তিন বন্ধুর সমুদ্রবিলাস যেভাবে
বিকেল হতেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরে আমি আর আয়াত উপস্থিত। আরিফ তখনো এসে পৌঁছায়নি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে লালরঙা ডাবল ড্রেকার বাসটি। বাসে উঠতেই চোখ হলো ছানাবড়া। কোথাও কোনো সিট খালি নেই। দাঁড়িয়ে যাওয়ার বিষণ্ন ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেল, যখন আয়াত উচ্চ স্বরে বলে উঠল আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। অবশ্য প্ল্যানটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম কোথাও ঘুরতে যাওয়া দরকার। কিন্তু কোথায় যাব সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তার ওপর বন্ধুবান্ধব যে যার কাজে ব্যস্ত। একা একা কোথাও ঘুরতে যাব কোনো বন্ধু ছাড়া সেটা কি হয় নাকি। একবার ভাবলাম একাই যাব, কোথায় যাব, কোথায় থাকব—এসব ভেবে ভেবে মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলাম। যখন এসব চিন্তায় ব্যস্ত, তখন আমার কাছে ভ্রমণে যাওয়ার দারুণ এক সুযোগ এসে গেল। আমার সহপাঠী আরিফকে বিষয়টি শেয়ার করতেই সে রাজি হয়ে গেল। সেই সঙ্গে আরও কয়েকজনকে রাজিও করে ফেলল।
আসলে ‘বন্ধু’ শব্দটিই যেন অনেক মায়া-মমতা, আবেগ-অনুভূতিতে ভরা প্রাণোচ্ছল একটি শব্দ। আর বন্ধু মানেই বুকভরা নিশ্বাস, স্বস্তির জায়গা। তুই-তোকারির নিঃস্বার্থ এক সম্পর্ক। তাই বন্ধুদের আয়োজনের কথা শুনলেই সবকিছু এক পাশে ফেলে চলে আসার চেষ্টা করে অন্য বন্ধুরা।
১৪ ডিসেম্বর রবীন্দ্র চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হলো। সিদ্ধান্ত হলো আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি! তা ছিল অজানা। তবুও ঘটা করে প্রকল্পের নামটা দিয়ে বসলাম ‘মিশন কুয়াকাটা’। ঘোরাঘুরির ব্যাপারে আমি একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত। যেই কথা সেই কাজ। শুরু হলো দল গঠনের কাজ। আরিফকে আহ্বায়ক করে আয়াত, হাসিব আর তন্ময়কে নিয়ে গঠন করলাম পাঁচ সদস্যের ঘুরন্ত টিম।
ঘুরতে যাওয়ার তারিখ ঠিক হলো। আমি রীতিমতো বেশ উত্তেজিত ছিলাম। ট্যুর হচ্ছে, সেটা নিয়েই আমার যত শত ভাবনা। আমার মধ্যে বেশ আনন্দ বিরাজ করছিল। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না। এদিকে আমাদের টিমের কার্যক্রম অনেকটাই উৎসবমুখর ভাবেই এগোচ্ছিল।
ডিসেম্বরের ২০ তারিখ। ক্লাস শেষে একটা খুশির খবর পেলাম। নোটিশ বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে টানানো হয়েছে ছুটির নোটিশ। কাল থেকে শীতকালীন ছুটি শুরু। এই দিনটার জন্যই আমি ও আমার টিম অপেক্ষা করছিল। রাত নামতেই আমাদের পূর্বনির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনেক কথাবার্তা হলো। যাত্রার সময় ঠিক হলো আগামীকাল রাতে। ফাইনালি আমরা মিশন কুয়াকাটায় যাচ্ছি। আলোচনা সভা শেষ করে সবাই হলে ফিরে গেলাম।
সকাল হতেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। সাভার নিউমার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে হলে ফিরলাম।
হঠাৎ বিপত্তি বাধল। হাসিব যাচ্ছে না। খবরটি জানাল আরিফ। আয়াতকে বিষয়টি জানালাম। যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো। কালো মেঘে ঢাকা পড়ল আমার রঙিন মন। ওদিকে তন্ময়ের মুখেও একই সুর শুনে অনেকটাই নিশ্চিত হলাম, ট্যুর হচ্ছে না।
