সোনাইছড়ি ট্রেইল ভ্রমণ
দুর্গম পাহাড় পার হয়ে, পিচ্চিল পাহাড় বেয়ে উঠে ট্রেইল জয় করার আনন্দ কতটা প্রশান্তির, তা সোনাইছড়ি ট্রেইলে ভ্রমণ না করলে জানা যায় না। সোনাইছড়ি একটি ট্রেইলে সবকিছু উপভোগ করা যায়। দীর্ঘ ২৮ কিলোমিটার লম্বা এই ট্রেইলে বড় বড় পাথরের সঙ্গে রয়েছে ১০০-১৫০ বাদুইজ্জাকুম। আর এই বাদুইজ্জাকুমের দুই পাশের ১০০-১৫০ ফুট উঁচু খাড়া পাথুরে দেয়ালের অন্ধকারে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো শব্দ ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করে।
পাহাড়-পর্বত, ঝরনা, বৈচিত্রময় প্রকৃতি—কী নেই এখানে! সীতাকুণ্ডের গহিন পাহাড়ে কী পরিমাণ রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে, তা সেখানে না গেলে অজানাই রয়ে যাবে। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়ি।
চট্টগ্রামের বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন সোনাইছড়ি ট্রেইল অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। পিচ্ছিল ঝিরিপথ, খাড়া পাহাড় ও বাদুইজ্জাখুম পার হয়ে যাওয়ার সময় যে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়, সেই অভিজ্ঞতা সারা জীবনের এক অনন্য সঞ্চয়।
তবে সোনাইছড়ি ট্রেইলে দলগত ভ্রমণ করা উচিত।
এই ট্রেইলে নানা রকমের গাছের পাতা, পশুপাখি, সঙ্গে স্বচ্ছ পানি, আর এই স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে জোঁক। সে জন্য যারা জোঁক ভয় পান, তাঁরা একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে প্রকৃতির রূপের এতটা সৌন্দর্য রয়েছে, তা আগে যারা এই ট্রেইল ভ্রমণ করেনি, কেউ জানবে না।
সেখানে গিয়ে হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বৈচিত্র্য সৌন্দর্যে। তখন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে পারবেন যে পৃথিবী এত সুন্দর কেন!
আসলেই পৃথিবী অনেক সুন্দর। যারা উপভোগ করতে জানে, তারাই একমাত্র বুঝতে পারে সৌন্দর্য কীভাবে ফুটে ওঠে।
তবে একটা কথা না বললেই নয়, সীতাকুণ্ডের ট্রেইলগুলোর নিরাপত্তাবিষয়ক বেশ দুর্বলতা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের পর্যটনের অফার সৌন্দর্য রয়েছে সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাইয়ে। কিন্তু এই জায়গাগুলো আজও কোনো নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য দুঃসংবাদ হতে পারে।
এ ট্রেইল পেরোতে গিয়ে হাজারো ভাবনা জড়ো হতে থাকবে! কেননা, এতটা গহিন জঙ্গলের মধ্যে ভ্রমণ করা, চারদিকে নিস্তব্ধ, শীতল পরিবেশে, ঝিরঝির শব্দ শুধু। তখন মনে হতে পারে, হঠাৎ যদি কেউ সামনে এসে দাঁড়ায়, কী করব আমি? তবে আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে এগোতে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ!
সোনাইছড়ি ট্রেইল ভ্রমণের ইতিকথা
সময়টা ছিল ৯ জুন ২০২৩, সোনাইছড়ির আবেগ, অনুভূতি এবং রহস্যের খোঁজে আমরা ছয় বন্ধুর ভ্রমণ পরিকল্পনা সোনাইছড়ি ট্রেইল। আমরা সব বন্ধু ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমরা সকাল ৮টায় ফেনীর মহিপাল থেকে বাসে করে মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট বাজারের উদ্দেশে রওনা দিই। অবশেষে সকাল ৯টায় আমরা গন্তব্য স্থানে গিয়ে পৌঁছায়।
এরপর আমরা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে চলে যাই একদম ট্রেইলের কাছাকাছি স্থানে।
অটোরিকশা থেকে নেমে বাকিটা পথ হেঁটে শুরু করলাম ট্রেইল ভ্রমণের প্রথম ধাপ। প্রতিটি ধাপ পার হওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, পথগুলো খুবই দুর্গম। একই সঙ্গে রয়েছে জোঁকের ভয় সবার মনের মধ্যে। কারণ, এখানে শুধু গাছের পাতায় নয়, পানিতেও জোঁক রয়েছে। আর পাহাড়ের বেশ কিছু পথ রয়েছে, যা কিনা দড়ির সাহায্যে উঠতে হয়। চারপাশে খুবই সংকীর্ণ খাড়া জায়গা। একটু পা পিচ্ছিল করলেই হতে পারে মৃত্যুও। তাই শতভাগ সতর্কতা এবং চ্যালেঞ্জিং মনে করে পার হতে হয়। অবশেষে সব পথ পার হয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত স্থান সোনাইছড়ি ঝরনাতে।
তবে ভ্রমণের সময় আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, ভ্রমণের প্রতিটি স্থান দেশের সম্পদ এবং জনসাধারণের উপভোগের জায়গা। তাই কোনোমতে, আমরা যেন অন্যদের সৌন্দর্য উপভোগ নষ্ট না করি।
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে মিরসরাই হাদি ফকিরহাট বাজারে নেমে যেতে হবে। এ ছাড়া ট্রেনে চড়ে সীতাকুণ্ড নেমে হাদি ফকিরহাট আসা যায়। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদের গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বড়-পাথর যেতে হবে। সেখান থেকেই ট্রেইল শুরু। হাদি ফকিরহাট গ্রাম শেষে পাহাড়ের শুরু থেকে সোনাইছড়ি ট্রেইলের শেষ পর্যন্ত সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা।
কোথায় খাবেন
সোনাইছড়ি ট্রেইল ভ্রমণ শেষে হাদি ফকিরহাট বাজারে এলে কয়েকটা রেস্তোরাঁ দেখা যায়। এগুলোতেও খাওয়া যায়। এ ছাড়া কেউ চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারেও চলে যেতে পারেন উন্নত মানের খাবার খাওয়ার জন্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ
**নাগরিক সংবাদে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন [email protected]–এ