জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়গুলোতে দরকার নজর

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাজীপুর জেলায় ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। মানসম্পন্ন শিক্ষার বিস্তারের উচ্চ লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ৩০ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত। মোটামুটিভাবে বলা যায়, শিক্ষকস্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষের অভাব, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই ও জার্নালের অভাব, গবেষণা ও ল্যাবসামগ্রীর অভাবসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।

তবে বর্তমান সরকার এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন অবকাঠামো ও শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সময়োপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবু সংকট রয়েছে। সীমাবদ্ধতা ও সংকট সত্ত্বেও শিক্ষকেরা আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করছেন।

যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় গড় শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১: ২০, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজে গড় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত এর ধারেকাছেও নয়। তা সত্ত্বেও শিক্ষকেরা শিক্ষার বিস্তারে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার কম। ফলে অনেকে শুধু ভর্তি হয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে অবস্থান করে বিভিন্ন চাকরি করে সংসারের অর্থ জোগান দেয়। আমার কিছু বন্ধু ছিল, যারা শুধু পরীক্ষায় অংশ নিত।

অন্যরা তাদের নিজস্ব খরচ মেটাতে এবং তাদের পরিবারকে অর্থ পাঠাতে টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি নেয়। ফলে ক্লাসে উপস্থিতি কম হতে পারে। যেহেতু দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করে, তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে জ্ঞান–বিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক চর্চা, দক্ষ জনশক্তি, চাকরির বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, উদ্ভাবনীসহ সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকে।

তাই সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত—

  • শিক্ষক–ছাত্র অনুপাত আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে;

  • শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। গবেষণাকাজে উৎসাহ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণাপত্র, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করতে হবে। গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এবং আধুনিক ল্যাবের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে গবেষণার কাজ করতে পারেন;

  • ছাত্রদের বৃত্তি এবং হোস্টেলে পর্যাপ্ত আসন প্রদান করা উচিত। এ ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, বিতর্কসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম বিজ্ঞানে নতুন ধারণা সৃষ্টির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে;

  • শ্রেণিকক্ষসংকট নিরসন করতে হবে এবং শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার হল ও অডিটোরিয়াম নির্মাণ, ছাত্র পরিষদ নির্বাচন, সুস্থ রাজনীতি প্রভৃতির দিকে নজর দিতে হবে;

  • লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত দেশি-বিদেশি বই ও জার্নালের ব্যবস্থা করতে হবে। ল্যাবে পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে;

  • শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জন্য ক্লাসে উপস্থিতির হার বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের অনার্স ও মাস্টার্সে গবেষণাকাজ এবং ফিল্ড ভিজিটের ব্যবস্থা করতে হবে;

  • আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সময়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে;

  • উদ্যোক্তা, গবেষক হওয়া এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া। শিক্ষিত বেকারদের জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত সভা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করতে হবে।

লেখক: সামিয়া চাঁদ, শিক্ষক; সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।