আমরা কবে মানুষ হব

বাংলাদেশ খুব সুন্দর একটি দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কমতি নেই। খাল, বিল, নদী, নালা, পাহাড়, সমুদ্রের কী নেই। নানা রকম পশু, পাখি প্রকৃতির অলংকার। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর কারণে এ দেশে সব হয়। সব রকমের ফসল, প্রাণীদের প্রয়োজনে বাংলাদেশ অনন্য। গড় তাপমাত্রা উৎপাদনে সহায়ক। যদিও দিন দিন আমাদের কারণে এ অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষই যত নষ্টের মূল। দিন কয়েক আগে সিলেট ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। পর্যটন জায়গাগুলোতে গিয়ে শিউরে উঠতে হয়েছে। ভাবছেন সুন্দর দর্শনীয় জায়গায় গিয়ে এমন অবস্থা কেন? তাহলে খুলেই বলি। সিলেটের সাদা পাথর, জাফরং, মাধবকুণ্ড, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়ায় মানুষের ফেলে দেওয়া বর্জ্যে অত্যন্ত নোংরা হয়ে গেছে। চিপসের প্যাকেট, জুসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট, শ্যাম্পুর প্যাকেট, সফট ডিংকসের বোতলসহ নানা রকম বর্জ্যে এক বিশ্রী অবস্থা।

প্রশ্ন হতে পারে, কেন এসব ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে যেখানে–সেখানে। উত্তর হলো, কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের কারণে। দুঃখের বিষয়, সব জায়গায় ডাস্টবিন আছে। ময়লা ফেলার পাত্র আছে। এ পাত্রের কাছেই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। দশ কদম দূরত্বও হবে না। এতটুকু হেঁটে না এসে যে বা যাঁরা ময়লা দর্শনীয় জায়গায় ফেলছেন, সৌন্দর্য নষ্ট করছেন, তাদেরকে কী বলা যায়? এসব জায়গায় যাঁরা ঘুরতে যান, তাদের বেশির ভাগ শিক্ষিত। কিন্তু কাজকর্ম অশিক্ষিত মানুষের চেয়েও খারাপ। তাঁদের বোঝানোর তো কিছু নেই। তাঁরা জানেন, ময়লা ডাস্টবিনে ফেলতে হয়। তারপরও এদিক সেদিক ফেলেন। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। তারা পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার জায়গা রেখেছে। সেখানে বাংলায় লেখাও আছে, ‘ময়লা এখানে ফেলুন’। সত্যি বলতে কি, আমরা এখনো মানুষ হতে পারিনি।

সত্যিকারের রুচিবোধসম্পন্ন মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। ব্যক্তির সচেতনতার এত অভাব কোথাও নেই। উন্নত দেশে মানুষ ময়লা ব্যাগে নিয়ে হেঁটে বেড়ায়। অতিদূরে গিয়ে ডাস্টবিন খুঁজে সেখানে ফেলে। তাদের বলতে হয় না, ময়লা এখানে ফেলুন। মাধবকুণ্ডসহ নানা জায়গায় দেখলাম। অতি উৎসাহী কিছু মানুষ কিছুই মানতে চায় না। দড়ি দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা আছে, এর বাইরে যাবেন না। বিপজ্জনক স্থান। কে শোনে কার কথা। দড়ি টপকিয়ে বিপজ্জনক স্থানে চলে যায়। ছবি তোলে নিজেকে বীর ভাবতে থাকে। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে তখন অন্যদের দোষ দিতে বিলম্ব হয় না মোটেও। এ ধরনের আচরণের পরিবর্তন চাই। মানুষ হতে হবে আমাদের। কাজে, কর্মে, আচারণে। প্রকৃতির সুন্দর দর্শনীয় জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই মহান দায়িত্ব।

*লেখক: মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বেসরাকারি প্রতিষ্ঠানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার