নদী, সাগর থেকে দ্বীপের পথে

২০১৪ সালের কথা বলছি।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে কিরুকে (কিরণ) ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য কয়েকবার ডাক দিলাম। ও আমার ডাকে সাড়া দিল! যে কাঁথাটা ওর শরীরের ওপর ছিল, সেটা টেনে মাথায় মুড়ি দিয়ে আরও একটু জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়ল। মন চাইছিল এক বালতি পানি নিয়ে ওর মাথায় ঢেলে দিই। কিন্তু সকাল বেলা এতটা অমানবিক হতে পারলাম না। হ্যাঁচকা টানে কাঁথাটা সরিয়ে বললাম, ‘খোদা মালুম, তুই থাক ভাই।’

আমরা আছি কক্সবাজারের একটি হোটেলে। এখান থেকে সকাল সকাল আমাদের বের হতে হবে। দুই দিন এক রাত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কাটানোর জন্য আমরা রওনা হব। সবকিছু শিডিউল মতো চলতে হবে। সকাল ১০টায় আমাদের টেকনাফের একটি ঘাটে জাহাজ ধরতে হবে।

বন্ধুবর তিশামের সঙ্গে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। একটু হাঁটাহাঁটি করে বললাম, ‘চল এবার গাড়ির কাছে যাওয়া যাক।’ গিয়ে দেখি সবাই গাড়ির  জন্য অপেক্ষা করছে। গাড়ি আসতেই তাড়াহুড়া শুরু, যে যত আগে উঠতে পারবে, সামনের আসনের নিয়ন্ত্রণও তার। ভার্সিটিতে ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম, গাড়িতেও ব্যাকবেঞ্চার। তবে পার্থক্য এই, ভার্সিটিতে ব্যাকবেঞ্চারের সংখ্যা ছিল অগণিত কিন্তু গাড়িতে হাতে গোনা কয়েক জন, তাদের মধ্যে আমি আর তিশাম আজীবন সদস্য। স্যার তো একদিন বলেই ফেললেন, ‘কিরে মানিকজোড় তোদের কি আজীবন পিছনের আসনই পছন্দ ?’ আমাদের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘জ্বি স্যার, আমাদের পিছনে বসতেই ভালো লাগে।’ কিন্তু আমরা জানি কেন আমরা পেছনে বসতাম। একদিন বন্ধু তিশামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমরা হর সময় পিছনে বসে ভ্রমণ করি কেন রে?’ ওর সরল উত্তর, ‘ভার্সিটিতে পড়ি, একটা সিটের জন্য হাঙ্গামা করতে পারব না।’

গাড়ি ছাড়ল। আরও কিছুক্ষণ পর গাড়িটা বাঁয়ে নাফ নদী আর ডানে উঁচু–নিচু পাহাড় রেখে আঁকাবাঁকা সর্পিলাকার সবুজ পথে শাঁ শাঁ শব্দে চলতে লাগল। মুগ্ধ হয়ে সবুজ বন্ধুর প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম। কখন যে আমাদের গাড়ি ঘাটে এসে পৌঁছেছে, টেরই পাইনি। কাঠের তৈরি জেটিতে দ্বিতল জাহাজ আমাদের বরণ করার জন্য নোঙ্গর করে ছিল। টিকিটের আনুষ্ঠানিকতা সেরে জাহাজে চেপে বসলাম। ভেঁপু বাজিয়ে সারেং সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ চালনা করে দিল। দুই পাশের সবুজ সারিবদ্ধ পাহাড় আর মাঝে নাফ নদীর নীলাভ জলরাশি কেটে আমাদের জাহাজ ছুটল। আমাদের জাহাজে দুজন বিদেশিও ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তাঁরা সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছেন। সুইজারল্যান্ড স্থলবেষ্টিত দেশ। নদী, সমুদ্র আর সবুজ প্রকৃতির স্বাদ নিতে উনারা বাংলাদেশে এসেছেন।

পাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, পাহাড়, আরাকান রাজসভা, আলাওল আর রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। আমরা লক্ষ করিনি, অজ্ঞাতে একজন রোহিঙ্গা আমাদের কথোপকথন শুনছিল। কাছে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে সে জানাল যে কীভাবে বার্মিজ বাহিনী দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে ওরা নিজেদের পিতৃপুরুষের ভিটামাটি ত্যাগ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

আরও কয়েকজন অতিথি অনুমতি না নিয়েই আমাদের অনুসরণ করে যাচ্ছিল। তবে তাঁদের এ অনধিকার অনুসরণ আমাদের বিরক্ত নয় বরং ভ্রমণটাকে বহুগুণ আনন্দঘন করে তুলেছিল। আর এই অনুসরণকারীরা ছিল; একদল গাঙচিল। জাহাজের পেছনে অনতিউচ্চে কিচিরমিচির শব্দে উড়ে উড়ে ওরা আমাদের অনুসরণ করছিল, আর কেউ খাবার ছুড়ে মারলে শূন্যেই অসীম দক্ষতায় ধরে নিচ্ছিল। জীবনে কখনো তুরস্কে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি! কিন্তু দুদিকে সুউচ্চ সবুজ জঙ্গলমহল পাহাড়, শুভ্র মেঘময় নীল আকাশ আর নদীর নীল জলরাশি কেটে যেভাবে আমাদের জাহাজ চলছিল তাতে মনে হয়েছিল, আমরা নাফ নদী নয় বরং ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালি পাড়ি দিচ্ছি। অথবা ভুল বললাম আমাদের জাহাজ নরওয়ের কোনো খরস্রোতা পাহাড়ি নদী পাড়ি দিচ্ছিল। এক পা গলুইয়ের ওপর উঠিয়ে, দুই হাতে রোলিং চেপে, শরতের নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে, রঙিন সানগ্লাসের নিচ দিয়ে আমরা প্রকৃতির এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করছিলাম।

দেখতে দেখতে আমাদের জাহাজ নদী ছেড়ে সাগরে এসে ভাসল। যেখানে নদী, পাহাড় আর সমুদ্র একসঙ্গে মিলেছে এমন জায়গা অবলোকন আমার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল। আমার মনবাঞ্ছা অপূর্ণ থাকল না, অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত। সাবরাংয়ের সর্ব দক্ষিণভাগ অর্থাৎ শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদী, মিয়ানমারের সুউচ্চ সবুজ পাহাড় শ্রেণী আর বঙ্গোপসাগরের এই মেলবন্ধনের জায়গাটা আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা চিত্তাকর্ষক স্থান।

আস্তে আস্তে স্থলের প্রকৃতি আবছা করে আমাদের জাহাজ অথৈ সাগরে এসে পৌঁছাল। দৃষ্টিসীমা যতদূর যায়, শুধু নীল জল আর জল। সমুদ্রের নীল জল জাহাজের ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে স্বেত-শুভ্র ফেনা হয়ে বহুদূর ছড়িয়ে আবার সাগরে মিশছে। এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে কবি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতার কয়েকটি পঙ্‌তি হঠাৎ মনে পড়ে গেল...
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’?
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেছি এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো, ‘ঐ যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখা যাচ্ছে।’ মনের অজান্তেই প্রশ্ন- কই?  ঐ .....যে। গ্রীবা বাড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, বিশাল সমুদ্রের মাঝখানে এক চিলতে সবুজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নামে সগৌরবে দাঁড়িয়ে। কাছে যেতেই দেখি সারি সারি নারকেলগাছ, আর এ জন্যই মনে হয় এর অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।

কংক্রিটের জেটিতে আগে থেকেই দুটি জাহাজ পাশাপাশি নোঙ্গর করা ছিল। আমাদের জাহাজ ওই দুটি জাহাজের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াল। সুতরাং সন্তর্পনে ওই দুটি জাহাজ মাড়িয়ে আমরা সেন্টমার্টিনে পা রাখলাম। পায়ে হেঁটে আমরা হোটেলে পৌঁছালাম। বেলা ততক্ষণে দ্বিপ্রহর পার। হোটেল থেকে বের হয়ে দ্বীপের পশ্চিম পাশে বালির ওপর সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়ালাম। সমুদ্রের হিমেল হাওয়ায় পেটের ক্ষুধা নিজের উপস্থিতি জানান দিল। খেয়েদেয়ে কয়েক বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, দ্বীপের চারপাশে সৈকতের ওপর দিয়ে সাইকেল নিয়ে চক্কর দিব। এজাজ আর সুমনকে সাইকেল ভাড়া করতে পাঠালাম। কিন্তু বিধি বাম। ওরা খানিকক্ষণ পর ফিরে এসে জানাল সব সাইকেলই নাকি ভাড়া হয়ে গেছে । অগত্যা সিদ্ধান্ত হল তাহলে চক্রাকারে হাঁটব।

