সাটুরিয়ার বালিয়াটি দৃষ্টিনন্দন জমিদারবাড়ি
মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। বাড়িটির গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক ১৭৯০ সালে। ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন বাড়িটির পূর্বপুরুষ। সাটুরিয়ায় বর্তমানে জমিদারি প্রথা না থাকলেও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক অনন্য সৃষ্টি। জেলার মধ্যে যতগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে, তার মধ্যে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি অন্যতম।
জমিদারবাড়িটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত। বাড়িটির সামনেই রয়েছে পাকা ঘাটলা বাঁধা বড় একটি পুকুর। শান বাঁধানো ছয়টি ঘাট রয়েছে পুকুরের চারপাশে, যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে রয়েছে মোট ২০০ কক্ষ।
প্রবেশপথের চূড়ায় রয়েছে সিংহমূর্তি। প্রবেশ করতেই ভেতরে নানা রকমের ফুলরাজিসমৃদ্ধ প্রাচীন সৌন্দর্য যেন দৃষ্টিনন্দিত।
বাড়িতে ৫টি বড় ভবন রয়েছে; যা পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামে পরিচিত। প্রথম সারিতে রয়েছে চারটি ভবন। এগুলো নির্মাণশৈলী প্রায় একই রকম। আট ইঞ্চি করে সিঁড়ির উত্থান আর বিশাল স্তম্ভ চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ৫০ ফুট উঁচু কারুকার্যে ভরা এক একটি প্রাসাদ। মাঝখানের দুটি প্রাসাদ দোতলা এবং দুই পাশের দুটি প্রসাদ তিনতলা করে।
ভবনটির ভেতরে জাদুঘরের অবস্থান। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত সিন্দুক, আয়না, ঝাড়বাতি, লন্ঠন, বল্লম, শ্বেতপাথরের তৈরি টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ ও বেতের চেয়ারসহ আরও অনেক মূল্যবান নিদর্শন। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রংমহল।
মজলিশ কক্ষের দেয়ালে হাতে আঁকা ছবি। এর অন্দরমহলে রয়েছে তিনটি অট্টালিকা। এখানে ছিল অতিথিদের থাকার জায়গা, রন্ধনশালা, পরিচারকদের থাকার জায়গা।
জানা যায়, জমিদারেরা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীনতম পুরাকীর্তির নিদর্শন রেখে গেছেন, যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বালিয়াটি প্রাসাদটি বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামেই বেশি পরিচিত।
জমিদার গোবিন্দ রায় সাহার পরবর্তী বংশধরেরা হলেন দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম। এ পরিবারের স্মরণীয় অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন নিত্যানন্দ রায়চৌধুরী, বৃন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানাইলাল, কিশোরীলাল রায়, ঈশ্বর চন্দ্র রায়চৌধুরী প্রমুখ। ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁদেরই বংশধর কিশোরীলাল রায়।
বালিয়াটিতে ১৯২৩ সালের দিকে জমিদার কিশোরীলাল রায়চৌধুরী নিজ ব্যয়ে একটি অ্যালোপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন, যা বর্তমানে সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জমিদার হীরালাল রায়চৌধুরী সাটুরিয়া থেকে বালিয়াটির প্রবেশপথের পাশে উত্তর কাওন্নরা গ্রামে দীঘির মাঝখানে একটি প্রমোদ বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। বর্তমানে প্রত্নতত্ত¡অধিদপ্তর প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
বালিয়াটি জমিদারবাড়িতে দেশি দর্শনার্থীরা ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে পারবেন। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ১০০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীরা ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে পারবেন। বালিয়াটি প্রাসাদটি প্রতি রোববার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে।
লেখক: এ এস সফিক, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