ঘুরে আসতে পারেন জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর

ছবি: লেখক

বছর তিনেক আগে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটা ছবি দেখেই মনে মনে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম বিয়ে করে বউকে নিয়ে এখানে যাওয়ার চেষ্টা করব। যখন ছবিটা দেখি, তখন মাত্র এখানে শাপলার ফোটার সময় শেষ হয়েছে। আর তখন বিয়েও করিনি।

তাই তিন বছর অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। এ দেশে অবশ্য শাপলার বিলের অভাব নেই। তবে যাঁরা ঘুরতে পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে দেশের মধ্যে শাপলা দেখার জন্য দুটি জায়গা বেশ পছন্দের হওয়ার কথা। একটা বরিশালের উজিরপুরের সাতলা নামক গ্রামে, আরেকটা সিলেটের জৈন্তাপুরে। সাতলায় শাপলা থাকে বর্ষায় আর জৈন্তাপুরে শীতে।

শীত আসতেই জৈন্তাপুরে যাব যাব করছিলাম কিছুদিন ধরেই, কিন্তু আমার ছুটি নেই। দেখা যায় আমার ছুটি হবে, কিন্তু তখন আবার আমার স্ত্রীর ছুটি নেই। স্ত্রীর সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন। চিন্তা করলাম এই সাপ্তাহিক ছুটির সময়টা কাজে লাগাতে হবে। তাই আমি অনেক অনুরোধ করে তিন দিনের ছুটি ম্যানেজ করলাম।

বৃহস্পতিবার রাতে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন বাসের টিকিট পাইনি। তাই পরদিন শুক্রবার সকালেই রওনা দিলাম সিলেট। বাস সকাল আটটায় চলতে শুরু করল। বেলা যখন দুইটা বাজে, তখন আমরা পৌঁছে গেলাম সিলেটে হুমায়ূন চত্বরে। সেখান থেকে একটা অটোরিকশা নিয়ে চলে গেলাম সিলেটের কোতোয়ালি থানার তালতলা বাজারে।

ওখানে আশপাশে খোঁজ নিয়ে একটা আবাসিক হোটেলের সন্ধান পেলাম। নাম গুলশান হোটেল। গুলশান হোটেল আশপাশের অনেক হোটেলের চেয়ে একটু বেশি সহজলভ্য ছিল।

পরদিন খুব সকালে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরের জৈন্তাপুরে উদ্দেশে। সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে জৈন্তাপুর বাজার পেরিয়ে একটু এগোলেই হাতের ডানে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, যেখানে লেখা ডিবির হাওর বিশেষ বিজিবি ক্যাম্প। সেই রাস্তা ধরে এক কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে শাপলায় ছেয়ে থাকা ডিবির হাওর।

জায়গাটা ঠিক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। তাই মেঘালয়ের পাহাড়গুলো জায়গাটার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এখানেই ডিবির হাওর নিজেকে আলাদা করেছে শাতলার চেয়ে।

জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ডিবির হাওরে। হাওরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো জীর্ণ একটি মন্দির।

ডিবির হাওরে শাপলা থাকে মোটামুটি তিন থেকে চার মাস। নভেম্বর-জানুয়ারি গেলেই দেখা মিলবে এ অপরূপ সৌন্দর্যের। তবে এ জন্য যেতে হবে একদম সকাল সকাল। সূর্যের আলো শাপলার গায়ে পড়লে আস্তে আস্তে ফুলগুলোর পাপড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

সিলেট থেকে এখানে পৌঁছানো যায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। আমরা সিলেট থেকে সকাল সাতটায় রওনা দিয়ে আটটার দিকে ডিবির হাওরে পৌঁছাই। মোটামুটি  সাড়ে নয়টার মধ্যে গেলে জাগ্রত শাপলার দেখা মিলবে। ওরা ঘুমিয়ে গেলে কিন্তু তখন আর ডেকে তুলতে পারবেন না।

হাওরে নৌকায় ঘুরতে পারবেন। গেলে তো অবশ্যই নৌকায় উঠবেনই। ভাড়া নেবে ঘণ্টায় ৪০০ টাকা। এই ভাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া। মাঝারি সাইজের এক নৌকায় সাত থেকে আটজন ওঠা যায় অনায়াসেই।

যেভাবে যাবেন

বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে সিলেট। সিলেট থেকে সিলেট-তামাবিল রুটে চলাচলকারী বাস/লেগুনায় করে জৈন্তাপুরের একটু পরেই ডিবির হাওর লেখা ফলকের ওখানে নামবেন। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।

সিলেট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিলে আসা-যাওয়া ভাড়া নেবে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। সারা দিনের জন্য সিএনজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় পাওয়া যায়।