বাম পাশে কেয়া বন আর ডান পাশে সুনীল সমুদ্র রেখে, দ্বীপের পশ্চিম পাশ যেখান থেকে শুরু হয়েছে তার একটু সামনে থেকে দয়াময় পরমেশ্বরের নাম নিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। তবে সৈকতে বিক্ষিপ্ত পয়োবর্জ্য দৃষ্টিকটু ছিল। উঁচু–নিচু নির্বিশেষে সব বাঙালিরই ওই এক স্বভাব; নোংরামিতে সিদ্ধহস্ত। একবার ট্রেনে এক কোট পরিহিত ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ভদ্রলোক তাঁর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করে জানালেন যে সেসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ নাকি নিতান্তই নোংরা। খানিকক্ষণ পর লক্ষ করলাম, সেই ভদ্রলোক বাদাম খাচ্ছেন আর খোশাগুলো ট্রেনের মেঝেতে ছুড়ে ফেলছেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা হুমায়ূন আহমেদের ‘সমুদ্র বিলাস’কে পেছনে ফেললাম। আরেকটু এগোতেই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেখে নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম। দূর থেকে দেখলাম লেখা আছে, ‘সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম দেওয়ার নির্ধারিত স্থান।’ আসলে প্রজনন মৌসুমে মা কচ্ছপগুলো কেয়াবনের পাশে বালিতে গর্ত করে ডিম দেয়, সেই গর্ত বালি দিয়ে ভরাট করে আবার ওরা সমুদ্রে ফিরে যায়। ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো বালি ভেদ করে ওপরে এসে এরাও সমুদ্রে চলে যায়। এরা এই গ্রহের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী, প্রায় দুই শ বছর বাঁচে।

একটু পরে দেখি কেয়াবনের ওপাশে একটি ঝুপরি, পাশে সারিবদ্ধ নারকেলগাছে থোকা থোকা সবুজ কচি ডাব ঝুলছে। বন্ধু কিরণ ডাব খাওয়ার বায়না ধরল। আমরাও বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজি হলাম। বাইরে ঘন কেয়াগাছ দেখে ভাবলাম, ভিতরে হয়তো–বা আরো ঘন ঝোপঝাড় আছে। ভেতরে ঢুকতেই কিন্তু আমাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর হল। ভেতরটা প্রায় ন্যাড়া। খালি জায়গায় প্রবাল পাথরের দেয়াল দিয়ে প্লটের মতো বানানো হয়েছে।

ভিতরে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভূমিদস্যুরা এখানেও তাদের সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।
ডাকাডাকি করেও ঝুপরি আশেপাশে কাউকে পেলাম না। ডাব খাওয়ার খায়েশ অপূর্ণ রেখে চলতে চলতে আমরা ছেঁড়া দ্বীপ অব্দি চলে এলাম। তবে বেলার দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত হলো, আজকে নয়, আগামীকাল ছেঁড়া দ্বীপ বিহারে যাওয়া যাবে। এবার আমরা দ্বীপের পূর্ব পাশ দিয়ে চলতে লাগলাম। কখনো কণ্টকময় প্রবাল পাথর ডিঙ্গিয়ে, কখনো সমুদ্রের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে, কখনোবা বালির ওপর দিয়ে, আবার কখনো কেয়াবনের ধার দিয়ে ক্লান্তিহীনভাবে আমরা চলতে লাগলাম। আরও খানিক্ষণ পর অনতি দূরে সেই জাহাজঘাট দৃষ্টিগোচর হলো। ভাবলাম একটু জিরিয়ে নিই। একটি নারকেলগাছের গোড়ায় অপর একটি গাছের খণ্ডিত গুঁড়ির ওপর আমরা বসে পড়লাম। সমুদ্রের ঠান্ডা সমীরণে আমাদের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেল। এখান থেকে যাত্রা শুরুর গন্তব্য অনতিদূর । পুরো দ্বীপের চারপাশ পায়ে হেঁটে অবশেষে সন্ধ্যায় আমরা হোটেলে ফিরলাম। রাতে বারবিকিউ পার্টির পর ঘুমটা ভালোই হলো।

