কুয়াকাটায় এক দিন

কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু
ছবি : খায়রুল বাশার

সবাই এখন কর্মব্যস্ত। দেখা–সাক্ষাৎ হওয়া কঠিন। তাই আমরা ভাবলাম, এক দিনের জন্য ব্যস্ততাটাকে ছুটি দিয়েই কোথাও ঘুরে আসি। শুরু হলো সবার সঙ্গে যোগাযোগ। দিন–তারিখ ঠিক হলো। এবার পালা স্থান ঠিক করা। নানাজন নানান প্রস্তাব দিলেন, শেষমেশ ঠিক হয় ‘কুয়াকাটা’য় যাব।

দিনাজপুর জিলা স্কুলের ২০০১ সালের বন্ধুরা আমরা একসঙ্গে মিলে ঘুরব—কী এক অন্য রকম অনুভূতি। আমাদের এ আনন্দযাত্রায় ফয়সাল ইসলাম, জুবায়ের, অলি উল্লাহ, রেজাউল হক, পাভেল, কৌশিক ও দারা। আর বরিশালে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সাজিদ।

কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে গৌধুলী বেলায়
ছবি : খায়রুল বাশার

গত বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট। সাড়ে ১১টায় আমরা যাত্রা শুরু করব। সবাই মিলিত হব মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের সামনে। আমরা একে একে উপস্থিত হতে লাগলাম। কিন্তু বন্ধু কৌশিকের খবর নেই। কারণ, আমাদের মধ্যে সেই একমাত্র চিকিৎসক। রোগী দেখে আসতে সময় লেগেছে বলে আমাদের কাছে অজুহাত দাঁড় করে বসল। তার গাড়িতে আমরা পাঁচজন উঠলাম। আর বাকিরা রেজাউলের গাড়ি চড়ে যাত্রা শুরু করলাম।

কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে
ছবি : খায়রুল বাশার

যাত্রাপথে কত্ত রকমের কথা। মনে হচ্ছে আমরা যেন সেই স্কুলজীবনে ফিরে গেছি। রাত গভীর হতে লাগে। চারপাশে শহরে বাতিগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। শহরে পেরিয়ে ছুটছি আমরা। একেবারে কাছেই চলে এলাম বহুকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর কাছে। সেটা দেখার পর কী যে ভালো লাগল, তা বোঝাতেই পারব না। সেতু দেখতে দেখতে আমরা চললাম। ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্তে আমরা সবাই কিছু সময়ের জন্য নামলাম।

সমুদ্রে বন্ধুরা
ছবি : খায়রুল বাশার

তারপর আবার চলতে শুরু করল আমাদের গাড়ি। ওই দিনে বরিশালে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বন্ধু সাজিদ। সেখানে ভোরের লাল আলো ফোটার আগে উপস্থিত হলাম। অনেক দিন পর বন্ধুকে পেয়ে আমরা সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম।

সমুদ্রে সৈকতে বন্ধুদের মেলা
ছবি : খায়রুল বাশার

বাসায় নাশতা করে সকাল সকাল আমরা কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দিই। রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে কুয়াকাটায় পৌঁছায়। প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় এলাম। কত কিছু ভেবেছিলাম। এত দিন ছবিতে দেখেছিলাম। এখন বাস্তবে দেখছি। মনের ভেতরে কত কিছু ছিল। এখানে এসে দেখে অনেকটা হতাশ হয়ে গেলাম। এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত, সেখানে ব্যবস্থাপনা এত দুর্বল যে, ভাবতে কষ্ট লাগে। অথচ যখন থাইল্যান্ডের পাতায়া গিয়েছিলাম, কত্ত ছোট্ট একটা সৈকত, সেখানকার ব্যবস্থার কারণে বারবার যেতে ইচ্ছা করে। আমাদের এত্ত সুন্দর, এত্ত বিশাল একটা সৈকত, যা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দেশের পর্যটন করপোরেশন যদি এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো আমরা অনেক দেশ–বিদেশের পর্যটক পেতাম।

ভ্রমণ শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে আমরা
ছবি : খায়রুল বাশার

আমাদের এ বিষয়গুলো যদি নজর দেওয়া যেত! মনে আফসোস থাকলেও আমরা সবাই দারুণভাবে উপভোগ করছি। সৈকতের চারপাশ। সমুদ্রের গর্জন। শীতল বাতাস। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা হেঁটেই চলছি এক অবিস্মরণীয় যাত্রায়। কুয়াকাটার সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউ যখন তীরে এসে আছড়ে পড়ছিল, সেই ঢেউগুলোর যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে মনে করে দিচ্ছিল।