ছবির মতো গ্রাম পান্থুমাই ও নয়নাভিরাম ঝরনা

পান্থুমাই ঝরনা
ছবি: লেখক

গ্রাম বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাকৃতিক দৃশ্য। আর সে গ্রাম যদি হয় পাহাড়ের খুব কাছে এবং যেখানে রাত–দিন ঝরনার পানির শব্দ আসে কানে, সে গ্রাম দৃষ্টিনন্দনের জায়গা থেকে অনেকটা এগিয়ে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভাগ সিলেট।

সবুজে শ্যামলে ভরা সিলেটের গ্রামগুলো যেন সবুজের লীলাভূমি। হাওর, নদী, টিলা, বিল—এই চারে মিলে সিলেট। সিলেটে যেমন রয়েছে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির হাওর, ঠিক তেমনি আছে উঁচু-নিচু অনেক টিলা। রয়েছে ধর্মীয় বিখ্যাত স্থান। আর এ জনপদের বেশির ভাগ গ্রামই পাহাড়ঘেঁষা। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি যেকোনো মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে দেয়। সবুজ ধানক্ষেত আর নীল আকাশের নিচে তেমনি একটি গ্রাম পান্থুমাই বা পাংতুমাই।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মেঘালয়ের কোলে এক অসম্ভব সুন্দর গ্রাম পান্থুমাই। দিগন্তজুড়ে সবুজ মাঠ আর গ্রামঘেঁষা মেঘালয়ের পাহার গ্রামটিকে দান করেছে এক অনন্য সৌন্দর্য। গ্রামটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে। এর পেছনে মেঘালয় পাহাড় ও বয়ে চলা পিয়াইন নদের পারের এ গ্রাম সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। এ গ্রামের পাশেই বিশাল ঝরনা।

স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝরনা। আমাদের কাছে পান্থুমাইস বা পাংথুমাই বা পানতুমাই ঝরনা (Panthumai Waterfall) হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ আবার বড়হিল ঝরনা বলেন। ঝরনাটি ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে দেখা যায়। বরইগাছের সারি দিয়ে এখানে দুই দেশের সীমানা ভাগ করা। তবে সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপজ্জনক। এই গ্রাম ও ঝরনার সৌন্দর্যটা আসলে বর্ষাকালেই বেশি উপভোগ করা যায়। তা ছাড়া বর্ষার সময় পান্থুমাই ও ফুলেফেঁপে ওঠে পুরোদমে।

আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল, সুপারি, শিমুল, পলাশ, তাল, তমাল আর নানা জাতের গাছপালায় সুসজ্জিত এ গ্রাম। ঝোপঝাড় লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা সবার মন কেড়ে নেয়। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে সুপারিগাছ। পাখপাখালির কলকূজনে সব সময়ই মুখর থাকে গ্রামটি। দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ, ধান-কাউনের হাতছানি, নিঝুম দুপুরে বটের ছায়ায় ঝরনার শব্দ উদাস করে মনপ্রাণ।

গ্রামে প্রবেশের পর দেখা যাবে পানির শব্দে কয়েক শ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসছে শুভ্র জলধারা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলরাশিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কেউ বিছিয়ে রেখেছে সাদা শাড়ি। কবি জীবনানন্দ দাশের মতো আপনিও পাহাড়ের কাছে গিয়ে বলতে থাকবেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই খুঁজিতে যাই না আর পৃথিবীর রূপ।’ ঝরনার কাছে বিমুগ্ধ হয়ে আপনাকে চেয়ে থাকতে হবে পাহাড় আর জলের মিতালির দিকে। মন চাইবে ঝরনাধারা দিয়ে নেমে আসা শীতল পানিতে পা ভিজিয়ে নিতে।

দূর থেকে পান্থুমাই গ্রাম
ছবি: লেখক

গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিছু মানুষ লেখাপড়া শিখে চাকরি করে। তবে সে সংখ্যা নিতান্তই কম। এ ছাড়া কিছু মানুষ দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

যেভাবে যাবেন

পান্থুমাই যেতে হলে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেটে আসতে হবে। সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে বিমানবন্দর সড়কের মুখে সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যাবে। তা ধরে হাদারপার বাজার যেতে হবে। এতে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা। হাদারপাড় থেকে সড়কপথেই পান্থুমাই যাওয়া যায়। তবে সেখান থেকে নৌকা নিয়ে গেলেই ভালো হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।