পরদিন, তখনো ভোর হয়নি, শেষ রাত্রে, পরিষ্কার আকাশে লক্ষ–কোটি তারার মেলা আর বিদঘুটে অন্ধকার থাকতেই একা একা নিরবে ধীরপদে সাগর পাড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি, চারদিক সুনসান, তীরে আমি আর সামনে অবারিত সমুদ্র ছাড়া আশপাশ জনমানব শূন্য। নিঃশব্দে সমুদ্রের দিকে মুখ করে সৈকতের ওপর পানির কাছে দাঁড়ালাম। অন্ধকারে চারপাশটা অনুভব করার জন্য চোখ বন্ধ করলাম। আমার মনের আনন্দ হিল্লোল, সমুদ্রের মৃদু গর্জনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেল। পরমুহূর্তেই গভীর সমুদ্র থেকে বরফশীতল ঢেউ এসে আমার পা ছুঁয়ে গেল; আর একঝটকা ঠান্ডা বাতাস হৃদয়টাকে শীতল করে দিয়ে গেল। আমার আপাদমস্তক বেয়ে নেমে গেল এক অদ্ভুত ঠান্ডা শিহরণ । কতক্ষণ যে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা, আর কখন যে ভোরের আলো ফুটেছে টেরই পাইনি।

সকালের নাশতা সেরে দ্বিচক্রযান নিয়ে আমরা রওনা দিলাম ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে। বাহন রেখে প্রবাল প্রাচীর পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম ছেঁড়া দ্বীপে। এখানে গাছপালা তুলনামূলক কম আর জল মনে হলো আরও স্বচ্ছ । দ্বীপের সর্ব দক্ষিণে স্বচ্ছ পানিতে কাপড় বাঁচিয়ে যতটুকু গভীরে নামা যায়, নামলাম। সূর্যের আলোয় পরিষ্কার জলের কয়েক মিটার গভীরের বস্তুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ভাবতেই শান্তি অনুভব করলাম যে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। ফিরে এসে সাইকেল নিয়ে সেই জাহাজঘাটের কাছে গিয়ে দেখি, জেলেরা সমুদ্রে জাল ফেলেছেন। কৌতুহলী হয়ে অপেক্ষা করছিলাম কী মাছ ওঠে সেটা দেখার জন্য। আমাদের আর তর সইছে না, জেলেদের সঙ্গে আমরাও জাল টানা শুরু করলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, সেই দুজন সুইজারল্যান্ডের লোক, তাঁরাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। চোখে–মুখে উৎফল্ল ভাব দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে দ্বীপ, সমুদ্র আর বাংলাদেশের কৃষ্টি–কালচার তাঁরাও বেশ উপভোগ করছেন।

মাছসমেত জাল তীরে ভেরানো হলো। গুনে গুনে পাঁচ ঝুড়ি ছোট-বড় মাছ। টুনামাছের তাড়া খেয়ে যে মাছ শূন্যে উড়ে চলে, সেই ফ্লাইংফিশ বা উরুক্কু মাছও দেখলাম। তবে এদের মধ্যে একটি কালো রঙের মাছ আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করল। চোখে দেখে মনের সাধ মেটে না, তাই মাছগুলো স্পর্শ করে দেখতে মন চাইল। যেই না কালো রঙের মাছটা ধরতে গেছি, অমনি এক জেলের অপ্রস্তুত ধমকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে সেই জেলে বলল, ‘বাবু, এই মাছের পিঠের ওপরে যে কাঁটা দেখতে পাচ্ছ, এটি যদি তোমার শরীরে একবার ফুটে, তাহলে পুরো চার ঘণ্টা কাতরাতে হবে।’ সম্বিত ফিরে এলে মনে মনে বললাম, ‘ঢের হয়েছে, আর ছুঁয়ে দেখার কাজ নেই, আপনাকে সাধুবাদ।’

দুপুর পর ফিরতি জাহাজে আমরা টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জাহাজে একজনের কাছে শুনলাম, এখানে নাকি অক্সিজেন মাস্ক ভাড়া পাওয়া যায় । যেটি পরে স্কুবা ডাইভিং; মানে সমুদ্রে ডুব দিয়ে নিচের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। মনে মনে সংকল্প করলাম, পরেরবার এলে অবশ্যই স্কুবা ডাইভিং করব।