আহসান মঞ্জিলে বেড়ানো
ঢাকায় থাকেন। একটা দিন ঘুরে আসতে চান। এমন একটা জায়গা, যেখানে ইতিহাস, ঐহিত্য সব কিছুই আছে। আবার প্রকৃতির একটু নিবিড় ছোঁয়া পাওয়া যাবে। ভ্রমণ শেষে একটা জম্পেস খাবারের ও সুযোগ আছে। এমন মানুষদের জন্য বেড়ানোর আদর্শ জায়গা আহসান মঞ্জিল, যা আহসানুল্লাহ রোড, নবাববাড়িতে অবস্থিত। সদরঘাটের কাছে। বুড়িগঙ্গার তীরে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আহসান মঞ্জিল থেকে অনায়াসেই ঘরে ফিরতে পারবেন।
ইতিহাস—
আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব নবাব আবদুল গনি। তিনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ সালে নওয়াব নবাব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ১৯০৬ সালে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।
যা দেখবেন—
আহসান মঞ্জিলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আলোকচিত্র ও চিত্রককর্ম, বিভিন্ন সময়ে ভবনের যে বিবর্তন হয়েছে তার আলোকচিত্র, নবাবদের আনুষ্ঠানিক ভোজন কক্ষ, আলমারি, আয়না, কাচ ও চিনামাটির তৈজসপত্র, বড় কাঠের সিঁড়ি, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল-তলোয়ার, কাঠের বেড়ার মূল নিদর্শন, আহসানউল্লাহ মেমোরিয়াল হাসপাতালের বেশকিছু ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও খাতাপত্র দেখতে পাবেন এক থেকে ছয়টি গ্যালারি ঘুরে। মোট ২৩ গ্যালারি। বাকি গ্যালারিগুলোয় দেখতে পারবেন নবাবদের দরবার হল, ইতালি থেকে দেওয়া একটি অষ্টকোণ টেবিল, অ্যাডওয়ার্ড হাউস থেকে সংগৃহীত জীবজন্তর শিং, বড় লোহার সিন্দুকসহ অন্য সিন্দুক ও কাঠের আলমারি, বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, হিন্দুস্থানি কক্ষ, প্রধান সিঁড়িঘর, লাইব্রেরি কক্ষ ও তাসখেলার ঘর, নবাবের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করার তথ্য, তৈজসপত্র ও ফুলদানি ইত্যাদি।
প্রকৃতির ছোঁয়া—
আহসান মঞ্জিলের চারপাশে অনেকটা খোলা জায়গা আছে। যেখানে নানা রকম গাছপালা, ফুলের বাগান আছে। গাছের নিচে চাদর বিছিয়ে দলবেঁধে গল্প করতে পারবেন। ভেতরে খাবার কিনে খাওয়ার সুযোগ আছে। আহসান মঞ্জিলের কাছেই বুলবুল ললিতাকলা একাডেমি, সময় থাকলে সেখানে যেতে পারেন।
পুরান ঢাকার লোভনীয় খাবার—
আহসান মঞ্জিল দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। দুপুরের খাবারটা পুরান ঢাকাতেই সারতে পারেন। এক্ষে পুরান ঢাকার ট্র্যাডিশনাল রেস্তোরাঁ যেমন আছে। তেমনি হোটেল আল রাজ্জাকের হোটেল আছে, যেখানে বসার আরামদায়ক পরিবেশ পাবেন। সঙ্গে মজার খাবার তো আছেই। রাজ্জাকের কাচ্চি, গ্লাসি, মোরগ পোলাও অত্যন্ত বিখ্যাত। এ ছাড়া খাবার জন্য লালবাগ রয়্যাল, নবাবপুর রোডে হোটেল স্টার, নবাবপুর আরজু হোটেল, নারিন্দার ঝুনু বিরিয়ানি, নাজিরা বাজারের হাজীর বিরিয়ানি, নাজিমুদ্দিন রোডের হোটেল নিরব, নান্না বিরিয়ানি হোটেল বেছে নিতে পারেন। আহসান মঞ্জিল থেকে এসব জায়গায় রিকশা করে যেতে পারবেন।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সিঁড়িতে ছবি—
অনেকগুলো সিড়ি বেয়ে উঠে আহসান মঞ্জিলের গ্যালারিগুলো দেখতে হয়। এই সিঁড়িতে বসে, দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারেন। আবার রেলিং ধরেও ছবি তোলা যায়। গ্যালারি লাগোয়া বারান্দাগুলোতে আলো ছায়া খেলা করে। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেও চমৎকার আসবে। চাইলে নিজে আলোকচিত্রী নিয়ে যেতে পারেন। তবে মোবাইলে তুলতে আলোর প্রতি খেয়াল রাখা চাই। এ জন্য ফিল্টার ব্যবহার যেতে পারে। আহসান মঞ্জিলের কালার পিংক। চাইলে ম্যাচিং করে পিংক কালারের পোশাক পড়তে পারেন।
কীভাবে যাবে—
উত্তরা, মিরপুর, কাজী পাড়া, শেওয়াপাড়া, আগারগাঁওসহ মেট্রোরেল রুটের যেকোনো স্টেশন থেকে উঠে মতিঝিল রেলস্টেশন নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে রিকশা করে আহসান মঞ্জিল পৌঁছা যাবে। ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে যানজটের কারণে তা দূরে রেখে রিকশা করে আসা লাগতে পারে। এ ছাড়া ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে গুলিস্তান এসে সেখান থেকেও রিকসা করে আহসান মঞ্জিল যেতে পারবেন।
সময়সূচি—
প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা। শনি থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ থেকে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট খোলা। শুক্রবার বেলা ৩টা ৩০ থেকে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অন্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো সরু, যখন তখন যানজট লেগেই থাকে। এ যানজটের কস্টটুকুন সহ্য করে নিতে হবে।
যা বর্জনীয়—
টিপস, পানির বোতল, চানাচুরের প্যাকেট ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। ময়লা ফেলার স্থানে ফেলুন। গ্যালারির যেখানে ছবি তোলা নিষেধ, সেখানে ছবি তুলবেন না। বাগানের ফুল ছিঁড়বেন না।