স্বপ্নপুরীতে আমরা কজন

মানুষের চিন্তাভাবনার কোনো শেষ নেই। কে কখন কিভাবে চিন্তাভাবনা করছেন, তা আগে থেকে ঠাওর করা বড্ড কঠিন। তবে একবার কোনো চিন্তা মাথায় এলে তা আর সহজে মাথা থেকে নামতেই চায় না। আমাদের এবারের ভ্রমণটাও ঠিক তেমনি একটি চিন্তাভাবনার সফল বাস্তবায়ন।

২০২৩ সালের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে বন্ধু বেলালের মুখ থেকে আমি প্রথম জানতে পারি, আমাদের স্কুলজীবনের ছেলে বন্ধুরা নির্দিষ্ট এক তারিখে একসঙ্গে কোনো একটি বিনোদন স্পটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারিখ ও স্থান নির্ধারিত হলে আমাকেও যেতে হবে বলে সে জানায়। আমার পক্ষে এটা মোটেও সহজ কোনো বিষয় ছিল না। কেননা, আমার স্কুলের বন্ধুরা নিজ জেলা রংপুরে অবস্থান করলেও বন্ধুদের মধ্যে আমি একা থাকি ঢাকা শহরে। তাই আমার বাস্তবতা বিবেচনা করে আমাকে ছাড়াই তাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে বলি, কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা, আমাকে ছাড়া যাবে না। একপর্যায়ে তাদের জানিয়ে দিই, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় বাড়ি আসব, তখন কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়। তারা আমার প্রস্তাবে রাজি হয়। তখন থেকেই শুরু হয় পরিকল্পনা। ২০২৩ শেষে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি বাড়ি আসি এবং তা বন্ধুদের জানিয়ে দিই। সবার মতামতের ভিত্তিতে পরিকল্পনা হয়, নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শুক্রবার দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে যাব।

১ জানুয়ারি, ২ জানুয়ারি এভাবে গুনতে গুনতে একদিন চলে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ১২ জানুয়ারি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল সাড়ে আটটার দিকে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও প্রচণ্ড কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৪টি মোটরসাইকেলে ৮ বন্ধু স্বপ্নপুরীর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী আমাদের জন্মভূমি রংপুর শহর থেকে ৪০–৫০ কিলোমিটার দূরে হলেও পথে আরও কয়েক জায়গায় যাত্রাবিরতি দেওয়ায় সেখানে পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। বেলা একটার কিছু পরে আমরা পৌঁছাই বেশ কয়েক দশক থেকে নান্দনিক সৌন্দর্যের বিনোদনজগৎ হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভ্রমণ স্পটখ্যাত এবং কৃত্রিম লেক, পাহাড়, উদ্যান, গাছগাছালি, ফুল ও সবুজের সমারোহে ভরপুর স্বপ্নপুরীর প্রবেশপথে। প্রবেশপথের রাস্তার পাশে থাকা হোটেলগুলোর একটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস, সবজি ও ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খাই। খাওয়া শেষে নির্ধারিত মূল্যের টিকিট কেটে বেলা আড়াইটার দিকে স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ করি।

প্রবেশপথে বিশাল আকৃতির সাদা ধবধবে দুটি পরি দুই ডানা প্রসারিত ও এক হাত উঁচু করে আমাদের অভ্যর্থনা জানায়। প্রবেশপথ পেরিয়ে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি দেবদারু ও নারিকেলগাছের মাঝের রাস্তা ধরে স্বপ্নপুরীর গহিনে প্রবেশ করি। দলের সব সদস্যই এর আগে এক বা একাধিকবার এই বিনোদন স্পটে এসেছি বলে স্বপ্নপুরীর কোথায় কী আছে, তার প্রায় সবটাই আমাদের জানা। পূর্ব–অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুরুতেই একটি ক্যামেরা ভাড়া করি। ভাড়া করা ক্যামেরায় নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় পছন্দের স্টাইলে একক ও দলগত ছবি তুলি। আর নিজেদের স্মার্টফোনের ক্যামেরা তো ছিলই। সব মিলিয়ে শত শত ছবিতে নিজেদের ফ্রেমবন্দী করি। ছবি তোলা শেষ হলে পুরো এলাকা একবারের জন্য ঘুরে দেখি। এই ঘোরাঘুরির মাঝেই বন্ধু সুজন, রাজ, আজাদ, বেলাল, মোশাররফ, শরিফুল ও মনির পরিবারের জন্য কেনাকাটা করার উদ্দেশ্যে স্বপ্নপুরীর ভেতরে অবস্থিত মার্কেটে প্রবেশ করে। দলের অনেকেই নিজেদের পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করে, কেউ কেউ আবার না কিনেই মার্কেট থেকে বের হয়ে আসি। এভাবেই দেখতে দেখতে সময় শেষ হয়ে আসে। নিজেদের নীড়ে ফিরে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে আসরের আজানের একটু পর সবাই আনন্দচিত্তে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। সেখান থেকে আশুরার বিল হয়ে বাদ মাগরিব বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত নয়টা বেজে যায়। আর এভাবেই শেষ হয় আমাদের সেদিনের স্বপ্নপুরী–ভ্রমণ।

*লেখক: মো. জাহানুর ইসলাম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]