মরক্কো ও মিসর: জ্ঞান, সংস্কৃতি ও স্বাদের ভ্রমণ–প্রথম পর্ব
মানুষের জীবনে কিছু ভ্রমণ থাকে শুধুই আনন্দের, কিছু থাকে শেখার জন্য। আবার কিছু ভ্রমণ থাকে এমন, যা কেবল ভ্রমণ নয়—জ্ঞান, সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার এক অনির্বচনীয় মেলবন্ধন। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে আমি এমনই এক ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম—ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে। এটি সেই ধরনের আয়োজন, যা প্রতি চার বছরে একবার হয়; একধরনের বিশ্ব সম্মেলন, যেখানে হাজারো গবেষক একত্র হন; সমাজ, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও মানুষের সম্পর্ক নিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ বিনিময় করেন। আমার মূল গন্তব্য ছিল সম্মেলনের শহর মরক্কোর রাজধানী রাবাত, যেখানে যাওয়ার আগে প্রথমে গিয়েছি কাসাব্লাঙ্কা, তারপর সম্মেলন শেষ করে গিয়েছি ইতিহাসের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা মিসরের কায়রো।
যাত্রা ঢাকা থেকে কাসাব্লাঙ্কা: ইতিহাসের পথে
আমার যাত্রা শুরু হলো ঢাকা থেকে। গন্তব্য উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো (যাকে একসময় বলা হতো আফ্রিকার প্রবেশদ্বার), যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্মেলন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতের আকাশ তখন সবে আলোকিত হতে শুরু করেছে। আমার গালফ এয়ার-এর বাহরাইন হয়ে কাসাব্লাঙ্কার ফ্লাইটটি বিমানবন্দর ছেড়ে যখন বাহরাইন পৌঁছাল, তখন আরব সাগরে রাতের নিস্তব্ধতা। বিমানবন্দরে নামতেই দেখলাম পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলার ছাপ। ঘণ্টা দুয়েক বিরতির পর আবার বোর্ডিং—এইবার দীর্ঘ পথ, কাসাব্লাঙ্কা যা আফ্রিকার অন্যতম বন্দরনগরী, ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিকের সংযোগস্থল। বাহরাইন হয়ে যখন কাসাব্লাঙ্কার দিকে উড়াল দিচ্ছিলাম, বিমানের নিচে আফ্রিকার সোনালি মরুভূমি, দূরে আটলান্টিকের নীল জল। মনে হচ্ছিল ইতিহাসের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ ফ্লাইটের পর কাসাব্লাঙ্কার মোহাম্মদ-৫ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এ যখন নামলাম, সকালের সূর্যের প্রথম আলো তখন বিমানের ডানার নিচে পড়ছে। মরক্কোর বাতাসে একধরনের মসলাযুক্ত উষ্ণতা—যেন দারুচিনি, লবঙ্গ, আর মরুভূমির ধূলিকণার মিশ্রণ। ইমিগ্রেশন অফিসার হালকা হাসলেন, পাসপোর্টে সিল মারতে মারতে বললেন, “Welcome to Morocco!”
