মৈনাক পাহাড়ে, মহেশখালীর বাঁকে বাঁকে

মহেশখালীর বাঁকছবি: লেখক

মহেশখালী নাম শুনলেই শিহরণ জাগে। যাব যাব করে কয়েকবার চকরিয়া সীমান্ত থেকেই ফিরে এসেছি কয়েকবার। এবার প্রতিজ্ঞা করলাম, কক্সবাজার যাওয়ার আগে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক ও মহেশখালী যাবই। কথামতো মহেশখালীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মহেশখালীর বাঁক নিয়ে অনেক কথা ও ইতিহাস শুনি। ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় নামি। চকরিয়া থেকে মহেশখালী যেতে তাই রোমাঞ্চকর লাগছিল। পরে মহেশখালীর চ্যানেল দিয়ে স্পিডবোটে মাত্র ১৬ মিনিটে কক্সবাজার জেটিঘাটে পৌঁছাই।

৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটারের মহেশখালী দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ।৩টি ছোট ছোট দ্বীপ—সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী আর ধলঘাটা নিয়ে ১৯৮৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। জানা যায়, ১৫৫৯ সালের এক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ দ্বীপ গঠিত হয়।

মহেশখালীতে পাহাড়ের চূড়ায় (সাগরতীরের কাছেই) আদিনাথ মন্দির। এটি মৈনাক পাহাড়ে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮৮ ফুট উচ্চতায়। এ কমপ্লেক্সে একটি মসজিদ এবং একটি রাখাইন মন্দির আছে। এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। এখানে ছোট্ট বাজারও আছে।

মহেশখালী চ্যানেল
ছবি: লেখক

মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় দর্শনীয় আদিনাথ মন্দির। সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরে উঠলাম। পাশেই গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। তার পাশেই সাগরতীরে সবুজ বনাঞ্চল। নিরিবিলি ও মনোরম জায়গা। মন্দিরসংলগ্ন ছোট্ট বাজার। বৌদ্ধধর্মের ও অন্যান্য ধর্মের ছেলেমেয়েদের কেনাবেচা করতে দেখা যায়। বিভিন্ন কাপড়, হস্তশিল্প, এখানকার ঐতিহ্যগত জিনিস, আচারও বিক্রি হচ্ছে। কোলাহল নেই। বিশেষ দিনগুলোতে লোকসমাগম হয় বলে জানা যায়। এখান থেকে সবুজ বন পেরিয়ে ঘাটে যাওয়া যায়। শুধু পর্যটকদের জন্য এখান থেকে নিয়মিত বোট চলাচল করে না, স্পেশাল বোট চলে। জেলেদের লঞ্চ চলাচল করে। মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। এটি সবুজে মোড়ানো নান্দনিক ট্যুরিস্ট স্পট।

কক্সবাজার বা বিভিন্ন দ্বীপে যেতে শহরের কাছেই গোরকঘাটা জেটিঘাটে যেতে হবে। এখানকার মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে জলপথে মাত্র ১৬-১৮ মিনিটে কক্সবাজার যাওয়া যায়। স্পিডবোটে ভাড়া ১১০ টাকা। ছোট ট্রলারেও যাতায়াত করা যায়। ভাড়া কম হলেও সময় অনেক বেশি লাগে, ঝুঁকি থাকে।

আদিনাথ মন্দির
ছবি: লেখক

মানুষের কোলাহল মিশে যায় পাখির কলতানে। জেটিঘাটে পাখির ঝাঁক মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করে। বাঁকে বাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে চিল, গাঙচিল, শালিকসহ নাম না জানা পাখির কলরব আর ওড়ার দৃশ্য এ ভ্রমণের মূল আকর্ষণ বলে আমার মনে হয়েছে। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড স্রোতের ধাক্কা স্পিডবোটে বড় দুলুনি দেয়। নতুনদের জন্য প্রথম জলপথের এ ভ্রমণ ভয়ংকর মনে হবে। তবে একটু পরই মনে হবে, আসলে ভয়ের কিছুই নেই। বরং জলের এ ধাক্কা রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেবে। বলে রাখি, মহেশখালীর মানুষের জন্য জেলাশহর কক্সবাজার যাওয়ার এ পথই কম সময়ের, কম খরচের। অন্যথায় চকরিয়া হয়ে অনেক ঘোরা পথ। ভেঙে ভেঙে যেতে সময়ও লাগবে তিন ঘণ্টার বেশি।

বোট থেকে পাখির ঝাঁক
ছবি: লেখক

থাকা-খাওয়া
মহেশখালী শহরে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা খুব মানসম্মত হবে না। চকরিয়া বা কক্সবাজারে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। কক্সবাজারে থাকা ও খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মান ও দামের ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে আবার সৈকত দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।

যাতায়াত
ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী অনেক পরিবহন পাবেন। ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে বাসে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। কক্সবাজার যাওয়ার প্রায় ৬০ কিলোমিটার আগেই চকরিয়া। এখানে নেমে  সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে মহেশখালী যাওয়া যাবে। যাওয়ার পথে পাহাড়ি এ দ্বীপের বিভিন্ন সৌন্দর্য এবং জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে। চট্টগ্রাম থেকে বাসেও মহেশখালী যাওয়া যাবে। সায়েদাবাদ থেকে সৌদিয়া ও শ্যামলী কোম্পানির মহেশখালী যাওয়ার সরাসরি রাতে বাস আছে। ভাড়া এক হাজার টাকা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার গেলে শ্রেণিভেদে এক হাজার থেকে শুরু।