শেষ মুহূর্তে এসে তারা যা জানাল, তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ট্যুরের স্বপ্নটা যেন ভেঙে যেতে বসেছিল। তবুও আয়াত আর আরিফের একাত্মতা আমার অর্ধভাঙা স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখল।
আমাদের ঘুরতে যাওয়ার স্থান পরিবর্তিত হলো। মিশন কুয়াকাটার পরিবর্তে ঠিক হলো মিশন কক্সবাজার। ক্যাম্পাসের বাস বঙ্গবাজারে পৌঁছাল। বাস থেকে নেমে আমরা শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হলের দোকানে রাতের ডিনার করলাম খাসির মাথা দিয়ে। এরপর রওনা হলাম কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে।
যথাসময়েই রেলস্টেশনে পৌঁছালাম আমরা। ট্রেন ছাড়বে নয়টা বিশ মিনিটে। ট্রেনের নাম মহানগর এক্সপ্রেস। দাঁড়িয়ে আছে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আমি আর আরিফ টিকিট কাউন্টারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আয়াতের উপস্থিতি। তার হাতে টিকিট দেখে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলাম। করুণ স্বরে জানাল আমাদের দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে কী? আমাদের ট্যুর হচ্ছে, সেই আনন্দের কাছে সেই কষ্টটা যে বড়ই তুচ্ছ। টিকিট পেয়ে উচ্ছ্বসিত মনে একটা সেলফি তুললাম।
যাত্রা শুরু হলো। ট্রেন চলেছে ঝনঝন শব্দ করে। মনোরম হাওয়া গায়ে মেখে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছানোর মধ্যে যে রোমান্টিসিজম লুকিয়ে রয়েছে, সেটা একমাত্র ট্রেন যাত্রীরাই বোঝেন। ভ্রমণ সর্বদাই আনন্দের। এ আনন্দের সঙ্গে ভ্রমণে যুক্ত হয় জ্ঞানলাভ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—
‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।’
প্রকৃতপক্ষে, ভ্রমণের ফলে মানুষের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয়, ঠিক তেমনি সে অনেক অজানার সন্ধান লাভ করে।
ভোর তখন পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। ট্রেনযাত্রীদের দীর্ঘ যাত্রার অবসান ঘটেছে। অন্য যাত্রীদের মতো আমরাও ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। ট্রেন থেকে নামতেই শীত যেন জেঁকে বসল। স্টেশন থেকে বের হয়ে অলংকার মোড় পৌঁছালাম। রাস্তাঘাটে যেন সুনসান নীরবতা। যাত্রা যেন শেষ হয়েও হয়নি শেষ। এখনো অনেকটা পথ বাকি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে আরও ঘণ্টা চারেক। আমরা সকালের হালকা নাশতা করে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ঘন কুয়াশায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্য যেন নজর কাড়ে সবার।
বছর ঘুরে আবার শীত আমাদের দুয়ারে। জানাচ্ছে ভ্রমণের হাতছানি। শীতকাল হলো ঘুরে বেড়ানোর আদর্শ সময়। মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের জন্য মানুষ সারা বছরই ভ্রমণ করে বটে, কিন্তু শীতে বেশির ভাগ মানুষ ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর একটা প্রধান কারণ হচ্ছে শীতের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী।
সমুদ্র নামটি যতবার নিচ্ছি মনটা ততবার নেচে নেচে উঠছে। সাগর পাড়ে যাচ্ছি—আমার কল্পনার, স্বপ্নের গাঢ় রঙে রঞ্জিত বিরাট, বিশাল, উজ্জ্বল, উচ্ছল সমুদ্র দেখতে, তার অহংকারের গর্জন শুনতে, তার কাছে আমার সমস্ত হীনতা, দীনতা, করুণাকে সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দিতে। তার বিশাল সত্তার মাঝে নিজের ক্ষুদ্র সত্তাকে হারিয়ে ফেলতে, সব ধূসর সংকীর্ণতাকে সাগরের নীল জলে বিসর্জন দিয়ে মুক্ত হতে, স্বাধীনতার আস্বাদ পেতে। তাই আমার মুখে, মনে হৃদয়ে, শরীরে, রক্তে উদ্দামতার বান বইছে।
