ঘুরে এলাম পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত

সৈকতে লেখকছবি: লেখকের পাঠানো

দেশের ভ্রমণপিপাসু অনেকের প্রথম পছন্দের জায়গা হলো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর লাখো পর্যটক ঘুরতে যান পর্যটননগরী কক্সবাজারে। সাধারণত শীতের মৌসুমে পর্যটকদের সমাগম বেশি হয়। রুটিনমাফিক ক্লান্তিমাখা জীবনকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়ার জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দিলাম। কক্সবাজারে পর্যটকেরা সাধারণত কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী, হিমছড়ি অথবা মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। তবে এবার আমাদের ভ্রমণতালিকায় ছিল পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত। কয়েক বছর ধরে পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইজিবাইক ভাড়া করে পাটুয়ারটেকের উদ্দেশে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।

সৈকতে মানুষের আনাগোনা
ছবি: লেখকের পাঠানো

মেরিন ড্রাইভ ধরে এগিয়ে চলেছে আমাদের গাড়ি। ডান পাশে নীল সমুদ্র আর বাঁ পাশে পাহাড়ের সারি। সব মিলিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের মেরিন ড্রাইভের এই ভ্রমণপথ মনকে ভালো করে দিতে বাধ্য। মেরিন ড্রাইভ ধরে এগোতে এগোতে বেশ কয়েকটি প্যারাসেইলিং পয়েন্ট চোখে পড়ল। সেখানে অনেককেই প্যারাস্যুটে চড়ে নীল সমুদ্রের ওপরে ভেসে বেড়াতে দেখলাম। হিমছড়ি, লাল কাকড়ার সৈকত, রিজু খাল পার হয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে। রিজু খালের ওপরে ব্রিজে নির্মাণকাজের কারণে কিছুটা সময় বসে থাকা লাগলেও রিজু খালের সুন্দর নীলাভ রঙের পানি দেখে আমাদের মন ভরে গেল। অবশেষে ইনানী সৈকত অতিক্রম করে প্রায় দেড় ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে আমরা পৌঁছে গেলাম পাটুয়ারটেক।

তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। সৈকতজুড়ে প্রবালপাথরের সারি এই সৈকতের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একের পর এক সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সেই পাথরের ওপর। সত্যি এক অসাধারণ অনুভূতি, যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। নিচে ডুবন্ত পাথরের দিকে তাকালে সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি, বিস্তৃত নীল সমুদ্র আর সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস মন-প্রাণ জুড়িয়ে আলাদা একটা প্রশান্তি এনে দেবে। তবে পাটুয়ারটেকের সবচেয়ে আলাদা সৌন্দর্য ও আইকনিক বিষয় হলো একই স্থানে বসে সাগরের নীল জল, পাথর ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা। আমরা সেখানে দুই ঘণ্টার মতো অবস্থান করে সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। স্মৃতি হিসেবে অনেক ছবি তুললাম। পাথরের ওপর বসে নীল জলে পা ভিজিয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর করে নিলাম। দূর সাগরে ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা মাছ ধরা নৌকাগুলোর দৃশ্য আপনার ভালো লাগাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। সত্যি, পাটুয়ারটেকের অপরূপ সৌন্দর্য আপনার মনকে ভালো করে দিয়ে অন্য রকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি দেবে—এ নিশ্চয়তা নিশ্চিতভাবে দেওয়া যায়।

পাটুয়ারটেক ভ্রমণ শেষে বোনাস হিসেবে আপনি ইনানী সৈকত, লাল কাকড়ার সৈকত, মিনি বান্দরবানখ্যাত পাহাড়গুলোয় উঠতে পারবেন। যেসব পাহাড় থেকে আবার নীল সমুদ্র ও দেখা যায়। তা ছাড়া হিমছড়ির ঝরনা তো রয়েছেই। ফিরতি পথে এ স্পটগুলো ঘুরে আসতে পারবেন। এসব স্পট ঘুরে সুগন্ধা পয়েন্টে আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেল। পাটুয়ারটেকের এই ভ্রমণ আমাদের মনে অনেক দিন সুন্দর মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

কয়েক বছর ধরে পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে
ছবি: লেখকের পাঠানো

যেভাবে যাবেন

কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্ট অথবা ডলফিন মোড় থেকে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও চান্দের গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। সেখান থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে পাটুয়ারটেক চলে যাবেন। সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অবস্থিত পাটুয়ারটেক যেতে ইজিবাইকে আমাদের দেড় ঘণ্টার মতো লেগেছিল। সারা দিনের জন্য ভাড়া পড়েছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। আপনারা চাইলে সিএনজি, চান্দের গাড়ি, ছাদখোলা দ্বিতল বাস অথবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন। তবে ভাড়া গাড়িতে গেলে অবশ্যই ভালোভাবে দরাদরি করে ভাড়া ঠিক করে যাবেন।

*লেখক: প্রীতম মণ্ডল, ব্যাংক কর্মকর্তা