কাসাব্লাঙ্কা: আধুনিকতার মাঝে ঐতিহ্যের ছোঁয়া
দুই দিন সময় পেয়েছিলাম কাসাব্লাঙ্কা ঘুরে দেখার। শহরের নাম ‘কাসা-ব্লাঙ্কা’মানে ‘সাদা ঘর’। কিন্তু বাস্তবে এটি এক বর্ণিল শহর—ইউরোপীয় আধুনিকতা আর আরবীয় ঐতিহ্যের মিশেল, রাস্তায় ফরাসি ও আরবি ভাষার সাইনবোর্ড পাশাপাশি। প্রথম গেলাম আরব লিগ পার্কে। শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, বিশাল তালগাছের ছায়ায় বসে অনুভব করলাম শহরের শ্বাসপ্রশ্বাস। এরপর মোহাম্মদ-৫ স্কয়ার ও ইউনাইটেড নেশনস স্কয়ার—এই দুটো জায়গা যেন আধুনিক কাসাব্লাঙ্কার হৃৎস্পন্দন। চারপাশে ফরাসি উপনিবেশকালীন স্থাপত্য আর ঝকঝকে ট্রামলাইন।
একদিন বিকেলে গেলাম কাসবাহ অব দ্য উদায়স-এ। এটি একটি প্রাচীন দুর্গ, যা ১২০০ শতাব্দীতে নির্মিত। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, নিচে নীল জল আটলান্টিক মহাসাগর। দুর্গের গলিগুলো সাদা আর নীল রঙে রাঙানো, দেয়ালের পাশে ফুলের টব, আর দূর থেকে ভেসে আসছে সাগরের গর্জন।
পরের দিন সকালে গেলাম হাসান-২ মসজিদে—বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা অনুপম স্থাপত্যের মহিমা এই মসজিদটির সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। আটলান্টিক মহাসাগরের ঢেউ যেন মসজিদের পাথরে ছুঁয়ে যায়। ঢেউয়ের শব্দ আর আজানের ধ্বনি মিশে এক অপার্থিব আবহ তৈরি করে। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি মনে করিয়ে দিল, ইসলাম শুধু ধর্ম নয়—এখানে এটি সংস্কৃতি, শিল্প আর ইতিহাসেরও অংশ। ভেতরে প্রবেশ করতেই অনুভব করলাম একধরনের আধ্যাত্মিক শীতলতা। কাঠের খোদাই, মার্বেলের নকশা, রঙিন টাইলস—সব মিলিয়ে এটি স্থাপত্যকলার এক অসাধারণ নিদর্শন।
দুপুরে স্থানীয় রেস্তোরাঁয় খেলাম মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী খাবার তাজিন (Tajine)—মাটির পাত্রে ধীরে রান্না করা মেষের মাংস, আলু, জলপাই আর শুকনা লেবুর মিশ্রণ। রাতের কাসাব্লাঙ্কায় স্বাদ নিলাম মরক্কোর আরেক ঐতিহ্যবাহী খাবার কুসকুস (Couscous)—গমের দানার তৈরি পুষ্টিকর খাবার। এর সঙ্গে মরোক্কান পুদিনা চা (Mint Tea), যা পরিবেশন করা হয় একরকম শিল্পের ভঙ্গিতে। উঁচু থেকে চায়ের কেটলি থেকে চা ঢালা হয় ছোট কাচের গ্লাসে, আর ওপরে ভাসে তাজা পুদিনা–পাতা। এক চুমুকে মুখে মিশে যায় মিষ্টতা আর তাজা ঘ্রাণের ভারসাম্য। মরক্কোর রান্নায় মসলার সুষম ব্যবহার, গন্ধ ও রঙের সমন্বয় সত্যিই অনন্য। রাতের কাসাব্লাঙ্কা আলোকিত—বন্দর এলাকার আলো, সংগীত, গাড়ির হর্ন, হাসির শব্দ সব মিলেমিশে একাকার। এ শহর আসলে এক প্রতীক—আফ্রিকা ও ইউরোপের, প্রাচীন ও আধুনিকতার, ধর্ম ও আনন্দের এক মেলবন্ধন।
কাসাব্লাঙ্কা থেকে রাবাত: ট্রেনের জানালায় ভেসে ওঠা মরুভূমি
তৃতীয় দিনে কাসাব্লাঙ্কার কাসা ভোয়াগ্রেরাস রেলস্টেশন থেকে যাত্রা করলাম রাবাতের উদ্দেশে। রেলস্টেশনটি পরিচ্ছন্ন ও ব্যস্ত—ফরাসি ধাঁচে নির্মিত। ট্রেনে উঠেই মনে হলো ইউরোপের কোনো রেলপথে বসে আছি। যাওয়ার পথে জানালার বাইরে দিয়ে দেখা যাচ্ছিল সোনালি মরুভূমি আর খেজুরগাছের সারি। দেড় ঘণ্টার পথ, কিন্তু প্রতিটি মিনিট যেন নতুন এক দৃশ্যপট। ট্রেনের কামরায় পাশের সিটে বসেছিলেন এক তরুণ মরোক্কান গবেষক। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনিও রাবাত যাচ্ছেন সম্মেলনে অংশ নিতে। কথায় কথায় জানতে পারলাম, মরক্কোতে সমাজতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে—বিশেষত শহুরে পরিবর্তন, নারী অধিকার ও ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