কক্সবাজার পৌঁছাতেই প্রায় দুপুর। হোটেল চেকিং করে সবাই বেরিয়ে গেলাম সৈকতে। বিশাল বিশাল ঢেউয়ে সবাই যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক অন্য রকম জগতে। সমুদ্রে ঘণ্টাখানেকের মতো দাপাদাপি করে ফিরে এলাম হোটেলে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ করে যে যার মতো বিশ্রাম নিলাম।
পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্রসৈকত হলো কক্সবাজার। বিধাতা যেন বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন বালুর আঁচলে। সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে এল সাগরের উত্তাল গর্জন। এ সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। সাগর পাড়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য সত্যি অপরূপ। এত দিন শুধু বইয়ের পাতায় আর টিভিতে দেখেছি। এবার নিজ চোখে দেখব। ভেতরের উত্তেজনা যেন প্রশমিত হতে চাচ্ছে না। আয়াত, আরিফ আর আমি বেরিয়ে পড়লাম। পথঘাট কিছুই চিনি না। লোকজন যেখান দিয়ে যাচ্ছে আমরাও সেখান দিয়ে যাচ্ছি।
কোনো এক সরু রাস্তা দিয়ে সৈকতে এসে পড়লাম। আহ মানুষ! সেই আনন্দে আছে। কেউ পানিতে লাফালাফি করছে। কেউ হাঁটছে, কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ ওয়াটার বোর্ড রাইডিং করছে, কেউবা আবার ঘোড়ায় চড়ে রাইডিং করছে। সৈকতে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের কোলাহল ছিল চোখে পড়ার মতো।
দৃষ্টির সীমানায় শুধুই থইথই জলরাশি। সমুদ্রের গর্জনে মুখরিত পুরো এলাকা। একের পর এক বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আমরা তিন বন্ধু একে অপরকে ধরে ঢেউয়ের সঙ্গে ভাসতে শুরু করলাম। সমুদ্রের স্বচ্ছ লোনা জলে শুরু হলো জলকেলি। উত্তাল ঢেউয়ে দোল খেতে থাকলাম। সব ক্লান্তি যেন নিমেষেই নিঃশেষ। হৃদয়জুড়ে স্বস্তি। সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি আর স্নান করতে করতে সূর্যটা একসময় পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ল। পরে সমুদ্রতটে এসে আবারও শুরু হলো ফটোসেশন।
বালিয়াড়ি সৈকতসংলগ্ন শামুক, ঝিনুক ও নানা প্রজাতির প্রবালসমৃদ্ধ বিপণিবিতান, অত্যাধুনিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, নিত্য সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেটে আর পর্যটকদের বিচরণে সৈকত প্রাণচাঞ্চল্যকর হয়ে ওঠে।
সূর্যাস্তের সময় যেন এক স্বর্গীয় আবহ সৃষ্টি হয় সেখানে। সন্ধ্যার পূর্বলগ্নে সূর্যের আলো সাগরে আছড়ে পড়ছে। গোধূলিলগ্নে রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে চারদিক। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে ভাসছে সমুদ্রের গর্জন। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। দু-নয়ন ভরে দেখছি সব। কোনো আড়ম্বর নেই এখানে, নেই কোনো কৃত্রিমতা। আছে শুধু প্রকৃতির নিজস্ব তুলিতে আঁকা অপরূপ চিত্রপট।
রাতে বের হলাম পাশের মার্কেটের দোকানগুলোতে সাজানো বিভিন্ন জিনিসের পসরা দেখতে। পর্যটকদের চাহিদার সবকিছুই আছে দোকানগুলোতে। ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্রগুলো চোখে একটু বেশিই লাগে। সৈকতের পাশের খাবার দোকানগুলোতে কিছু স্পেশাল খাবার পাওয়া যায়। এসব দু–একটা জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। সামুদ্রিক মাছ তাজা কিনে এখানে তাজা খাওয়ানো হয়। স্বাদে অনন্য এসব মাছ। কাঁকড়া খাওয়া দেখে একটু কৌতূহল হলো। কাঁকড়ার দোকানে আয়াত গিয়ে দেখে এল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আজকের ডিনার করব সামুদ্রিক মাছ দিয়ে। যে কথা সেই কাজ। একটা কোরাল মাছ, একটা চিংড়ি ও একটা সামুদ্রিক কাঁকড়া ভাজা কিনলাম। এরপর পাশের একটি খাবার হোটেলে পরোটা দিয়ে সামুদ্রিক মাছ খেলাম।
