ছবির মতো সুন্দর দেশ সুইজারল্যান্ডে যা যা দেখলাম
সুইজারল্যান্ডের ছোট একটি শহর জেনেভা। ছোট শহর হলেও এ শহরটি গুরুত্বের দিক থেকে অন্যতম। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার অফিস ও সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত। যেমন ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশনের সদর দপ্তর, বিশ্বের বিজ্ঞানীদের রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিশ্ব আবহাওয়া দপ্তর। রেডক্রসের সদর দপ্তর, আইএলও, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সদর দপ্তর, মূলত বিশ্ব সম্মেলনের ক্ষেত্রে জেনেভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিটি। সুইস চকোলেট, সুইস ঘড়ি এবং সুইস ব্যাংকখ্যাত সুইজারল্যান্ড সত্যিই অভূতপূর্ব। জেনেভা সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর। জেনেভা বিশ্বব্যাপী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরও কেন্দ্রবিন্দু এবং অনেক সময়ই এটিকে গ্লোবাল সিটি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ফ্রান্সের দ্রুততম ট্রেন টিজিভি ডুপ্লেক্সে (যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে থাকে) করে সুইজারল্যান্ডের সুন্দর ও ছবির মতো চমৎকার শহর জেনেভায় মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাই। পর্যটক বাসে করে জেনেভা শহর ঘুরতে সময় লাগে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়াম ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিই। টিজিভি ট্রেনে আমার এই প্রথমবারের মতো সফর ছিল। দ্রুতগামী এ ট্রেন সংযুক্ত করেছে ফ্রান্সের প্রধান শহরগুলো ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের রাজধানীকে। এ ট্রেন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম। ফলে ওজন কমেছে। প্রতিটি বগি এতটাই সহনশীল, সর্বোচ্চ গতিতে চলাচলের সময় একটি টিজিভি ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত হলে এর বগিগুলো একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যাবে না। ফ্রান্সের এসএনসিএফ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এ ট্রেন ২০১১ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করছে। বর্তমানে প্রচুর ঠান্ডার শহর জেনেভা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জাঁকজমকপূর্ণ এ শহরটিতে মানুষের আতিথেয়তা সবাইকে মুগ্ধ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জেনেভা শহরে প্রায় ৩ লাখ লোকের বসবাস। তাঁদের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক বাংলাদেশি। তাঁদের প্রায় সবাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, শপিং মলে কর্মরত এবং অনেক বাংলাদেশি ভালো চাকরির খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে আমজাদ চৌধুরী নামের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের অধিবাসী জেনেভা শহরে বোম্বে রেস্তোরাঁ, বোম্বেজি গ্লাস ও কারি হাউস নামে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ব্যবসার পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রধান হিসেবে দেশি মানুষের কল্যাণে একসময় অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছেন। লেক লেমন জেনেভা শহরের পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা। তবে এখন জেনেভায় তীব্র শীত এবং বরফ পড়ছে। চোখে দেখে এসেছি গুঁড়ি গুঁড়ি বরফের বৃষ্টি পড়ছে, আবার নিমিষেই শেষ। এ সময় রৌদ্র বেশ উপভোগ্য। দেশটিতে কোনো অপরাধ বলে কিছু নেই। শান্তির দেশ, তবে অবৈধদের থাকার তেমন কোনো সুযোগ নেই। সারা সুইজারল্যান্ডে ৭–৮ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন।
আশার আলো এই যে জেনেভা শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্থাপিত ‘বাংলা পাঠশালা’ নামে সোনামণিদের একটি স্কুল রয়েছে। যার তত্ত্বাবধানে প্রবাসী মাহবুবুর রহমান, শাহাদাত, রিয়াজুল হক ফরহাদ, হোসেইন প্রমুখ রয়েছেন। বাংলায় লেখাপড়া ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি এ স্কুলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়ে থাকে। জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ডে কোনো দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। ফ্রান্সের আলমাস শহর জেনেভার নিকটতম সীমান্ত শহর। তবে গ্রীষ্মকাল সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করার জন্য চমৎকার সময়। বলে রাখা ভালো, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে সৌন্দর্যময় দেশ এর প্রাকৃতিক দৃশ্যে ইউরোপের সব দেশকে হার মানায়। পাহাড়, পর্বত, লেক, ভ্যালি এবং আলপাইন বনাঞ্চল ঘেরা এই দেশটিকে আল্লাহ যেন সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন।
জেনেভা শহর থেকে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে জুরিখ, বার্ন, ব্রাসেল, লজান শহর থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়ার যেকোনো শহরে বাস-ট্রেনে যাতায়াত করা সহজ। জেনেভা শহরের চতুর্দিকই হচ্ছে মনোরম। প্রতিটি প্রান্ত চোখজুড়ানো। ভ্রমণের ক্ষেত্রে দর্শনীয় স্থানগুলো বাছাই করা মুশকিল। জেনেভার লেক চমৎকার ও বিশাল; এ ছাড়া প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে ভরপুর জেনেভা শহর। ভ্রমণ যেন শেষ হতে চায় না। যদি কোনো সময় জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ড সফরে আসেন তবে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য ভালো সময়। সুযোগ ও সময় করে দেখে আসুন না জেনেভা শহর বা গোটা সুইজারল্যান্ড। তবে দেশটি কোনোভাবেই ভুলে থাকার নয়।
*মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী, ভ্রমণপিপাসু