রাবাতে ট্রেন থেকে নামতেই মনে হলো—এ শহর কাসাব্লাঙ্কার মতো চঞ্চল নয় বরং শান্ত ও পরিচ্ছন্ন এবং শিক্ষিত ও পরিপাটি। শহরটির নীরব সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল, এখানে প্রতিটি রাস্তায় একধরনের আত্মমগ্নতা আছে। আটলান্টিকের তীরে অবস্থিত মরক্কোর এই প্রশাসনিক রাজধানী যেন মরক্কোর হৃৎস্পন্দন। এখানে রাজপ্রাসাদ (Royal Palace of Rabat), সংসদ, বিশ্ববিদ্যালয়, পুরনো দুর্গ, বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা ও আধুনিক স্থাপত্য আছে। রাবাত ভিলে রেলস্টেশন থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে দেখলাম রাস্তার দুই পাশে খেজুরগাছের সারি, মাঝে মাঝে ফরাসি স্থাপত্যের প্রভাব—সাদা দালান, সবুজ জানালা, আর তাদের গায়ে নীল আকাশের প্রতিফলন।
সম্মেলনের দিনগুলো: বিশ্বের সমাজবিজ্ঞান এক ছাদের নিচে
সম্মেলনের কারণে রাবাতে ছয় দিন ছিলাম। সম্মেলনের আয়োজন ছিল মোহাম্মদ-৫ বিশ্ববিদ্যালয়–এর বিশাল ক্যাম্পাসে। প্রথম দিন বিকেলেই রেজিস্ট্রেশন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে মনে হলো যেন এক বিশ্বনগরে ঢুকেছি, বিভিন্ন দেশের পতাকা বাতাসে দুলছে। সম্মেলনে ১১২ দেশের প্রায় ৬০০০ গবেষক ও অধ্যাপক অংশ নিয়েছেন। রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছেন—ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, স্প্যানিশ, ইত্যাদি। এ যেন এক বিশ্বমানব পরিবারের সমাবেশ। আমার নাম দেখে এক তরুণী হেসে বললেন, ‘Oh, Bangladesh! Welcome, professor!’ সেই মুহূর্তে দূর দেশে নিজের দেশের নাম শুনে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত গর্বের ঢেউ উঠল।
আমি আমার প্রবন্ধ উপস্থাপন করলাম ‘খাদ্য নিরাপত্তায় অভিবাসনের প্রভাব’ বিষয়ে। সেশনে আমি ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির গবেষকেরা। উপস্থাপনার পরপরই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়—বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি, প্রবাসী আয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সম্পর্ক নিয়ে। আমি বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলাম বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব—কীভাবে অভিবাসন শ্রমঘাটতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলে। এই সম্মেলনে দেখা হলো অভিবাসন গবেষণার দুই বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব—জার্মানির বিখ্যাত অভিবাসন গবেষক থমাস ফেইস্ট ও সোসিওলজি অব মাইগ্রেশন রিসার্চ গ্রুপ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লরা মেরলা-এর সঙ্গে। তাঁরা বাংলাদেশের অভিবাসন চর্চা ও নীতিমালার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন। অর্থনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এল বাংলাদেশে অভিবাসনের নেতিবাচক সামাজিক প্রভাব-এর বিষয়।
রাবাতের রূপ: ইতিহাস, নীল আকাশ আর আটলান্টিকের ঢেউ