তিনজন মিলে ভাজা কাঁকড়া খেলাম, যা অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। ভাজা কাঁকড়ার স্বাদটা এখনো যেন মুখে লেগে আছে।
পরের দিন খুব ভোরে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম সৈকতের দিকে। আজকে জোয়ার দেখব। কক্সবাজারে এসে যদি সমুদ্রের জোয়ারে গা না ভেজাতে পারি, তাহলে হয়তো অপূর্ণতা থেকে যাবে। সকালে লোকজনের আনাগোনাও কম। চারদিকে একটা স্নিগ্ধতা। সকালের নরম বাতাস হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছিল। ঢেউয়ের সঙ্গে আসা নানা রকম ঝিনুক চোখ কাড়ল। অনেকগুলো ঝিনুক কুড়িয়েছি হেঁটে হেঁটে। আয়াতের আবার ছবি ওঠার শখ হলো। দামদস্তুর করেই একজন ক্যামেরাম্যান ঠিক হলো। সমুদ্রসৈকতে বিভিন্ন পোজে ছবি তুললাম।
সমুদ্রের পানিতে ভেজার আনন্দটাই আলাদা। তাইতো আরিফ আয়াতের সঙ্গে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়লাম সমুদ্রে। আয়াত আরিফের কাঁধে উঠে লাফ দেওয়া, বড় বড় ঢেউয়ের ভেতর গা ভাসিয়ে দেওয়া। যত আনন্দ সব যেন এই পানিতেই।
পরের দিন ভোরে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ শেষে হোটেলে ফিরলাম। খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো হিমছড়ি যাব। পুরা ট্যুরে আমাদের গ্রুপ লিডার আয়াত আর অ্যাকাউন্টস ম্যানেজারের ভূমিকায় আরিফ। আর আমি পুরো সময়টাই যেন ছন্নছাড়া। মেরিন ড্রাইভ ধরে অটো চলছিল। রাস্তার এক পাশে পাহাড় আর অন্য পাশে সমুদ্র। অল্প সময়ের ভেতরে হিমছড়ি পৌঁছে গেলাম। এরপর শুরু হলো হিমছড়ি পাহাড়ে ওঠার যাত্রা। হিমছড়িতে একটা ঝরনা আছে। কিন্তু শীতে এ ঝরনাটাতেও পানি থাকে না। পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত ওঠার সিঁড়ি আছে। কিন্তু এ সিঁড়িগুলো এত বেশি খাড়া, কিছুক্ষণ চলার পর হাঁপিয়ে যায় মানুষ। চূড়ায় ওঠার পরই অসাধারণ দৃশ্য সব ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে। ওপরের পাহাড় আর নিচে সমুদ্র এই দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের ওপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। হিমছড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা হোটেলে ফিরলাম।
রাত নামতেই এবার ছুটলাম বার্মিজ মার্কেটে। কয়েক প্রকার আচার আর বাদাম কিনলাম। মার্কেট ঘুরলাম। এ মার্কেটই ছিল আমাদের শেষ গন্তব্য। গভীর রাতে হোটেলে ফিরলাম। কাল হোটেল চেক আউট করতে হবে। ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমরা তিনজন এক রুমে ছিলাম। কে কোন বেডে ঘুমাবে, এটা নিয়ে রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ চলেছে। কার আগে কে জায়গা দখল করে শুয়ে পড়বে, এটা ছিল যুদ্ধের মূল কারণ।
আরেকটা কারণ ছিল ওয়াশরুম নিয়ে। কার আগে কে গোসলে ঢুকবে, সেটা নিয়ে যুদ্ধ চলত। রুম ভাগাভাগিতেও মজা। আমাদের বিদায়ের সময় হয়ে গেল। বলা যায় আমার জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল কক্সবাজার ভ্রমণটি।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়