শীতে লালবাগ কেল্লা ভ্রমণ

বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম। এটি পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। লাল ইট, মার্বেল ও কষ্টিপাথর দিয়ে নির্মিত এটি মূলত মোগল শাসন ও তাদের জৌলুশময় যাপিত জীবনের নীরব সাক্ষী বহন করে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, লালবাগ কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহ। তিনি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এক প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণ কাজে হাত দেন। পিতার নামানুসারে এর নাম রাখেন আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দুর্গ। পরবর্তী সময়ে এর নামকরণ হয় লালবাগ কেল্লা। তবে অনেকে মনে করেন, এ এলাকায় লাল গোলাপের বাগান ছিল। সেই থেকে এলাকার নাম এবং এলাকার নামে নামকরণ হয় লালবাগ কেল্লার।

লালবাগ কেল্লার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি হলো পরীবিবির সমাধি। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শায়েস্তা খাঁর কন্যা ‘ইরান দুখত রাহমাত বানু’ বা ‘পরীবিবি’। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাত্র একটি দরজা। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরীবিবির সমাধি। পরীবিবির সমাধির পশ্চিমে রয়েছে শাহী মসজিদ। ১৬৭৮-৭৯ সালে বাংলার সুবেদার থাকাকালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি দেশের প্রচলিত মোগল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ।

বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

হাম্মামখানা ও দরবার হলসমৃদ্ধ সুবেদার শায়েস্তা খাঁর সুরম্য দ্বিতল প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে সৈনিকদের ব্যবহৃত ১৯ শতকের বর্শামূল ও বর্শাফলক, লোহার জালের বর্ম, ছোরা ও খাপ, গুপ্তি, ঢাল, তরবারি, দস্তানা, পারকাশন লক বন্দুক ও রাইফেল, তীর, ধনুক, শিরস্ত্রাণ, বক্ষবর্ম, পারস্যের তৈরি বাসনপত্র, কামানের গুলি তৈরির ছাঁচ, ফ্লিন্ট লক পিস্তল, পারকাশন লক পিস্তল ও সিসার গুলি, সৈনিকের পোশাক, ধাতুর তৈরি সুরার পাত্র, চীনা গামলা, ফারসি ভাষার কিতাব আদব-ই-আলমগীরি, সুরা ইউসুফের তাফসির, আরবি ও ফারসি তাফসির, পবিত্র কোরআন শরিফসহ মোগল আমলের আরও নানা দুর্লভ নিদর্শন, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

লালবাগ কেল্লায় যেভাবে যাবেন

লালবাগ কেল্লায় যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার মোড়ে আসতে হবে। সেখান থেকে রিকশা অথবা লেগুনা করে কেল্লায় যেতে পারবেন। লেগুনাযোগে ২০ টাকা আর রিকশাযোগে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় যেতে পারবেন লালবাগ কেল্লায়। ঢাকা অথবা বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকার নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ, টিএসসি অথবা আজিমপুর এসে রিকশায় করে যেতে পারবেন লালবাগ কেল্লায়।

  • লেখক: মো. মেহেদী হাসান অর্ণব, শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।