জাতীয় উদ্যানে জাককান‌ইবি সাংবাদিক ফোরামের এক দিন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের ‘ফিচার হান্টিং ট্যুর ও নবীন সাংবাদিক বরণ-২০২৫’ ইভেন্টের অংশ হিসেবে সংগঠনটি ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অন্যতম বনভূমি ভাওয়ালের জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করে। চিত্তবিনোদন জন্য কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একটুখানি ছুটি নিয়ে প্রকৃতির সংস্পর্শে যাওয়ার এ পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয় সংগঠনটির। শীতাচ্ছন্ন ও হালকা কুয়াশার বুক চিরে প্রায় ২০ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিশাল থেকে যাত্রা শুরু হয় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বনভূমিসংক্রান্ত এলাকা হওয়ায় যতই গাজীপুরের কাছাকাছি যাওয়া যায়, শীতের প্রকোপ যেন ততই বাড়তে থাকে। যাত্রাপথেই সেরে ফেলা হয় সকালের নাশতা যার স্পনসর ছিল ক্যাম্পাসের প্রথম গেটসংলগ্ন সুস্বাদু ফাস্টফুড আইটেম শপ ‘ইয়াম্মি প্যারাডাইস’ ও ‘ত্রিভুজ লাইব্রেরি’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে কুয়াশার বুক চিরে সাংবাদিক ফোরামের এ ট্যুর যেন ছিল অসাধারণ তৃপ্তিময় এক স্বপ্নযাত্রার মতো। যেখানে বাসের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক সদস্যের মন ধারণ করে ছিল কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম; তা হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সকাল ১০টা নাগাদ নির্দিষ্ট গন্তব্য গাজীপুরের বিখ্যাত ভাওয়ালের জাতীয় উদ্যানে পৌঁছাই আমরা। স্পটের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সবাই বেরিয়ে পড়ে কাছ থেকে প্রকৃতির স্বাদ নেওয়ার জন্য। জঙ্গলের পথ ধরে ছুটে চলতে চলতে মনে হয়, পুরো জঙ্গলই যেন আমাদের এবং আমরাই তার একমাত্র রাজা।

ভাওয়ালের জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বনভূমি। ৫ হাজার ২২ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ বনভূমিতে রয়েছে ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং হরেক রকম পশুপাখি। উদ্ভিদগুলোর মধ্যে শাল ও গজারি বৃক্ষ উল্লেখযোগ্য। একসময় এই বনভূমিতে বাঘ, মায়া হরিণ, ময়ূর, হাতি ইত্যাদি প্রাণী দেখা যেত। কালের বিবর্তনে এসব প্রাণী এখন নেই বললেই চলে। এখন এই বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলো হলো, বিভিন্ন ধরনের পাখি, সাপ, বানর ইত্যাদি।

বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখি পরিদর্শন শেষে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজনের ২য় পর্ব ‘নবীন সাংবাদিকবরণ-২০২৫’। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাককান‌ইবি সাংবাদিক ফোরামের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নতুন সদস্যদের উদ্দেশে কিছু উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মো. শাকিল বাবু বলেন, ‘অন্যের সমালোচনাকে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। সমালোচনাকে যত তাড়াতাড়ি হজম করা শিখতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি ভালো সাংবাদিক হতে পারবে।’ একই সঙ্গে আজকের নতুন সদস্যরা তাঁদের ভালো কাজের সুনাম অর্জনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রোকন বাপ্পি। নতুন সদস্যদের উদ্দেশে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান শেষে তাঁদের নানাবিধ উপহারসামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেয় জাককান‌ইবি সাংবাদিক ফোরাম। এরপর দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমরা রওনা দিই গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্দেশে।

চৌরাস্তার একটি স্বনামধন্য রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়েই বেরিয়ে পড়া হয় আয়োজনের ৩য় অংশ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উদ্দেশে। দুপুরের খাবারে ছিল পোলাও, রোস্ট, ঝাল ডিম/কাবাবসহ, লেবু-শসা-সালাদ ও পানীয়। পাশাপাশি চতুর্থ তলার ওপর একটি সুন্দর অন্দরসজ্জায় তাদের আতিথেয়তারও কমতি ছিল না কোনো অংশে।

ডুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর ডুয়েট সাংবাদিক সমিতি একরাশ উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে তাদের ক্যাম্পাসে স্বাগত জানায় সাংবাদিক ফোরামকে। তারপর তাদের সঙ্গে ঘুরে দেখা হয় তাদের পুরো ক্যাম্পাস। এ সময় ডুয়েটসাসের সভাপতি ও অন্য সদস্যদের মত বিনিময় হয় জাককানইবি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সব সাংবাদিকদের। ভাব বিনিময় ও কথোপকথন হয় উভয় ক্যাম্পাসের সুবিধা, অসুবিধা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েও। অবশেষে ডুয়েট সাংবাদিক সমিতির হাতে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ কিছু উপহারসামগ্রী তুলে দেন সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ ও আড়ম্বরের সঙ্গে সাংবাদিক ফোরামের উক্ত দিনটি শেষ হয়। নতুন–পুরোনো সাংবাদিকদের নিয়ে কাটানো দিনটি খুবই উপভোগ্য ছিল। এ রকম একটা প্রাণবন্ত আয়োজনের জন্য সাংবাদিক ফোরামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংগঠনটি নতুন সদস্যরা।

*লেখক: রোকন বাপ্পি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