ঘুরে আসুন শালবন বিহার

বাংলাদেশে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম শালবন বৌদ্ধবিহার। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থান বিহারটির। আগে এই প্রত্নকেন্দ্র শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। পরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে একে শালবন বিহার নামে আখ্যায়িত করা হয়। প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধবিহার। এটি ১২শ’ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

আকারে চৌকো শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭ দশমিক ৭ মিটার দীর্ঘ। শালবন বৌদ্ধবিহারের চারদিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চারদিকের বেষ্টনীদেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল।

এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১ দশমিক ৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝখানে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ রয়েছে শালবন বিহারে। কক্ষের সামনে চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেব–দেবীর মূর্তি, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এ কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্ম চর্চা করতেন। বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চারদিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবারঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের চারদিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

এখানে ঘুরতে এলেই দেখবেন শালবন বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে ৮টি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, এ বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন, লেখাপড়া ও ধর্ম চর্চা করতেন। নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না শালবন বৌদ্ধবিহারের প্রতিটি ইট কতটা জীবন্ত! কত না অজস্র ঘটনা লুকিয়ে আছে এর প্রতিটি কোনায়! তাই আজও শালবন বিহার প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের গৌরবান্বিত প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসে।

Picasa

কীভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে আগে কুমিল্লায় আসতে হবে। ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে এলে এ মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোড নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা রিকশা পাওয়া যাবে বিহারটিতে যেতে।

কুমিল্লা শহর থেকে কোটবাড়ি ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বাইপাস নন্দনপুর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই আর শালবন পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়ি।

কুমিল্লা টমছমব্রিজ চৌমুহনী থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কোটবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ২০ টাকা। দৌলতপুর হয়ে সিএনজিচালিত রিকশা থেকে নেমে অটোতে করে শালবন বিহার জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা।