ইন্ডিয়া গেট না এলে মিস করবেন

ছবি: লেখক

ইন্ডিয়া ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখে বের হওয়ার আগেই এক অপূর্ব অনুভূতি মন ছুঁয়ে দিল। মিউজিয়ামে বেশ ভালো সময় কেটেছে। বার বার মনে হয়েছে, ভারতীয়রা কত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন আর কতটা সমৃদ্ধ! শিল্পকলা, যুদ্ধ, অর্থনীতি, সাহিত্য, প্রেম কী নেই ভারতীয়দের? মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। এত কিছু কি একবারে মাথায় ধরে? কত বড় জাদুঘর! আর কত ধরনের আইটেম। মিউজিয়াম ক্যাফেতে খাবার অর্ডার দিলাম। মোটামুটি সস্তা দামে সবার উপযোগী খাবার এখানে মেলে। খাবার গ্রহণ শেষ করে মিউজিয়াম চত্বর থেকে বের হলাম।  মাওলানা আবুল কালাম আজাদ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আকবর রোডে চলে এলাম। রাস্তার নামকরণেও ইতিহাসের ছোঁয়া! এবার মনে হলো ইন্ডিয়া গেট কাছাকাছি। একবার ইন্ডিয়া গেট না দেখলেই নয়! দিল্লি এসে ইন্ডিয়া গেট না দেখলে আসলেই মিস করা হবে।

ইন্ডিয়া গেট হচ্ছে ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এটি ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে। প্যারিসের আর্ক দে ত্রিম্ফের আদলে ১৯৩১ সালে নির্মিত এই সৌধটির নকশা করেন স্যার এডউইন লুটিয়েনস। ইন্ডিয়া গেটের আগের নাম ছিল ‘অল ইন্ডিয়া ওয়ার মনুমেন্ট’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে নিহত ভারতীয় ৯০ হাজার সেনার স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। ইন্ডিয়া গেট লাল ও সাদা বেলে ও গ্র্যানাইট পাথরে তৈরি। এর চারপাশের রোডগুলোর নাম করা হয় অশোক রোড, আকবর রোড, শাহজাহান রোড, শের খান রোড, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ রোড, ড. জাকির হোসেন রোড।

সন্ধ্যার পরে ভারতীয় জাতীয় পতাকার আদলে ইন্ডিয়া গেট রং ধারণ করে। প্রতিদিন সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি মানুষের পদচারণে মুখর থাকে ইন্ডিয়া গেট। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন, ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, গান্ধী মিউজিয়াম, পুরান কিল্লা, তাজমহল হোটেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে ইন্ডিয়া গেটের আশপাশেই।

ইন্ডিয়া গেটে সামনে লেখক

পঞ্চম জর্জের একটি ভাস্কর্য ইন্ডিয়া গেটের ছাউনির নিচে ছিল। ভাস্কর্যটি অন্যান্য ভাস্কর্যের সঙ্গে দিল্লির করোনেশন পার্কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিয়া গেটে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘নাম না জানা সৈনিকদের সমাধি’ হিসেবে পরিচিত ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ স্থাপিত হয়েছে। অমর জওয়ান জ্যোতি (বাংলা-অমর সৈনিক শিখা বা আলো) একটি ভারতীয় স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭১ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পরে নির্মিত হয়েছে।

ইন্ডিয়া গেটের আগের নাম ছিল ‘অল ইন্ডিয়া ওয়ার মনুমেন্ট’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে নিহত ভারতীয় ৯০ হাজার সেনার স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। ইন্ডিয়া গেট লাল ও সাদা বেলে ও গ্র্যানাইট পাথরে তৈরি।

ইন্ডিয়া গেটের সামনে ভারতের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। গ্রানাইট পাথরে খোদাই করে এ ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্যের উচ্চতা প্রায় ২৮ ফুট এবং ওজন প্রায় ৬৫ মেট্রিক টন। যে ছাতার নিচে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়, সেখানে ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য ছিল। মহীশূরের ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাস্কর্য খোদাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন।

ইন্ডিয়া গেট শুধু ইতিহাস ও ঐতিহ্য নয়, দেশটির রাজধানী দিল্লির পর্যটন শিল্পকেও তুলে ধরছে।

লেখক: ব্যাংকার

নাগরিক সংবাদে ভ্রমণসহ নাগরিক সমস্যার বিষয়ে লেখা পাঠাতে পারবেন [email protected]