সঙ্গী
একটা ছোট পানের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। একসময় এক যুবক এল দোকানের সামনে। আশপাশে পরিচিত কেউ আছে কি না, দেখে নিল। তারপর আরেকটু এগিয়ে এসে দোকানদারকে বলল, ‘ভাই, একটা রয়্যাল সিগারেট দেন তো তাড়াতাড়ি!’
দোকানদার অন্যান্য কাস্টমারকে সার্ভ করতে থাকায় ছেলেটাকে মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করতে হলো।
ছেলেটার মাথার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক, ঠোঁটের রং কালো। পরে আছে বহু পুরোনো একটা জিনসের প্যান্ট। অপরিষ্কার। গায়ে হাফ–হাতা সাদাকালো শার্ট। দেখে মনে হলো খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে আছে।
সিগারেট দিল। ছেলেটা এবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে চুপিসারে আগুন ধরিয়ে সিগারেটকে প্রাণ দিল। তারপর মনের সুখে টানতে লাগল, ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। সে কি সুখ!
জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত দিন ধরে খাচ্ছেন সিগারেট?’
উত্তরে ছেলেটা বলল, ‘হবে দু–এক বছর।’
একটু অপেক্ষা করে আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘সিগারেট ধরার কারণটা জানতে পারি, ভাই?’
ছেলেটা এবার আস্তে আস্তে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। উদাসীন হয়ে আমাকে বলল, ‘ছিল একটা কারণ। মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতাম একজনকে। নেশার মতো ছিল তার চোখগুলো। সেও ভালোবাসত আমায়। কিন্তু আমি ছিলাম তার “অপশন”। আর অপশনকে তো ছেড়ে দেওয়াই যায়।’
আমি চুপ করে তাকে দেখতে লাগলাম। শেষ করে সে দোকানদারকে সিগারেটের দাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল, ওই সময় আবার ছেলেটা ইউ-টার্ন নিয়ে আমার দিকে ফিরে এসে অদ্ভুত এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই, বলেন তো আমি কিসের দাম দিলাম?’
আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম। উত্তর দিলাম, ‘সিগারেটের দাম দিলেন। আর কিছু তো নেননি দেখলাম!’
ছেলেটা আমাকে অবাক করে দিয়ে উদ্ভট একটা হাসি হাসল। এরপর একটু দম ফেলে বলল, ‘সিগারেট নয়, আমি আমার সঙ্গীর দাম দিলাম। যার কেউ নেই, সিগারেট তার চিরসঙ্গী।’
লেখক: অজয় সরকার, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়