নীলাদ্রি লেকের স্বর্গীয় সৌন্দর্যে

ছাত্রজীবন হচ্ছে ভ্রমণের জন্য অন্যতম উপযুক্ত সময়। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট আরও কত রকমের একাডেমিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় সব সময়। যখন মাঝেমধ্যে ছুটির ঘোষণা আসে দূরদূরান্তে ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে। গত সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটিতে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জের হাওর, পাহাড় ও লেক ঘুরেছি।

শিক্ষাজীবনে ভ্রমণের পূর্বশর্ত হলো, কম খরচে সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করা। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমারও তা-ই। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সাধারণত ক্যাম্পাসে বড় ভাই কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে গ্রুপভিত্তিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করে, এতে কম খরচে নিরাপদে ভ্রমণ সম্পন্ন করা যায়। অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা হচ্ছিল ভ্রমণে যাওয়ার। অবশেষে চূড়ান্তভাবে ঠিক করা হলো, আমরা সুনামগঞ্জ যাব। যেহেতু এটি একটি গ্রুপভিত্তিক ভ্রমণ ছিল, তাই ক্যাম্পাসের সিনিয়র, জুনিয়র ও সহপাঠী সবাই একসঙ্গেই যাব।

আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ছিল, সারা দিন ঘুমাব এবং রাতে বাসে সবার সঙ্গে আনন্দ করতে করতে যাব। কিন্তু এতটাই উত্তেজিত ছিলাম, সারা দিনে একটুও ঘুমাতে পারিনি। সারা দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে সবাই একসঙ্গে বাসে করে যখন রওনা করলাম। প্রায় সারা রাত গানবাজনা, আনন্দ, আড্ডা দিতে দিতে ভোরে সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ে গিয়ে পৌঁছলাম। হাওর পাড়ে যেতেই সকালের উদীয়মান সূর্য ও স্বচ্ছ পানির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ। অথই পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও মেঘ হাওরকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছিল সেদিন। সূর্যের আলো যখন নীল পানিতে পড়ছে, তখন সেখানে যুক্ত হয়েছে সুন্দরের আরেক নতুন মাত্রা।

ক্যাম্পাসের আবদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে নিজেকে মুক্ত পাখির মতো মনে হচ্ছিল। শুনেছিলাম নীলাদ্রি লেককে বলা হয় ‘বাংলার কাশ্মীর’, অবশ্য ভুল শুনিনি। টিলা ও পাহাড়ের সমারোহ, যার এক পাশে রয়েছে নীল জলের স্বচ্ছ লেক, আবার স্বচ্ছ জলের মাঝখানে রয়েছে ছোট কিছু টিলা; অদূরে ভারত সীমান্তের সুউচ্চ সুবিশাল সবুজ পাহাড়, এ যেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য।

সূর্যের আলো যখন হেলে পড়ছিল, তখন লাকমাছড়ার সবুজ পাহাড় ভেদ করে দেখা যাচ্ছিল লাল আলোর আভা। পাহাড় বেয়ে ছোট ছোট পাথরের ওপর দিয়ে গড়িয়ে আসছে পানি, সূর্যের লাল আলোতে চকচক করছে পাথরগুলো। এই অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে থেকেও শূন্যতা অনুভব করেছি ক্যাম্পাসের বন্ধুদের, ক্যাম্পাসের কোলাহল, ক্যাম্পাসের আড্ডা। তাই তো আবার ফিরে এসেছি প্রিয় ক্যাম্পাসে। সব মিলিয়ে ভ্রমণটি আমার জন্য ছিল খুবই রোমাঞ্চকর। আবার যখন হতাশা, ক্লান্তি এই ক্যাম্পাস জীবনকে আচ্ছন্ন করবে, তখন স্বস্তির নির্যাস নিতে ছুটে যাব নতুন কোনো চমৎকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
*লেখক: হাসান মোহাম্মদ সাকিব, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়