ঘুরে এলাম কাদিগড় জাতীয় উদ্যান

কোনো বৈকালিক চা আড্ডায় কথা উঠল কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়! সবাই রাজি হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত হলো দূরে নয়, এবার কাছাকাছি কোথাও। সারোয়ার ভাই বললেন, ‘কাদিগড় জাতীয় উদ্যান’। যেই ভাবা সেই কাজ, সবাই একবাক্যে রাজি।

গত বছরের ১৩ অক্টোবর, শুক্রবার। ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে ঘুম ভাঙল। ঘুম ভালো হয়নি। ভ্রমণের আগের রাতে অন্য অনেকের মতো ভালো ঘুম হলো না। পুরোনো অভ্যাস। বিছানা ছেড়ে আড়মোড়া ভাঙতে গোসল সেরে নিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে পরিবেশ দেখলাম। অসাধারণ আবহ। ভ্রমণে এমন আবহাওয়া আরামদায়ক না শীত না গরম।

সারোয়ার ভাই ফোন দিয়ে বললেন বের হতে। আমি ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে বের হওয়ার অপেক্ষা করছি।

সবাই ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে মিলিত হবে।

আমি আর সারোয়ার ভাই পৌঁছাই সোয়া ৭টায়। মিনিট দুয়েক পর রনি ভাই, মামুন ভাই ও মশিউর ভাই আসে।

ভোরের ট্রেনে জামালপুর থেকে আসে শামীম ভাই ও সিফাত ভাই। তারা এখন ময়মনসিংহ স্টেশনে। আমরা চারজন চা শেষ করতেই তারা এসে পড়ল। শেষ মুহূর্তে এসে যোগ হামিদুল ও জয়।

টিকিট কেনা শেষে একটা আসন ফাঁকা নিয়ে সবাই বাসে উঠলাম। বাস ছেড়ে দিল ঢাকার উদ্দেশে। ত্রিশাল থেকে বাশার ভাই ফাঁকা আসনটি পূরণ করে। ঢাকা থেকে সৌরভ ভাই আমাদের সঙ্গে মিলিত হতে রওনা দিয়েছেন। আমরা ঢাকা–ময়মনসিংহ রোডের ভালুকায় সিডস্টোরে নেমে পড়ি। আমরা ১১ জন মিলিত হই সকালের নাশতার টেবিলে।

ঘড়িতে তখন সকাল ১০টায় স্থানীয় অটোরিকশাযোগে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে রওনা দিলাম। ৩০ মিনিট পর আমরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে উপস্থিত হলাম।

প্রবেশপথে প্রথম চোখ পড়ল বন বিভাগের বিলবোর্ড। বিলবোর্ডে উদ্যানের সাধারণ তথ্যাবলি দেওয়া। বন বিভাগের তথ্যমতে, কাদিগড় জাতীয় উদ্যান ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগড় ও পালগাঁও মৌজার ৯৫০ একক ভূমির ওপর বিস্তৃত। বনভূমির বৃক্ষ সম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধাদি উন্নয়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও সংশোধন ১৯৭৪–এর অধীনে বন অধিদপ্তর উদ্যোগে ২০১০ সালে কাদিগড় উদ্যানকে জাতীয় স্বীকৃতি প্রদান করে। উদ্যানে রয়েছে ৬০ প্রজাতির বৃক্ষসহ ২০ প্রজাতির প্রাণী।

বনে প্রবেশের শুরুতেই শব্দ করে স্বাগত জানাল বানর। আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ এবং পাখপাখালির কলকাকলি। প্রাকৃতিক লীলাভূমির এই উদ্যানে শাল, মনমোহিনী গজারি বাগান, সেগুনবাগান বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি ও ফলদ বৃক্ষের দেখা পাওয়া যায় এখানে। প্রাণিকুলের মধ্যে হনুমান, বানর, শিয়াল, শজারু, মেছো বিড়াল, বনবিড়াল, বাগডাশ ও বেজি দেখতে পাওয়া যায়।

এ ছাড়া আছে কয়েক প্রজাতির সাপ, ব্যাঙ, তক্ষক ও গুইসাপ। হরেক রকমের পাখির কিচিরমিচির আর প্রজাপতির রঙিন পাখা মেলে ওড়াউড়ি সত্যিই বিমোহিত করে।
মনমোহিনী গজারি, সেগুনবাগানসহ সবুজের এই সমারোহতে খুব ভালো সময় কাটাল। প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে এ সবুজের সমারোহ আমাদের প্রাণ বয়ে আনে সজীবতা ও চাঞ্চল্য।

বনের ভেতর গিয়ে আমরা গ্রুপ ফটোসেশন করলাম। তারপর ছড়িয়ে পড়লাম বনের আনাচকানাচে। আমাদের কেউ ছবি তুলছে, কেউ টাওয়ারে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখছে, আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সেলফিসহ রাখছে ভিডিও।

উদ্যানটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার, দুটি ইকোকটেজ, দুটি গোলঘর, পিকনিক স্পট। বসার জন্য আছে অসংখ্য বেঞ্চ।

বনের ভেতর ঘুরছি অথচ গানের আসর হবে না। হতো পারে না। শুরু হলো সম্মিলিত গান গাওয়া। সৌরভ ভাই ও বাশার ভাইয়ের গায়কির তালে আমরা সবাই সহশিল্পী। ‘আমার যমুনার জল দেখতে ভালো’, ‘আমার হাড় কালা করলি রে’, ‘মেয়ে তুমি’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’ ইত্যাদি গানে আসর সুরে-ছন্দে মনে আনন্দে মোহিত। বনের মধ্যে অসাধারণ আবহ বিরাজ করছে।

সূর্য তখন মাথার ওপর এবার ফিরতে হবে। ঘোরাঘুরি করে সবাই এখন ক্লান্ত। পেটও জানান দিচ্ছে ক্ষুধা।

দুপুরের খাবার খেতে সবাই রওনা দিলাম সারোয়ার ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে। খাবারের আইটেমে ছিল বিভিন্ন রকম ভাজি, ভাজা মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও ডাল, সঙ্গে পোলাওয়ের পাশাপাশি আছে সাদা ভাত। সবাই পেটপুরে খেয়েদেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল।

এবার ফেরার পালা। স্মৃতির পাতায় যুক্ত হয় সুন্দর একটি দিন। একটি আনন্দময় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

সূর্য অস্তের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা ময়মনসিংহ শহরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। চোখের পলকে শেষ হয়ে গেল দিনটি....

  • লেখক: মোহাম্মদ খালিদ হাসান সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা

  • নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]