প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় জেলা কিশোরগঞ্জ
এক দিনের ঝটিকা সফরে বড় ভাইদের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় জেলা কিশোরগঞ্জ ভ্রমণ। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত ১০টায় আমরা রওনা হলাম। রাতের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া ও কুয়াশাঘেরা পরিবেশে ২ ঘণ্টা পর আমরা বিরতি দিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের খাটিহাতার একটি হোটেলে। রাতের খাবার ও চা-বিরতি শেষে কিশোরগঞ্জ শহরে পৌছালাম ২০ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে। আগে থেকেই আমরা উজান–ভাটি নামক একটি হোটেল ঠিক করে রেখেছিলাম। রুমের চাবি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে উঠে বেরিয়ে পড়লাম আশেপাশের স্থাপনা দেখতে।
গুরুদয়াল কলেজ, কিশোরগঞ্জ স্টেশন, কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়াম, ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদ, কিশোরগঞ্জ শহর দেখার পর প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা হোটেলে ফিরলাম। গাড়িতে করে রওনা দিলাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে, সে স্থান থেকে আমরা চলে গেলাম বারভূইয়াদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ঈসা খাঁর বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে জঙ্গলবাড়ি নামে পরিচিত।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে নরসুন্দা নদীর পাশ দিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই ঐতিহাসিক স্থানে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ স্থানটিকে সংস্কার করেছে, এর পাশেই রয়েছে একটি শাহি মসজিদ যা ঈসা খাঁ প্রতিষ্ঠা করেছেন স্থানীয় মুসলমানদের নামাজের জন্য। অন্যদিকে রয়েছে একটি দিঘি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পুরাতন এ স্থাপনার ঠিক পেছনেই ঈসা খাঁর বর্তমান বংশধর। করুণ জীবনযাপন করছেন তাঁরা ঝুকিপূর্ণ ভবনে। ইতিহাস ঐতিহ্যের এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি আরও সংস্কার এবং এখানে একটি আধুনিক পাঠাগার নির্মাণ হোক এ প্রত্যাশা করছি। এবার আমরা আমাদের উজান-ভাটি হোটেলে গিয়ে সবার ব্যাগগুলো নিয়ে আমাদের গাড়িতে রাখলাম। এবার যে মূল উদ্দেশ্যে এখানে আসা তা হলো বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাগলা জামে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করা সবাই একসাথে। তখন বাজে বেলা ১১টার মধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে এ মসজিদের মূল স্থাপনার ভেতরের স্থানগুলো।
প্রতি শুক্রবার পাগলা জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা স্থান। অবাক করার বিষয় হচ্ছে এখানে নামাজ শেষে দানবাক্সে আগত সবাই তাঁদের মনের আশা পূরণের জন্য যে যাঁর ইচ্ছামতো দান করে এখানে। প্রতি তিন মাস পরপর এ দানবাক্সগুলো খোলা হয় এলাহি আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সাতটি বিশাল বিশাল দানবাক্সে প্রায় ২৭-২৮ বস্তা টাকা হয় প্রতিবার গণনা করার সময়। স্থানীয় জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী, র্যাব, ব্যাংক কর্মকর্তা ৭০ জন, পুলিশ, মাদ্রাসার ২০০ শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, মসজিদ স্টাফসহ অনেকে এ আয়োজনে উপস্থিত থাকেন। মসজিদের পাশেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সেতু যা এ স্থাপনাটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে।
মসজিদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম আগত আমার সফরসঙ্গী বড়ভাই মো. মজিবুর রহমান খোকন, মো. হুমায়ুন কবির মজুমদার, মো. সুমন গাজি, মো. মিজানুর রহমান, মো. সবুজ, মো. কবির হোসেন, মো. মিন্নত আলী আমরা সকলে, তারপর নামাজ আদায় করে বের হলাম। দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আগত হাজারো মুসল্লিদের এ যেন এক মিলনমেলা। আমরা চলে গেলাম আমাদের পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে। দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিলাম আমাদের কুমিল্লার উদ্দেশে। পথে আমরা চা-বিরতি এবং কুমিল্লা শহরের মিয়ামি রেস্টুরেন্টে রাতে খেয়ে আমরা বাড়িতে ফিরলাম।
এক দিনের সফরে আমরা যা যা দেখলাম—
১. ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
২. ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদ
৩. ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
৪. ঐতিহাসিক স্থাপনা ঈসা খাঁর বাড়ি (জঙ্গলবাড়ি)
৫. গুরুদয়াল কলেজ
৬. নরসুন্দা নদী ও বিবিধ।
লেখক: ফিরোজ হোসেন ফাইন, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট।
**নাগরিক সংবাদ-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]এ