ইলিশের স্বাদ আর শীতের অনুভূতি পেতে যান মাওয়া ঘাট

মাওয়া ফেরিঘাট পর্যটকদের জন্য নদীভ্রমণ এবং ইলিশ ভোজনে জনপ্রিয় একটি জায়গা। মাওয়া ফেরিঘাটের পাড়ে রয়েছে বেশকিছু খাবার হোটেল। ইলিশ খাওয়ার জন্য অনেকেই মাওয়া ঘাটে ছুটে আসেন। এখানকার মাছের বাজারে ইলিশ ছাড়াও অনেক বাহারি প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়। মাওয়ার এই ফেরিঘাট সব সময় মেতে থাকে মেলার আমেজে।

ঢাকার কাছে হওয়ায় চট করে পদ্মা পাড়ের এই মাওয়া ফেরিঘাট হতে দিনে গিয়ে দিনেই ঘুরে আসা যায়। এক দিনের ভ্রমণ করার জায়গা হিসেবে অনেকের কাছে মাওয়া ঘাট জনপ্রিয় একটি স্থান। রুপালি জলের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে পাড় ধরে দূরে হেঁটে যাওয়া কিংবা পদ্মাপাড়ের শান্ত–সবুজ গ্রামের যান্ত্রিকতা ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আপনাকে আছন্ন করে রাখবে।

নৌকায় ঘুরে দেখতে পারবেন পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। তা ছাড়া ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সঙ্গে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কি আর অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব! আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পদ্মার বুকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পিড বোটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারেন (এটি ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও অনেকেই চলাচল করেন)।

যদি জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে খেতে চান, তবে আপনাকে অন্তত এক দিনের জন্য সকালের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া পৌঁছাতে হবে সকাল ৯টার মধ্যে। আর শুধু ইলিশ খেয়ে চলে আসা নেহায়েত বোকামি হবে, যদি নদীর পাড়ে বসে পদ্মার বিশাল জলের একটু উন্মাদনা না দেখেন। তার জন্য সেরা পরিকল্পনা হবে, মাওয়া ঘাট থেকে জনপ্রতি ২৫ টাকা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় লোহজং যেতে পারেন। সম্পূর্ণ অটোরিকশায় রিজার্ভ নিলে ১৫০ টাকা নেবে। সেখান থেকে নৌকায় যাবেন পদ্মা রিসোর্ট। রিসোর্টও দেখা হবে নৌকাভ্রমণও হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে সারা দিন অথবা রাতদিন থাকার ব্যবস্থা আছে রিসোর্টে। না থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই, শুধু এক্সট্রা ৫০ টাকা দিলেই ঘুরে দেখা যাবে সম্পূর্ণ রিসোর্ট।

আমাদের ভ্রমণ গল্প

মৃদুল ও মেহেদী অনেক দিন তাদের চাকরি পাওয়া উপলক্ষে ট্রিট দিতে চাচ্ছিল। তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছিল সবার সময় মিল ছিল না বলে। শুক্রবার রাত বাছাই করা হলো মাওয়া ট্রুরের জন্য। বাজেট ছয় হাজার টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই বলা হয়েছিল সংসদ ভবনের সামনে রাজধানী স্কুলের এখানে মামার চায়ের দোকানে যেখানে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া হতো, সেখানে ৯টার মধ্যে চলে আসবে সবাই। কিন্তু চাইলে এমনটা হয় না। এটাই স্বাভাবিকের মধ্যে ওমর চলে গেল আর্মি স্টেডিয়ামে কোকাকোলার কনসার্টে। সেখান থেকে ফিরতে সাড়ে ১০টা। সবাই অপেক্ষা করছে ওমরের জন্য।

বাকি সবাই মোটামুটি চলে আসছে। চারটা মোটরসাইকেলে আটজন যাওয়ার পরিকল্পনা। নাহিদ, ইমরান, ওমর এবং এক বড় ভাইয়ার বাইকসহ আটজন যাব। ওমর এলে আমরা মোটরসাইকেলে পেট্রল ভরে রওনা দিলাম মাওয়ার উদ্দেশে। আজমপুর থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন আরেক ভাই। রাতের শহর অন্য রকম একটা অনুভূতি।

ঢাকায় কিছুটা গরম থাকলেও মাওয়াতে আমরা শীতকালের শীত উপলব্ধি করেছি। মাওয়া পৌঁছে প্রথমে রুপশি বাংলা হোটেল থেকে ইলিশ ভাজা, ইলিশ মাছের ভর্তা, বেগুনভাজি দিয়ে রাতের খাবার শেষ করলাম। ঘাটে টি স্টল থেকে চেয়ার ম্যানেজ করে গোল হয়ে বসে আগুন জ্বালিয়েছি, রাতভর আড্ডা গান আর ঘুরাঘুরি করলাম। কিছু বিষয় দেখে বিস্মিত হয়েছি। এখানে যে আমরাই এসেছি, তা কিন্তু নয়।

অনেক মানুষের সমাগম। এখানে অনেকটা মেলার মতো। সব কিছুই আছে যেমন, চরকি, মেয়েদের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে বসে থাকা অস্থায়ী দোকান, যেমন চুড়ি, টিপ, আরও অনেক কিছু। কিছু ছেলে মেয়েদের দেখা গেল, যাঁরা বসিয়েছে আড্ডা–গান।
পাশে আছে নৌকা। সেগুলোতেও অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে থেকে ঐদিকে নদীর মধ্যে উপভোগ করছে নদীর সুন্দর রাত। কিন্তু তবুও নেই মানুষের অভাব। দেখে মনে হবে রাত্রপুরী যেখানে সবাই রাতে জেগে থাকে।

ফেরার পথেও চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সকাল ছয়টায় বাসায় পৌঁছাই। এত সুন্দর একটা ভ্রমণ উপহার দেওয়ার জন্য বন্ধু মৃদুল ও মেহেদীকে ধন্যবাদ জানাই আমরা। যাঁরা ঢাকায় আছেন, শীতকাল খুব মিস করছেন, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন মাওয়া ঘাট। যদিও এখন ঢাকায়ও শীত কমে এসেছে। তবে শীতের তীব্র অনুভূতি উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে মাওয়া ঘাট।

মাওয়া ঘাট যাওয়ার উপায়

সকালে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে বাস এ মাওয়া ঘাটে চলে যাবেন। ভাড়া ৭০ টাকা বিআরটি সি/ইলিশ পরিবহন। মিরপুর ১০, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহনে। গুলিস্তান থেকে বিআরটিসি এসি পাবেন। ঘণ্টা খানেকের একটু বেশি সময় লাগতে পারে ঘাট এ পৌঁছাতে। চাইলে পদ্মা পারি দিতে পারেন লঞ্চ, ফেরি কিম্বা স্পিডবোটে। ভাড়া পড়বে ৩৫, ২০, ১৫০ টাকা। সময় লাগতে পারে ২ ঘণ্টা, ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট  অথবা ৩০ মিনিট যথাক্রমে।

কোথায় খাবেন

পদ্মার ওপাড়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে হোটেলগুলোয় ইলিশ আর গরম ভাত দিয়ে ভুড়িভোজ করতে পারেন। তবে খাবার আগে ইলিশের ফেনা ওঠা গরম তেল আর শুকনা মরিচ দিয়া ভাত মাখিয়ে নিতে ভুলবেন না। ইলিশ ভাজা ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকা সাইজ ভেদে, ভাত ১০ টাকা শুকনা মরিচ ফ্রি। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার একই রাস্তায় ফেরত আসবেন ঢাকায়।

লেখক: তৌফিক সুলতান