নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ–সংক্রান্ত তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট প্রজন্ম গড়তে মানবিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, আবিষ্কারমনস্কতা ও প্রগতি’ শীর্ষক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন হয়ছবি: কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে  ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট প্রজন্ম গড়তে মানবিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, আবিষ্কারমনস্কতা ও প্রগতি’ শীর্ষক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে।

আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর। দুই দিনের এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ দেশের নানা জায়গা থেকে দেশবরেণ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা অংশগ্রহণ করছেন।  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলনে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নবসৃষ্ট জ্ঞানকে সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার জন্য শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়নকে মোটো হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম। যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিই তখন ইউজিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৩৯। দুই বছরে সেই ধাপের উন্নতি হয়েছে এবং সেটি এখন ১৪। এই উন্নয়নে গবেষণার ভূমিকা আছে। গবেষণা শুধুই ঘরে বসে করার বিষয় নয়। এটি অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগিও দরকার।’

উপাচার্য সৌমিত্র শেখর আরও বলেন, গত বছর বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন ও আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিল। এবার মানবিকী, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা নিয়ে হচ্ছে। বিজ্ঞান অনেক উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু এই বস্তুগত উন্নতিই একমাত্র উন্নতি নয়। নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তাই এই ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা ও গবেষণা অতি প্রয়োজন। চারুকলা, সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক শাখায় তাই নতুন নতুন গবেষণা জরুরি। এই কনফারেন্সে এসব ক্ষেত্রে নতুন গবেষণার সূত্র উত্থাপিত হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে যাচ্ছি।  এই শিল্পবিপ্লবের জন্য একদিকে যেমন প্রথাগত বিজ্ঞান চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে, তেমনি মানিবক মূল্যবোধ, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। উন্নয়নকে টেকসই করার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সভ্যতা গড়ে তোলার দিকে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’

সম্মেলনের অন্যতম মূল আকর্ষণ ও রীবন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর  পবিত্র সরকার বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রান্তিক পর্যায়ে থাকে তবুও সেটা বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবসৃষ্ট জ্ঞান দেশ, জাতি এমনকি বিশ্বের কল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে ও সেই জ্ঞানকে সারা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে।

অধিবেশনে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর টানইয়েল বি টাইসি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দিতে পেরে খুব গর্ব অনুভব করছি। একজন গবেষক হিসেবে কনফারেন্সের বিভিন্ন সেশনগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।

দ্য ইন্দোনেশিয়ান ইনস্টিটিউট অব দ্য আর্টসের রেক্টর আই ওয়ান অ্যাড্রিয়ানা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এসেছি। প্রথমবারেই নজরুলের স্মৃতিধন্য ক্যাম্পাস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে খুব আনন্দিত। আমি এই কনফারেন্সের সার্বিক সফলতা কামনা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ তৈরিতে খুব আগ্রহী।’

উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন  মুশাররাত শবনম, চারুকলা অনুষদের ডিন তপন কুমার সরকার ও রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবীর। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান।

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সমান্তরাল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে গবেষকেরা তাঁদের প্রবন্ধ উপস্থাপন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও বিদেশ থেকে সর্বমোট ২৫০টি প্রবন্ধ সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯৯টি প্রবন্ধ গৃহীত হয়েছে। ভারত ও সোমালিয়া থেকেই ১৭টি প্রবন্ধ গৃহীত হয়েছে।