শিমুলবাগানে ঘোরাঘুরি
‘শিমুলের ডাক শুনে যদি না আসিস
তবে তোরা ঘরে থাকিস।’
প্রকৃতিতে বসন্ত নানান পসরা সাজিয়ে তার আগমনী গান তোলে। নাগরিক ক্লান্তি ভুলে মনকে প্রাণবন্ত আর প্রশান্তির ছোঁয়া দিতে আমরা ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে। পাতাঝরা বৃক্ষে রক্তিম শিমুল ফুল যেন বসন্তের বিপ্লবী প্রতিনিধি। মনকে ডেকে বলছে, আমার দিকে তাকাবি? মন তুই ভুলে যাবি সব মনখারাপি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামে জয়নাল আবেদীন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর প্রায় তিন সহস্র শিমুলের চারা রোপণের মাধ্যমে শিমুলবাগানের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। শুধু তা–ই নয়, সেগুলো সারিবদ্ধভাবে সমান দূরত্বে রোপণ করাতে তা আরও দৃষ্টিনন্দিত হয়েছে। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যাদুকাটা নদী। বসন্তে সেটা মরুভূমির সাদা বালুর সমুদ্র মনে হবে। অদূরেই সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ভারতের মেঘালয়।
বাগানে আসার পর মনে হবে, এ যেন শিমুলের একটুকরো জমিদারি। মাথার ওপর রাজত্ব করছে টগবগে লাল শিমুল। রোদের ঝলকানিতে তারা যেন আরও যৌবনা হয়ে ফুটছে। ক্যামেরা কিংবা খালি চোখ দুটোতেই অপরূপ লাগবে সে দৃশ্য। শত সহস্র লাল ফুল কষ্ট করে আসা পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে সমর্থ হবে। কখনো মুখে হাসি এনে দেবে নানান ভঙ্গিতে ছবি তোলা সেখানকার আলোকচিত্রী এবং আগত মানুষদের কারসাজি দেখে। ঘোড়ায় চড়ার শখ থাকলে সে সুযোগও পাবেন সেখানে। চাবুক হাতে কিছুক্ষণের জন্য মনে মনে সেখানকার সামন্তশালী বনে যাওয়ার।
ঘণ্টাদুয়েক সেখানে থেকে সোজা চলে যেতে পারেন বারিক্কা টিলায়। জায়গাটা সমতল থেকে অনেকটা উঁচুতে। টিলার ওপর থেকে অনেকটা স্পষ্টই দেখা যাবে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়। নিচে যাদুকাটা নদী। শীত, বসন্তে সেটা প্রায় পানিশূন্যই থাকে। যেখানেই তাকাবেন, সাদা বালুর ধু ধু মরুভূমি মনে হবে আর দূরে সীমান্তের সবুজ পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য। আফসোস লাগবে, এত কাছে এসেও কেন সেখানে যেতে পারছেন না। চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে পারেন এখানে। উপভোগ করতে পারেন সময়টা।
এবার কিছুটা পাহাড়ি রাস্তা ধরে মোটরসাইকেলে করে সোজা নীলাদ্রি লেকের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে দেখা মিলবে সীমান্তে থাকা পাহাড়গুলোর। যদিও বর্ষাকালেই এই জায়গাটার আসল রূপ ফুটে ওঠে। নৌপথে যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকায় দর্শনার্থী ভিড় জমায় এদিকটায়। নীলাদ্রির স্বচ্ছ নীল পানি, সবুজ পাহাড় আর পাথরে ঘেরা টেকেরঘাট আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
কীভাবে যাবেন
চাইলে এক দিনেই ঘুরে আসা সম্ভব। ঢাকা থেকে যাঁরা আসতে চান, রাত ১০টার দিকে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে মোহনগঞ্জ। একদম ভোরে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে অটো কিংবা সিনএনজি নিয়ে মধ্যনগর। মধ্যনগর থেকে মোটরসাইকেলে সরাসরি শিমুলবাগান। সেখান থেকে বারিক্কা টিলা এবং টেকেরঘাট। পথে ছোটবড় হাওরের অপার সবুজ সৌন্দর্য্যের দেখা মিলবে। মোহনগঞ্জ থেকে রাত ১০টার ফিরতি ট্রেনে ফিরে যেতে পারবেন ঢাকা। এ ছাড়া ওই দিক থেকে সুনামগঞ্জ হয়েও আসা যায়। তবে একটা বিষয় হচ্ছে, মধ্যনগর থেকে শিমুলবাগান পর্যন্ত রাস্তা খুব একটা ভালো নয়।
লেখক: সৌরভ আহমেদ, বারহাট্টা, নেত্রকোনা