ভাসানচর পরিদর্শন করলেন নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান
ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে মৎস্য চাষ ও রোহিঙ্গা যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছেন জাপানভিত্তিক দাতা সংস্থা নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়া ইয়োহেই। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান এবং উভয় সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্র্যাকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল শনিবার (৬ এপ্রিল) প্রতিনিধিরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা জানতে ও ব্র্যাকের কার্যক্রম ঘুরে দেখতে এক দিনের সফরে ভাসানচরে যান। সেখানে ব্র্যাক ভাসানচরে কর্মরত সংস্থাটির মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) প্রধান মো. আবু বকর সিদ্দিক ও ব্র্যাকের অন্য কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। এই সময় সরকারের পক্ষ থেকে স্বাগত জানান ক্যাম্প-ইনচার্জ রফিকুল হক, অ্যাসিট্যান্ট ক্যাম্প-ইনচার্জ মাকছুদুর রহমান, নৌবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার এম আনোয়ারুল কবির ও পুলিশের কর্মকর্তারা।
প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়া ইয়োহেই, সিনিয়র প্রজেক্ট ডিরেক্টর আরিকাওয়া তাকাশি, সিনিয়র অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ফটোগ্রাফার সুজুকি নাতসুকো, সেক্রেটারি টু চেয়ারম্যান নাকাইয়াসু শোতা, সিনিয়র প্রজেক্ট কো–অর্ডিনেটর কুরিবাইয়াশি ফ্রাঞ্জ কেন ও এক্সিকিউটিভ ইন্টারপ্রেটর মাসিদা কিমিউ।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান, সংস্থাটির মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম, গ্লোবাল রিসোর্স মবিলাইজেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপস পরিচালক মাফরুজা খান, ব্র্যাক ভাসানচরের কর্মসূচিপ্রধান মো. আবু বকর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক অমিত দাশ ও ভাসানচরে কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তারা।
তাঁরা ব্র্যাক ভাসানচরের ৪০ নম্বর ক্লাস্টারে অবস্থিত ওয়াশ সেক্টরের বিশুদ্ধ পানির পরীক্ষাগার, ৫৭ নম্বর ক্লাস্টারে অবস্থিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, সার্কুলার লেকের পাড়ে বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ প্রক্রিয়া, ৭৬ নম্বর ক্লাস্টারে ব্র্যাকের জীবিকায়নে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ৬৮ নম্বর ক্লাস্টারে অবস্থিত জীবিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক কর্মসূচির কৃষি, পোলট্রি, গবাদিপশু পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। এই সময় তাঁরা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নেন। তাঁরা রোহিঙ্গা কৃষক ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এটি একটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, ভাসানচরে বিস্তীর্ণ জায়গায় পরিবেশ সুরক্ষাসহ মৎস্য ও সবজি চাষের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়া ইয়োহেই বলেন, এখানে (ভাসানচরে) বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি, মাছ চাষে সম্ভাবনা ও সুযোগ অনেক। তাই জেলেদের মাছ ধরার ক্ষেত্রে অনেক দক্ষ হতে হবে। বিশেষত মাছ ধরার ক্ষেত্রে নৌকা ব্যবহার, মাছ চাষে দক্ষতা আনা এবং মাছ ক্রয়-বিক্রয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিপ্পন ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক একসঙ্গে কাজ করবে। আর এভাবে জেলেদের দক্ষতা তৈরি হলে তাঁরা মিয়ানমারে ফিরে গেলেও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি ব্র্যাকের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ওয়াশ, শিশু সুরক্ষা, জীবিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করেন।
সরকারের সহায়তায় এবং ইউনিসেফ ও ব্র্যাক ইউএসের আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় ব্র্যাক ভাসানচরে ৩৮টি ক্লাস্টারে ১৮টি স্কুলের মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। একই সঙ্গে ওয়াশ সেক্টরের আওতায় ৩৭টি ক্লাস্টারে প্রায় ২১ হাজার ১১৪ জন রোহিঙ্গার মধ্যে সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া জীবিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন (এফএসএল) সেক্টরের আওতায় প্রায় ৭৯৮টি পরিবারকে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন এবং ৪ হাজার ২০০ পরিবারকে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সহযোগিতা দিচ্ছে।
এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৫০ জনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাসিক আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়ন ঘটেছে। এ ছাড়া ভাসানচরে নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, শজনেসহ বিভিন্ন ধরনের ২৯ হাজার ৫০০টি বৃক্ষরোপণ করেছে ব্র্যাক, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভাসানচর বাংলাদেশের হাতিয়া উপজেলার অধীনে ৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দ্বীপ। এটি চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত।