
*মাউথ স্পিকার: ক্লাসে যেন কোনো গোলমাল বা নয়েজ সৃষ্টি না হয়, তাই কোনো প্রশ্ন না থাকলে মাউথ স্পিকার অফ করে রাখা।
*প্রশ্ন-উত্তর পর্ব: ক্লাসের শেষ ৫-১০ মিনিট সময়ে শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া।
*হোম ওয়ার্ক: ক্লাসের হোম ওয়ার্ক প্রতিটি ক্লাস অনুযায়ী সম্পাদন করে শিক্ষককে প্রদান করতে হবে।
*পোশাকপরিচ্ছদ: শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরিধান করতে হবে না, তবে অবশ্যই যথাযথ পোশাক পরিধান করে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে।
*পড়ার টেবিল বা কম্পিউটার ডেস্ক: শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পড়ার টেবিল বা কম্পিউটার ডেস্কের সামনে বসে প্রয়োজনীয় বইপত্র, খাতা-কলম-পেনসিল, ক্যালকুলেটর (ম্যাথেমেটিক্যাল বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে ক্লাস করতে হবে।
মাত্রা-৩: অনলাইন ক্লাস পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের করণীয়সমূহ
*কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা।
*কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং নিজ নিজ সন্তানের কাছ থেকে ক্লাস রুটিন সংগ্রহ করে মিলিয়ে নেওয়া।
*ক্লাস রুটিন অনুযায়ী তাঁর সন্তান নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ এবং নিশ্চিত করা।
*প্রতিটি ক্লাসের হোমওয়ার্ক ক্লাসে সম্পাদন করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ এবং নিশ্চিত করা।
*কোর্স শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমের ধারণাটি দেশে নতুন হলেও উন্নত বিশ্বে এটি প্রচলিত আছে বেশ অনেক দিন থেকেই। বিষয়টি নতুন হলেও আমি মনে করি, উপরিউক্ত তিনটি মাত্রার সঠিক সমন্বয়ে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ ও বেগবান করা সম্ভব।
*লেখক: মো. হাসান আলী, সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ঢাকা কমার্স কলেজ।