শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে তিনি তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। এর আগে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৯ সালে দুই দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। 
শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়। 
 
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সব গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। 

 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছয় বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। 

 

১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করেন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। 

 

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই বছরের ১৬ জুলাই কারাবন্দী হন শেখ হাসিনা। মুক্তি পান ১১ জুন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে। এ ছাড়া ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দুবার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় তিন মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। 

 

 ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তাঁকে হত্যার উদ্দেশে বড় ধরনের হামলা হয়। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান। 

 

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ (Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া তিনি ব্রিটেনের গ্লোবাল ডাইভার্সিটি পুরস্কার এবং দুবার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাঁকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। 

 

জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এ ছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য International Telecommunication Union (ITU) শেখ হাসিনাকে ICTs in Sustainable Development Award-2015 প্রদান করে। 
 
শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘সাদা কালো, সবুজ মাঠ পেরিয়ে’, ‘Miles to Go, The Quest for Vision-2021’ প্রভৃতি। 

 

শেখ হাসিনার প্রযুক্তি, রান্না, সংগীত এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তাঁর স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। 

শেখ হাসিনার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টাও। আর মেয়ে সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার নাতি-নাতনির সংখ্যা সাত