ডালিয়ায় নৌবিহার শেষে তিনবিঘা করিডরে
ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ। লালমনিরহাট-নীলফামারী জেলার সীমান্ত পয়েন্টে সেচ প্রকল্প। এটি দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমানা থেকে এক কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর এই ব্যারাজ। এটি তৈরি হয়েছিল মূলত নদীভিত্তিক সেচের জন্য। নদীভিত্তিক সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সফল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল এটি। কিন্তু ভারতের গজলডোবায় ব্যারাজ নির্মাণ করায় এবং বাংলাদেশে পানি না দেওয়ায় এ ব্যারাজের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি।
ব্যারাজটিতে ৫২টি গেট রয়েছে। এ ব্যারাজে প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টি হয়েছে সবুজ অরণ্যের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর পাখিদের কলরবে ভরা মনোমুগ্ধকর কোলাহলমুক্ত অপূর্ব পরিবেশ। এ এলাকায় পর্যটনব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলেও রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে শতরূপা কন্যা কুমারী শৈবালিনী তিস্তার পাশে সারা বছরই ছুটে আসেন দূরদূরান্তের ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য উঁচু কন্ট্রোল টাওয়ার, নদীর ডান তীর বাঁধের নির্মিত পাড়, সবুজের হাতছানি, শিহরণ–জাগানিয়া বাতাস আর নৈসর্গিক দৃশ্য। সবকিছু মিলিয়ে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতায় সুসজ্জিত ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ।
নৌবিহারে কী যে মজা
ভারতের গজলডোবা থেকে ধেয়ে আসা প্রবল তিস্তার ধারা মিশেছে এখানে। গ্রীষ্মকালে ধু ধু চর হলেও বর্ষাকালে নান্দনিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ফলে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ায় নৌবিহার চমৎকার ও মজাদার। তিস্তার অনন্য বৈরালি মাছও এখানে মেলে। টাটকা মাছ কিনতে পারবেন নৌবিহারের সময়। ভারত–বাংলাদেশের সীমান্তে তিস্তার ক্যানাল দিয়ে রংপুর এলে আনন্দ আরও বেড়ে যাবে। ক্যানাল বরাবর সুন্দর-সবুজ দৃশ্য দেখতে দেখতে মেইন রোড পেয়ে যাবেন। মনে হবে, ‘ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে...’। গ্রামীণ নির্মল পরিবেশ। ক্যানাল দিয়ে নৌবিহারেও দারুণ মজা হবে!
নৌকা ভাড়া
এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ফলে দরদাম করে নৌকায় উঠুন। নামমাত্র (সময়ের হিসাবে) খরচ হবে।
ঐতিহাসিক ‘তিনবিঘা করিডর’
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল ‘দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা’। এ ছিটমহলের সঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের জন্য একটি ‘প্যাসেজ ডোর’–এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যেটার পরিমাণ তিন বিঘার মতো। তিস্তা ব্যারাজ থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরের তিনবিঘা করিডর ও আঙ্গরপোতা জিরো পয়েন্টে যাওয়া যায়। ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখতে পারেন।
পার্শ্ববর্তী এলাকা
দেখতে পারেন বুড়িমারী স্থলবন্দর। পাটগ্রাম থেকে ১০-১২ কিলোমিটারের পথ বুড়িমারী। এখান থেকে ভারতের শিলিগুড়ি খুব কাছে। আবছা শিলিগুড়ি শহর দেখতে পারেন সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে। কিছু কেনাকাটা বা ফল-কফির স্বাদ নিতে পারবেন এপার থেকে, রেলিং এর ফাঁক গলিয়ে।
থাকা ও খাওয়া
তিস্তা ব্যারাজে ‘অবসর’ নান্দনিক ডাকবাংলো। অনুমতি সাপেক্ষে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। পাটগ্রামে হোটেল পাবেন। লালমনিরহাটেও আধুনিক হোটেল আছে। তা ছাড়া মধ্যম মানের অনেক আবাসিক হোটেল পাবেন পাটগ্রাম ও লালমনিরহাটে। ৪০০ টাকা থেকে রুম ভাড়া শুরু। আর খাবার খরচ সহনীয়। তবে থাকা ও খাওয়ার জন্য পাশের রংপুর বিভাগীয় শহরই ভালো। আশপাশের হোটেলে তিস্তার বৈরালি মাছের স্বাদ নিতে পারেন।
যাতায়াত
ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে বুড়িমারীগামী এসি/নন এসি অনেক গাড়ি পাবেন। হাতীবান্ধায় নেমে ১০ কিলোমিটার দূরের ডালিয়ায় যেতে পারেন অনায়াসে। ট্রেনে এলে ব্রেক জার্নি হবে। লালমনিরহাট/সৈয়দপুর/রংপুরের ভিন্ন (তিন রুটের) ট্রেন আছে কমলাপুর থেকে। এরপর একাধিক ব্রেক জার্নি করে ডালিয়ায় আসতে হবে। আগে বুড়িমারী গেলে বন্দর পর্যন্ত বাসেই যেতে পারেন। তিনবিঘায় আগে গেলে পাটগ্রামে নেমে অটোতে যেতে হবে। এরপর পাটগ্রাম বা বুড়িমারী থেকে বাসে হাতীবান্ধায় নেমে ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজে যেতে হবে অটোতে।