প্রকৃতির স্পর্শে একদিন
প্রকৃতির সান্নিধ্যে এলে কার না ভালো লাগে! সত্যি বলতে প্রকৃতির ছোঁয়া পছন্দ করে না পৃথিবীতে এমন লোক পাওয়া খুবই দুষ্কর। আমরাও এর বিপরীত নই। আমরা কয়েকজন অনেক দিন থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম, ঢাকার ভেতরে প্রকৃতির ছোঁয়ামিশ্রিত কোনো একটি জায়গা থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সেটি আর হয়ে উঠছিল না। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সাবেক সদস্যদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন রোভার স্কাউট ফোরামের উদ্যোগে আমাদের দীর্ঘদিনের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন ঘটে।
আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে টিএসসি থেকে যাত্রা শুরু হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রায় সবাই চলে এলেও আমি আর তুহিন মুস্তাফিজ ভাই প্রায় সাত মিনিট দেরিতে উপস্থিত হই। দেরি করায় শ্রদ্ধেয় মাজেদুল হক ভাই ও রেশমা আপুর স্নেহময় আদরমাখা কণ্ঠে হালকা ধমকানি খেয়ে দ্রুতই আসন গ্রহণ করি। এর কিছুক্ষণ পর প্রায় ১৫ মিনিট দেরিতে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় আমাদের ভ্রমণ যাত্রা। গন্তব্যস্থল ঢাকার ভেতরে প্রকৃতিঘেরা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। ঢাকার রাস্তার যানজট ঠেলে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা সকাল ১০টার কিছু পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছাই।
আগে থেকে অপেক্ষমাণ মারজুক সাকিব ও রবি ভাই আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সেখান থেকে সরাসরি শ্রদ্ধেয় তুষার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় চলে যাই। সেখানে সবাই একসঙ্গে সকালের নাশতা সেরে নিই। দুপুর ১২টার দিকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন আল শাহরিয়ার রোকন ভাই, মিম আপু, ফয়সাল ভাই, আল আমিন ভাই, আবদুল্লাহেল বাকী ভাই, রনি ভাইসহ কয়েকজন। ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের মাঠে আড্ডায় মেতে উঠি।
এ খোশগল্প চলে বেশ সময় ধরে। এরই মধ্যে ডুরসেফ সাধারণ সম্পাদক জহির আহমেদ সরকার ভাই চামচে মার্বেল দৌড়ের ঘোষণা দেন। আমরা সবাই সে খেলায় অংশগ্রহণ করি। দাদা আলী আকবর, স্নেহভাজন ইশতিয়াকসহ আরেকজন এ খেলায় বিজয়ী হন। এরপরই শুরু হয় বালিশ পাসিং। খেলাটি মেয়েদের হলেও ভাবিদের সঙ্গে আমরা ছেলেরাও অংশগ্রহণ করি। খেলাটিতে দারুণ মজা হয়। চোখ বেঁধে কপালে টিপ পরানো, বল নিক্ষেপ—খেলাগুলোও ছিল দারুণ।
খেলার আনন্দে খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। নামাজের বিরতি শুরু হলে পেটের ক্ষুধা মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে পড়ে, ক্ষুধা লেগেছে। ক্ষুধাই যেন তাগাদা দেয় আর কতক্ষণ, ‘এবার খেয়ে নাও।’ নামাজ সেরে দ্রুত সবাই একসঙ্গে খেতে বসি। খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট আর রুই মাছের সঙ্গে চিকন চালের পোলাও স্বাদে ছিল অসাধারণ। খাওয়া শেষে সবাই মিলে সারা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করি।
ডিআইইউ ক্যাম্পাসের অত্যাধুনিক বিল্ডিং, মসজিদ ও খেলার বিশাল মাঠ আমাদের মন কাড়ে। আমরা জায়গাগুলোতে নিজেদের ক্যামেরাবন্দী করি। প্রকৃতি ভালো করে উপভোগ করতে তৈরিকৃত নান্দনিক দোলনাগুলোও ছিল দেখার মতো। আমরা দোলনায় দোল খেতে খেতে প্রকৃতি উপভোগ করি। বৃক্ষরাজির নিচে হালকা শিরশির বাতাসে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ক্ষণিকের মধ্যে হারিয়ে যাই এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে।
বন্ধু রুবেলের সেলফিতে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের ধারণ করি। এভাবে চলে আরও ঘণ্টাখানেক। দিনের আলো কমতে শুরু করে, সঙ্গে শুরু হয় আমাদের ঘরে ফেরার প্রস্তুতিও। বাদ আসর মাগরিবের পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটে এ ভ্রমণের।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়