সম্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে সময় বের করে রাবাত শহর ঘুরে দেখেছি। এক সন্ধ্যায় পা রাখলাম ওল্ড মেদিনা-য়। সরু গলি, রঙিন দরজা, কারুকাজ করা কাঠের জানালা আর দোকানে সাজানো মসলার সুবাসে পুরো পরিবেশ যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তার পরের গন্তব্য ছিল হাসান টাওয়ার, যার ইতিহাস ১২০০ শতকের। বিশাল লালচে পাথরের কাঠামোটি রৌদ্রের আলোয় ঝলমল করছিল। এর পাশে অবস্থিত মোহাম্মদ-৫–এর সমাধি—যেখানে স্থাপত্য ও শিল্পকলার চমৎকার সংমিশ্রণ চোখে পড়ে। রাজপরিবারের সমাধি সৌধটি যেন মর্যাদা ও নীরবতার প্রতীক। সাদা মার্বেল, সবুজ টাইলস, সোনালি গম্বুজ আর কারুকাজে ভরা ছাদের সৌন্দর্য একে অনন্য করেছে। বাইরে দাঁড়িয়ে রাজকীয় প্রহরীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পাহারা দিচ্ছে—রঙিন পোশাক, হাতে তলোয়ার, মুখে নিস্পৃহ শান্তি।
সেদিন আশপাশে দেখার মতো আর কী আছে, তা গুগল ম্যাপ-এ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম কাছেই মরক্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস। ভাবলাম যাই একটু ঘুরে আসি নিজের দেশের দূতাবাস থেকে। মনের গহিন কোণে আশা ছিল যদি একটু ডাল-ভাত খেতে পারি! কারণ বেশ কয়েক দিন হলো দেশীয় খাবার বলতে যা বুঝায় তা খেতে পাইনি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা হলো, তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের বর্তমান উন্নয়ন চিত্র ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করেন। তাঁর আন্তরিক অভ্যর্থনা আর বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনায় বিদেশের মাটিতে একধরনের আপন পরশ পেলাম। কিন্তু মনের আশা পূর্ণ হলো না, ডাল-ভাত আমার কপালে ছিল না! নাশতা পরিবেশন করার সময় রাষ্ট্রদূত নিজে থেকেই বললেন, ‘দুঃখিত, আপনাকে একটু ডাল-ভাত খাওয়াতে পারলাম না। আমি মাত্র কয়েক দিন হলো এখানে এসেছি, তাই এখনো সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারিনি!’
একদিন বিকেলে গেলাম কাসবাহ অব দ্য উদায়স–এ। এটি একটি প্রাচীন দুর্গ, যা ১২০০ শতাব্দীতে নির্মিত। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, নিচে নীল জল আটলান্টিক মহাসাগর। দুর্গের গলিগুলো সাদা আর নীল রঙে রাঙানো, দেয়ালের পাশে ফুলের টব, আর দূর থেকে ভেসে আসছে সাগরের গর্জন। দুর্গের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট ক্যাফেতে বসে খেলাম সেই পুদিনা–চা, যেটা বারবার খেতে ইচ্ছা করে এবং বারবার খেতে হয়। কারণ মূল খাবারের সঙ্গে প্রায় সব সময় এই পুদিনা–চা পরিবেশন করা হয়। চায়ের কাপের ভেতর চোখ রেখে দেখছিলাম দূরের নীল সমুদ্র, কখন যাব সেই আকুলতা মনে। ভাবছিলাম এই সাগরই হয়তো একদিন পর্তুগিজ, ফরাসি ও আরব বণিকদের বহন করেছিল—সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের তরঙ্গে ভাসিয়ে। তারপর শেষ বিকেলে নেমে পড়লাম আটলান্টিক মহাসাগরের জলে। সূর্যাস্তের সময় ঢেউয়ের গর্জন যেন হৃদয়ে বাজে। সূর্য যখন ধীরে ধীরে সাগরে ডুবে যাচ্ছিল, বাতাসে লবণের ঘ্রাণ মিশে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এই ঢেউগুলো যুগ যুগ ধরে সভ্যতার সাক্ষী। সন্ধ্যার পরে আটলান্টিকের ধারে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। সমুদ্রের ঢেউ এসে বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছিল পাথরের দেয়াল। দূরে জাহাজের আলো টিমটিম করছিল। মনে হলো এই ঢেউগুলোই হয়তো শতাব্দী ধরে সভ্যতার গল্প বহন করছে—ফিনিশীয়, রোমান, আরব, ফরাসি—সবাই এসেছে, আবার চলে গেছে, কিন্তু সাগর রয়ে গেছে অনন্ত সাক্ষী হয়ে। চলবে... (দ্বিতীয় পর্বে শেষ হবে)
*লেখক: কাজী ফরিদ, অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।